Advertisement
০৫ মে ২০২৪

এ বার শিক্ষককে খুনের হুমকি ছাত্রনেতার

সামসি কলেজের দুই শিক্ষিকাকে ‘রেপ করিয়ে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতা। এ বার মালদহেরই হরিশ্চন্দ্রপুর কলেজে পরীক্ষায় নকল করতে বাধা দেওয়ায় এক শিক্ষককে ক্লাসঘর থেকে বাইরে তুলে নিয়ে গিয়ে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল ছাত্র পরিষদের এক নেতার বিরুদ্ধে। পরীক্ষা চলাকালীনই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার ঘরে ঢুকে ভাঙচুরও করা হয়েছে।

অভিযুক্ত নাজিমুল হক।— নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্ত নাজিমুল হক।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

সামসি কলেজের দুই শিক্ষিকাকে ‘রেপ করিয়ে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতা। এ বার মালদহেরই হরিশ্চন্দ্রপুর কলেজে পরীক্ষায় নকল করতে বাধা দেওয়ায় এক শিক্ষককে ক্লাসঘর থেকে বাইরে তুলে নিয়ে গিয়ে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল ছাত্র পরিষদের এক নেতার বিরুদ্ধে। পরীক্ষা চলাকালীনই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার ঘরে ঢুকে ভাঙচুরও করা হয়েছে।

হরিশ্চন্দ্রপুর কলেজে আসন পড়েছে চাঁচল কলেজের পরীক্ষার্থীদের। চাঁচল কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ ফিরদৌস ইসলামও পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার মধ্যেই ফিরদৌস মোবাইল ব্যবহার করছেন দেখে পরিদর্শক বাধা দেন। তা নিয়ে বচসা বেধে যায়। পাশের ঘরেই পরীক্ষা দিচ্ছিলেন ছাত্র পরিষদের আর এক নেতা নাজিমুল হক। ওই ঘরে পরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন দর্শনের আংশিক সময়ের শিক্ষক মহম্মদ সেলিম। নাজিমুলকে বারবার নিষেধ করার পরেও তিনি কথা না শোনায় তাঁর উত্তরপত্র মহম্মদ সেলিম কেড়ে নেন বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। তা নিয়েও বচসা শুরু হয়। সে সময়ই নাজিমুল ওই শিক্ষককে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বার করে নিয়ে গিয়ে খুনের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। শিক্ষক ভয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেই ফিরদৌস ও নাজিমুলের নেতৃত্বে কলেজের দরজা, জানালা, ফুলের টব, টেবিল ফ্যান ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর চলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার ঘরেও।

হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ গিয়ে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফিরদৌস তারপরে পরীক্ষাও দেয়। কিন্তু ঘটনার জেরে দ্বিতীয়ার্ধের পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ মিনিট পরে শুরু করতে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে। পুলিশ জানিয়েছে, ভাঙচুরের অভিযোগে দুই বহিরাগতকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

একের পর এক কলেজে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় বিব্রত গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। উপাচার্য গোপাল মিশ্র বলেন, ‘‘পরীক্ষায় কেউ নকল করবে আর পরিদর্শক বাধা দিলে তাকে হুমকি দেওয়া হবে—এ সব বরদাস্ত করা হবে না। কলেজ থেকে রিপোর্ট চেয়েছি। রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তবে কলেজের প্রশাসক সমরকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘পরীক্ষা চলতে থাকায় অশান্তি এড়াতে এখনই এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে বুধবারই বিশ্ববিদ্যালকে ঘটনার রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, যারা ওই ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। পরীক্ষাপর্ব মিটলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘পরীক্ষাকেন্দ্রে কোনও ছাত্র এমন আচরণ করতে পারে, ভাবতেই পারছি না!’’ ফিরদৌসের অবশ্য দাবি, ‘‘বাড়ির জরুরি ফোন ছিল বলে শিক্ষককে বলেই তা ধরি। কিন্তু আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়।’’ তাঁর বক্তব্য, কলেজে তাঁরা কোনও ভাঙচুর করেননি। তিনি বলেন, ‘‘কলেজের কর্মীরাই ভাঙচুর করে আমাদের ফাঁসাতে চাইছেন।’’ নাজিমুল হকের দাবি, ‘‘খাতা কেড়ে নেওয়ার পরে আমাকে বলা হয়েছিল, পাঁচ মিনিট পরে তা ফেরত দেওয়া হবে। তা না হওয়ায় খাতা ফেরত চেয়েছি মাত্র। আমি কাউকে কোনও হুমকি দিইনি।’’

তবে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আলমের বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। তবে কী পরিস্থিতিতে এমন ঘটল, তা নিয়ে ওই ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

student police murder mobile
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE