Advertisement
১৬ অক্টোবর ২০২৪
Arsenic

পাতের ভাতেও আর্সেনিক বিষ, বলছে গবেষণা

অন্নগতপ্রাণ বাঙালির হৃৎকম্প বাড়িয়ে অতি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, নিত্যদিন দুপুরে ও রাতে যে-ভাতখাওয়া হচ্ছে, তাতেও থাবা বসিয়েছে আর্সেনিক।

An image of arsenic

গবেষণায় বলা হয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা গাইঘাটায় পানীয় জলে আর্সেনিকের পরিমাণ ও প্রকোপ মারাত্মক। প্রতীকী চিত্র।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৩ ০৭:২৯
Share: Save:

প্রাকৃতিক গরল আর্সেনিক জলের মতো তরল এবং ধানের মতো কঠিন পদার্থ ও পথে সমান স্বচ্ছন্দ। পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণ নিয়ে দীর্ঘ কালের চর্চার সঙ্গে সঙ্গে সেচের কাজে নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের ফলে ধানে-খড়েও যে আর্সেনিক ঢুকছে, বিজ্ঞানীরা সেই বিষয়ে আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন। অন্নগতপ্রাণ বাঙালির হৃৎকম্প বাড়িয়ে অতি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, নিত্যদিন দুপুরে ও রাতে যে-ভাতখাওয়া হচ্ছে, তাতেও থাবা বসিয়েছে আর্সেনিক। পাতের ভাতে এই বিপদের অশনি-সঙ্কেত দিয়ে ইতিমধ্যে গবেষণানির্ভর প্রবন্ধ বেরিয়েছে ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ’ নামেএকটি পত্রিকায়।

ওই গবেষণাপত্রের মূল লেখিকা যাদবপুরের ‘স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়ের’ দুই গবেষক মধুরিমা জোয়ারদার ও পায়েল মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে আছেন যাদবপুরের ওই বিভাগের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী-সহ কয়েক জন গবেষক, কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জেনোমিক্সের যজ্ঞশীলা দাস এবং অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ ক্যাসলের দুই গবেষকও।

মূলত রাজ্যের তিনটি এলাকা, উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা শহরাঞ্চল এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থেকে চাল ও ভাতের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন ওই গবেষকেরা। তার ভিত্তিতেই তাঁরা এই বিপদের বার্তা দিয়েছেন। ওই গবেষণাপত্রে যেমন বিপদবার্তারসঙ্গে সঙ্গে বিপদ এড়ানোর সম্ভাব্য পথও বাতলে দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে যে আরও নিবিড় গবেষণার প্রয়োজন আছে, তা-ও জানিয়েছেন গবেষকেরা।

গবেষণায় বলা হয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা গাইঘাটায় পানীয় জলে আর্সেনিকের পরিমাণ ও প্রকোপ মারাত্মক। কলকাতার একাংশে ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক আছে, তবে এই শহরের পানীয় জল মোটামুটি নিরাপদ। পিংলা তুলনায় নিরাপদ। তাই এই তিনটিজায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, আতপ চালের তুলনায় আর্সেনিকের উপস্থিতি বেশি সেদ্ধ চালে। বাঙালির প্রাত্যহিক আহারে সেদ্ধ চালের ব্যবহারই বেশি। তুলনামূলক বিচারে দেখা গিয়েছে, ভাতে অনেক ক্ষেত্রেই সহনমাত্রার থেকে বেশি থাকছে আর্সেনিক।

বাঙালির পাতে ভাত না-হলে চলবে না। তা হলে এই বিপদ থেকে কী ভাবে বাঁচা যেতে পারে,সেই প্রশ্ন উঠছে। অধ্যাপক রায়চৌধুরী বলছেন, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যদি এক ভাগ চালের সঙ্গে তিন ভাগ আর্সেনিকমুক্ত জল দিয়ে ভাত রাঁধা যায়, তা হলেচালের তুলনায় ভাতে আর্সেনিকের মাত্রা কমে যায় অনেকটাই। এর পাশাপাশি চালে উপস্থিত বিভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস বা আণবিক পুষ্টি-উপাদান নিয়ে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে-চালে সেলিয়ামের বেশি পরিমাণে উপস্থিত, আর্সেনিক তাতে বিষদাঁত বসাতে পারে না। কারণ, আর্সেনিকের বিরোধী হিসেবে কাজ করে সেলিয়াম। তাই চালে আর্সেনিকের অনপ্রবেশ রোধে চাষের সময় মাটিতে আলাদা ভাবে সেলিয়াম ছড়ানো যেতে পারে।

এ ছাড়াও, বেশি জোর দিতে হবে বর্ষাকালীন চাষে। শুষ্ক মরসুমে নদী, নালা, খাল, বিলে জল না-থাকায় চাষের কাজ পুরোটাই হয় ভূগর্ভের জলের সাহায্যে। চাষেভূগর্ভের জলের ব্যবহার যত কম হবে, আর্সেনিকের বিপদ কমবে তার আনুপাতিক হারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Arsenic Arsenic water Arsenic waste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE