আর জি কর-কাণ্ডের পরে, সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের নিরাপত্তায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে গুচ্ছ ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। সে দফতরেরই এক মহিলা বিএমওএইচ (ব্লক মেডিক্যাল হেল্থ অফিসার) এ বার তৃণমূলের এক চিকিৎসক-বিধায়কের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে হেনস্থা, অপমান, জোর করে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা, দুর্ব্যবহার, সরকারি কাজে হস্তক্ষেপের মতো অভিযোগ লিখিত ভাবে জানিয়ে নিরাপত্তা চেয়েছেন। তাঁর আক্ষেপ, সেপ্টেম্বরে অভিযোগ হলেও স্বাস্থ্যকর্তারা এখনও নীরব!
হাওড়ার আমতা-১ ব্লকের আমতা গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ পায়েল বিশ্বাসের অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক, হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজির বিরুদ্ধে। তবে নির্মল সব অভিযোগ উড়িয়ে বিএমওএইচের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগেছেন।
গত মার্চে পায়েল আমতায় বদলি হন। তাঁর অভিযোগ, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নির্মল তাঁর কাজে হস্তক্ষেপ করছেন, হেনস্থা করছেন, অপমান করছেন, হুমকি দিচ্ছেন, ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রতিবাদ করায় তাঁকে সরকারি বৈঠকে যোগ দিতে দিচ্ছেন না, ‘ফিল্ড ভিজ়িট’, রিভিউ-বৈঠক, প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যেতে বাধা দিচ্ছেন। নির্মলের জন্য হাসপাতালের পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত। সর্বসমক্ষে নির্মল তাঁকে বদলির হুমকি দিচ্ছেন, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কটাক্ষ করছেন।
পায়েলের দাবি, “রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের হাসপাতালের ওয়ার্ডে রাতে ঘোরার কথা নয়। কিন্তু নির্মল রাত ৮টার পরে হামেশা হাসপাতালে এসে আমাকে কোয়ার্টার থেকে ডেকে পাঠাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে ঘুরতে বলছেন। নিজের কেবিনে রাতে ডাকছেন, আপত্তিজনক কথা বলছেন, গা ঘেঁষে বসার চেষ্টা করছেন। রাতে ফোনে বিরক্ত করছেন। প্রতিবাদ করায় হেনস্থা করছেন। কাজ করতে দিচ্ছেন না।” তাঁর দাবি, “উনি ওঁর পরিচিতদের হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে পরীক্ষা, ওষুধের সুবিধে নিচ্ছেন। অথচ, সে সব রোগীরা হাসপাতালে ভর্তিই হননি। নির্মলের জন্য এই গ্রামীণ হাসপাতাল কার্যত পক্ষাঘাতে ভুগছে এবং আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) স্বপন সোরেন এবং হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিশলয় দত্তের কাছে গত ১৬ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ জমা দেন পায়েল। তদন্তের অনুরোধ জানান। নিজের এবং সন্তানের নিরাপত্তা চান। যেখানে কর্মক্ষেত্রে শারীরিক, মানসিক বা যৌন হেনস্থার অভিযোগে তৎক্ষণাৎ হস্তক্ষেপ আইনত বাধ্যতামূলক, সেখানে দু’মাসের বেশি পার হলেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হল না কেন?
স্বাস্থ্য-অধিকর্তা ফোন ধরেননি, মোবাইল-বার্তারও উত্তর দেননি। কিশলয় বলেন, “বিষয়টি জানি। তবে আমার দফতরে লিখিত চিঠি আসেনি। ডিএইচএস-এর কাছে গিয়েছে। উনি কর্তৃপক্ষ। উনি না বললে, কোনও ব্যবস্থা নিতে পারি না।”
নির্মলের দাবি, “সমস্ত অভিযোগ ভুয়ো। ওই বিএমওএইচ ‘সিঙ্গল মাদার’। সব জায়গা থেকে সহানুভূতি আদায় করে দিনের পর দিন কামাই করেন। হাসপাতালের রোগীরা পরিষেবা পাচ্ছেন না, বিনা পয়সার ওষুধ পাচ্ছেন না। তাই আমাকে রাতবিরেতে ওই হাসপাতালে যেতে হয়। ‘প্যাশনেট’ বলে রাতে সেখানকার ওয়ার্ডে ঘুরি।” তাঁর সংযোজন: “ওই বিএমওএইচের ফাঁকিবাজি নিয়ে স্বাস্থ্য সচিবকে জানিয়েছি। তাই আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।” পায়েল অবশ্য বলেন, “লড়াই করব। অন্যায়ের সঙ্গে আপস করব না।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)