E-Paper

শিক্ষক-ঘাটতি ও উদ্বৃত্তের অঙ্ক নিয়েই নালিশ

শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ, কোন স্কুলে শিক্ষক বেশি আর কোন স্কুলেই বা কম, শিক্ষা দফতর বা এসএসসি তার কোনও তথ্য প্রকাশ করছে না।

আর্যভট্ট খান , কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৪৭
school.

শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ, কোন স্কুলে শিক্ষক বেশি আর কোন স্কুলেই বা কম, শিক্ষা দফতর বা এসএসসি তার কোনও তথ্য প্রকাশ করছে না। প্রতীকী ছবি।

কোনও কোনও স্কুলে ছাত্রছাত্রী প্রচুর, কিন্তু আনুপাতিক হারে শিক্ষক নেই। আবার বহু স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা অজস্র, কিন্তু সেই তুলনায় পড়ুয়া কম। উদ্বৃত্ত ও ঘাটতির ফেরে পড়ে শিক্ষা মার খাচ্ছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় স্কুলগুলিতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত বজায় রাখতে বদলি শুরু করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। সরকারি নির্দেশ মেনে বদলির সুপারিশও পাঠাচ্ছে এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু বদলি যে-ভাবে করা হচ্ছে, তাতে বিস্তর অস্বচ্ছতা-অসঙ্গতি রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষকদের একাংশ। শিক্ষক উদ্বৃত্ত ও ঘাটতির হিসেব নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ, কোন স্কুলে শিক্ষক বেশি আর কোন স্কুলেই বা কম, শিক্ষা দফতর বা এসএসসি তার কোনও তথ্য প্রকাশ করছে না। কোন পদ্ধতিতে উদ্বৃত্ত শিক্ষক কিংবা শিক্ষক-ঘাটতির হিসেব কষা হচ্ছে, সেই ব্যাপারেও লুকোছাপা চলছে। শিক্ষা দফতরের কর্তারা অবশ্য এই ধরনের অভিযোগ পত্রপাঠ অস্বীকার করছেন। কিন্তু এই সব প্রশ্নের সদুত্তরও দিতে পারছেন না তাঁরা।

শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুযায়ী বদলি হচ্ছে। হিসেব করেই উদ্বৃত্ত শিক্ষক বার করা হয়েছে।” তবে কোন পদ্ধতিতে হিসেব কষা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা ওই কর্তার কাছে মেলেনি।শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে-হিসেব জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে পাঠিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই বদলি হচ্ছে। তবে সেই হিসেবের সূত্র শিক্ষা দফতর বাতলে দিয়েছে, না, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেদের খেয়ালখুশিতে হিসেব দাখিল করেছেন, শিক্ষা দফতরের ওই সূত্রে তারও সদুত্তর মেলেনি।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, সর্বশিক্ষা মিশনে ৪০ জন পড়ুয়া-পিছু এক জন শিক্ষক, এই অনুপাতের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে ভাষা, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান গোত্রে কত জন শিক্ষক প্রয়োজন, তারও হিসেব আছে। বহু ক্ষেত্রে সেই হিসেব মিলছে না। অভিযোগ, মানা হচ্ছে না সরকারের নিজেদের বদলি নীতিও।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কলকাতা শহর বা লাগোয়া এলাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে বদলি করা হচ্ছে। শিক্ষকেরা বলছেন, প্রত্যন্ত এলাকার অনেক স্কুলে শিক্ষক-ঘাটতি আছে, এ কথা ঠিক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট জেলায় কি কোনও স্কুলেই উদ্বৃত্ত শিক্ষক নেই? থেকে থাকলে সেখান থেকেই তো ঘাটতির স্কুলে শিক্ষক পাঠানো যেত।

অভিযোগ, কোন কোন স্কুলে শিক্ষকের কত ঘাটতি আছে, সেই তথ্য-তালিকাও আড়ালে রেখেছে শিক্ষা দফতর এবং এসএসসি। এর পিছনে কী উদ্দেশ্য কাজ করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। শিক্ষা দফতরের কর্তারা অবশ্য শিক্ষক-ঘাটতির বিভিন্ন স্কুলের তথ্য সামনে আনতে রাজি নন। তাঁদের যুক্তি, এতে ছাত্রছাত্রীদের কোনও লাভ হবে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ওই তথ্য-তালিকা প্রকাশ করলে ক্ষতিও হবে না। তা সত্ত্বেও লুকোছাপা কেন? সদুত্তর নেই।

শিক্ষক শিবিরের অভিযোগ, উৎসশ্রী পোর্টাল মারফত নির্বিচারে বদলি করে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলিকে প্রায় শিক্ষকশূন্য করে ফেলেছে সরকার। শূন্য শিক্ষকপদে নতুন নিয়োগও করতে পারেনি। উপরন্তু সর্বশেষ নিয়োগে দুর্নীতির কালিঝুলি উৎকট হয়ে দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়েই রাজ্যে স্কুলশিক্ষার এমন দুর্দশা। অভিযোগ, সেই দোষ ঢাকতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে যেনতেন প্রকারে শিক্ষক বদলি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বদলিতে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবিতে দীর্ঘ কাল ধরে চলা আন্দোলনে ঘা মারার অভিসন্ধি কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠছে শিক্ষা শিবিরে।

শিক্ষা দফতরের কর্তাদের দাবি, জেলার স্কুলগুলির কোথাও উদ্বৃত্ত শিক্ষক নেই। তাই সেখান থেকে গ্রামীণ এলাকায় বদলি করে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তবে উৎসশ্রী নিয়ে যে-অভিযোগ উঠছে, সেই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন শিক্ষাকর্তারা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Schools West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy