E-Paper

ক্যাবে দিল্লি থেকে কলকাতা, ভাড়া না দিয়েই চম্পট !

সফরের শুরুতে চেয়ে নেওয়া আধার কার্ডের প্রতিলিপিতে লেখা ঠিকানায় গিয়েও টাকা আদায় করতে পারেননি চালক। শেষে বিধাননগর কমিশনারেট এবং একটি অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের সক্রিয় সহযোগিতায় অভিযুক্তের খোঁজ মেলে।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:০৭
কলকাতা ফেরার ক্যাব ভাড়া করেছিলেন রাজারহাটের এক যুবক।

কলকাতা ফেরার ক্যাব ভাড়া করেছিলেন রাজারহাটের এক যুবক। —প্রতীকী চিত্র।

একটি বেসরকারি ক্যাব সংস্থার অ্যাপ ব্যবহার করে নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা ফেরার ক্যাব ভাড়া করেছিলেন রাজারহাটের এক যুবক। দু’দিন পরে কলকাতায় পৌঁছে বাড়ি ফেরার পথে ভিআইপি রোড এলাকায় কৈখালির কাছে আচমকা গাড়ি থেকে নেমে যান তিনি। এর পরে এক পরিচিতের বাইকে উঠে, গাড়ির ভাড়া না মিটিয়েই চম্পট দেন। এর জেরে বিপাকে পড়েন ভিন্‌ রাজ্যের ওই ক্যাবচালক। কারণ, ভাড়া বাবদ বকেয়া প্রায় ২১ হাজার টাকা! ফোনের সূত্রে যোগাযোগ করেও ওই যুবকের খোঁজ মেলেনি। এমনকি, সফরের শুরুতে চেয়ে নেওয়া আধার কার্ডের প্রতিলিপিতে লেখা ঠিকানায় গিয়েও টাকা আদায় করতে পারেননি চালক। শেষে বিধাননগর কমিশনারেট এবং একটি অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের সক্রিয় সহযোগিতায় অভিযুক্তের খোঁজ মেলে। পুলিশের মধ্যস্থতায় ভাড়া মিটিয়ে ছাড়া পান রাজারহাটের কাজিয়ালপাড়ার বাসিন্দা, শুভম চক্রবর্তী নামে ওই যুবক।

ঘটনার সূত্রপাত গত ১০ এপ্রিল, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ। একটি ক্যাব সংস্থার অ্যাপের মাধ্যমে দিল্লির কাশ্মীরি গেটের কাছে কলকাতার ওই যাত্রীর হদিস পান চালক উদয়ভান সিংহ। রাত ৯টা নাগাদ শুভমকে তুলে রওনা হন উদয়ভান। সফরের শুরুতে অগ্রিম হিসাবে ১০ হাজার টাকা দেন শুভম। জানান, বাড়িতে তাঁর দাদু মারা গিয়েছেন। তাই ফেরার অন্য উপায় না পেয়ে তাঁকে ক্যাব ভাড়া করতে হয়েছে। পথে বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া সারেন তাঁরা। নিজেকে সফ্‌টঅয়্যার সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত বলার পাশাপাশি, বাবাকে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি বলেও পরিচয় দেন শুভম। বাড়ি গিয়ে বকেয়া টাকা মেটাবেন বলেও আশ্বাস দেন তিনি। ১২ এপ্রিল কলকাতায় পৌঁছে সকাল ১০টা নাগাদ কৈখালির কাছে একটি দোকানের সামনে চালককে থামতে বলেন অভিযুক্ত। গাড়ি থামা মাত্র ওই যুবক ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়েন। রাস্তা পেরিয়ে কাছাকাছি একটি গলির মুখে আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা এক যুবকের বাইকে উঠে চম্পট দেন।

এর পরেই সম্বিত ফেরে উদয়ভানের। তিনি বিমানবন্দর এলাকায় এক ক্যাবচালককে ঘটনার কথা বলেন। হাসান নামে অপর ওই ক্যাবচালক উদয়ভানকে বিমানবন্দর এলাকায় ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের অফিসে নিয়ে যান। তাদের সাহায্যে রাজারহাটে অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবাকে সব জানালে তাঁরা কিছু ক্ষণ পরে আসতে বলেন। এর পরে তাঁরা তালা বন্ধ করে বাড়ি ছাড়েন বলে অভিযোগ।

ওই সংগঠনের সহযোগিতায় এর পরে রাজারহাট থানায় অভিযোগ হয়। বিধাননগর কমিশনারেটের সাইবার সেলের সাহায্যে অভিযুক্তের খোঁজ শুরু হলে তাঁর ফোন বন্ধ বলে দেখা যায়। ওই নম্বরের মালিক শুভমের এক বন্ধু। তাঁর মাধ্যমেই শুভমের সন্ধান পায় পুলিশ। এর পরেই ভাড়া মেটাতে রাজি হন অভিযুক্ত। শেষে পুলিশের উপস্থিতিতে সোমবার রাতে বকেয়া টাকা মেটান তিনি।

পুলিশ এর পরে ওই যুবকের বিরুদ্ধে আর ব্যবস্থা নেয়নি। তবে উদয়ভান বলেন, ‘‘ওই যুবক বিপদে পড়েছেন ভেবে সবরকম সহযোগিতা করেছি। এমন অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি। তবে ক্যাবচালক সংগঠন ও পুলিশের যে সাহায্য পেয়েছি, তা অভাবনীয়।’’ ওই ক্যাবচালক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভিন্‌ রাজ্যের চালকের কথা শুনে তাঁকে সবরকম সাহায্যের চেষ্টা করেছি। অভিযুক্তের খোঁজ না পেলে রাজ্যের মানুষ
সম্পর্কে খারাপ ধারণা নিয়ে ফিরতেন ওই চালক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CAB Fraud

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy