Advertisement
০২ মে ২০২৪

বিশেষ কোর্টে বিচার সাংসদ, বিধায়কদের

হাইকোর্ট সূত্রের খবর, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বিচারপতি রঞ্জন গগৈ দেশের সব হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সাংসদ-বিধায়কদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে বিশেষ আদালত বসিয়ে তার নিষ্পত্তি করতে হবে। তার ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার (জুডিশিয়াল) শুভাশিস দাশগুপ্ত ৬ মার্চ রাজ্যের সব জেলা জজকে জানান, সংশ্লিষ্ট জেলায় সাংসদ ও বিধায়কের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে বা ফৌজদারি মামলা থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে তার যাবতীয় নথি পাঠিয়ে দিতে হবে বারাসতের বিশেষ আদালতে। রাজ্যের কয়েক জন জেলা জজ বুধবার জানান, সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোন বিধায়ক বা কোন সাংসদের বিরুদ্ধে কত ফৌজদারি মামলা রয়েছে, তার পরিসংখ্যান সংগ্রহ এবং নথিপত্র গোছগাছ করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০২:৫০
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অস্থায়ী বিশেষ আদালত গড়া হয়েছে বারাসতে। সেখানেই রাজ্যের সাংসদ ও বিধায়কদের বিরুদ্ধে আনা
যাবতীয় ফৌজদারি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। ওই বিশেষ আদালতে ইতিমধ্যে এক জন বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে।

হাইকোর্ট সূত্রের খবর, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বিচারপতি রঞ্জন গগৈ দেশের সব হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সাংসদ-বিধায়কদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে বিশেষ আদালত বসিয়ে তার নিষ্পত্তি করতে হবে। তার ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার (জুডিশিয়াল) শুভাশিস দাশগুপ্ত ৬ মার্চ রাজ্যের সব জেলা জজকে জানান, সংশ্লিষ্ট জেলায় সাংসদ ও বিধায়কের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে বা ফৌজদারি মামলা থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে তার যাবতীয় নথি পাঠিয়ে দিতে হবে বারাসতের বিশেষ আদালতে। রাজ্যের কয়েক জন জেলা জজ বুধবার জানান, সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোন বিধায়ক বা কোন সাংসদের বিরুদ্ধে কত ফৌজদারি মামলা রয়েছে, তার পরিসংখ্যান সংগ্রহ এবং নথিপত্র গোছগাছ করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

সাংসদ-বিধায়কদের বিরুদ্ধে আনা ফৌজদারি মামলার ফয়সালা করতে বিশেষ আদালত গড়া হচ্ছে কেন? হাইকোর্টের অনেক আইনজীবী জানান, অনেক সময়েই সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, পথ অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, বেআইনি ভাবে জড়ো হওয়া, পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাথর ছোড়ার মতো ফৌজদারি মামলায় নাম জড়ায় শাসক ও বিরোধী শিবিরের সাংসদ বা বিধায়কদের। খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণের অভিযোগও ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। নিম্ন আদালতে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা চলে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় বছরের পর বছর সেই সব মামলার নিষ্পত্তি হয় না। দোষী সাব্যস্ত বা বেকসুর খালাস, কোনওটাই না-হওয়ায় সাংসদ, বিধায়কেরা হয় পদে থেকে যান, অথবা নতুন নির্বাচনে জিতে পুনরায় সাংবিধানিক পদ অধিকার করেন।

কোথায় কত মামলা

• উত্তরপ্রদেশ ২৪৮

• তামিলনাড়ু ১৭৮

• বিহার ১৪৪

• পশ্চিমবঙ্গ ১৩৯

• অন্ধ্রপ্রদেশ ১৩২

• কেরল ১১৪

দেশের ১৭৬৫ জন সাংসদ-বিধায়কের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ৩০৪৫টি

(সূত্র: সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের হলফনামা)

আইনজীবীরা জানান, ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী কোনও বিধায়ক বা সাংসদ ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে পদে থাকতে পারেন না। তাঁকে সেই পদে ইস্তফা দিতে হয়। নির্বাচন কমিশনও দোষী বিধায়ক বা সাংসদদের পদে বহাল রাখতে রাজি নয়। দীর্ঘদিন মামলা চলার সুযোগ নিয়ে অভিযুক্ত বিধায়ক-সাংসদেরা যাতে পদ আঁকড়ে থাকতে না-পারেন বা নতুন নির্বাচনে আবার পদ দখল করতে না-পারেন, সেই জন্যই বিশেষ আদালত গড়ে এই ধরনের মামলার সুরাহা করতে সব হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ২০১৪ সালে বিহারের এক প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, দোষী সাব্যস্ত হলে সাংসদ বা বিধায়ককে জনপ্রতিনিধির পদ ছাড়তে হবে।

সর্বোচ্চ আদালতে এই বিষয়ে জনস্বার্থ মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে কোনও রাজনীতিকই যাতে কোনও রাজনৈতিক দলের কোনও পদে থাকতে না-পারেন, তেমনই নির্দেশ দিক সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গেই আবেদন জানানো হয়েছে, কোনও সাংসদ বা বিধায়ক ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ওই পদে সংশ্লিষ্ট দলের কে পরবর্তী প্রার্থী হবেন, দোষী জনপ্রতিনিধির যাতে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও অধিকার না-থাকে, শীর্ষ আদালত সেটাও নিশ্চিত করুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Barasat Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE