Advertisement
E-Paper

যাত্রী মুকুল, বিমান বদল অভিষেকের

সকালের বিমানে দিল্লি যাওয়ার আগে অভ্যাসমতো বাড়ি থেকে খোঁজ নিয়েছিলেন। তখনই জানতে পারলেন একই বিমানে পাড়ি দিচ্ছেন মুকুল রায়। শুধু তা-ই নয়, আসনও একই সারিতে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ওই বিমানে দিল্লিযাত্রা কোনও মতেই নয়। তাতে সংসদে দলের ধর্নায় যোগ দেওয়া না হয়, না-ই হবে। ফলে দীনেশ ত্রিবেদী, আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দার, সি এম জাটুয়ারা মুকুলের সঙ্গে এক বিমানে সওয়ার হলেও রাতের উড়ান ধরলেন তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৮
সংসদ ভবনে মুকুল রায়। সোমবার। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা

সংসদ ভবনে মুকুল রায়। সোমবার। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা

সকালের বিমানে দিল্লি যাওয়ার আগে অভ্যাসমতো বাড়ি থেকে খোঁজ নিয়েছিলেন। তখনই জানতে পারলেন একই বিমানে পাড়ি দিচ্ছেন মুকুল রায়। শুধু তা-ই নয়, আসনও একই সারিতে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ওই বিমানে দিল্লিযাত্রা কোনও মতেই নয়। তাতে সংসদে দলের ধর্নায় যোগ দেওয়া না হয়, না-ই হবে। ফলে দীনেশ ত্রিবেদী, আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দার, সি এম জাটুয়ারা মুকুলের সঙ্গে এক বিমানে সওয়ার হলেও রাতের উড়ান ধরলেন তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি এখন মুকুল-শিবিরের ঠারেঠোরে আক্রমণের মূল লক্ষ্য।

আসলে সব পদ কেড়ে নেওয়ার পর থেকে মুকুলকে এড়িয়েই চলতে চায় দল। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কলকাতায় বলেছেন, “মুকুল দলে থাকলে প্রাসঙ্গিক। কিন্তু দলে থেকে দলের কথা না-বললে তিনি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন।” দলে যে মুকুল অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছেন, তা রাজ্যসভায় তাঁর আসন বদল থেকেই স্পষ্ট। আজ থেকে মুকুল চলে গিয়েছেন তৃতীয় সারিতে। তৃণমূলের অন্য সাংসদরাও মুকুলের সংশ্রব এড়িয়ে চলছেন।

মুকুল নিজে কিন্তু দলে থেকেই দলকে বিব্রত করার কৌশলে অনড়। রাজ্য বাজেটের দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলকে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছিলেন মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু। আজ আবার বিধানসভায় এসে দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘরে অনেক ক্ষণ বসে গল্পগুজবও করেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেন দলের অন্য বিধায়কদের সঙ্গেও। পরে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “শুভ্রাংশু আমাদের দলের বিধায়ক। আর উত্তর ২৪ পরগনার বিধায়কেরা আমার ঘরে বসেই কথাবার্তা বলেন।” কিন্তু বাবার পাশে দাঁড়িয়ে খোদ মমতাকে আক্রমণ করা পরে শুভ্রাংশুর কেন এই আচমকা আচরণ বদল, ভেবে কুল পাচ্ছেন না তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে মুকুল-শিবিরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ আরও দানা বাঁধছে তাঁদের মনে।

শুভ্রাংশু দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে মেলামেশা করলেও মুকুল কিন্তু দৃশ্যতই এড়িয়ে যাচ্ছেন দলনেত্রীকে। ৮ মার্চ, রবিবার রাতে দিল্লি আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রে খবর, ১০ মার্চ, মঙ্গলবার পর্যন্ত দিল্লিতে থাকবেন মমতা। আজ ঘনিষ্ঠ মহলে মুকুল জানিয়েছেন, ৮ এবং ৯ মার্চ তিনি কলকাতায় থাকবেন। ৯ মার্চ রাতে বা ১০ দুপুরে দিল্লি ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। সংসদ চলাকালীন টানা দিল্লিতে থাকলেও ঠিক মমতার সফরের সময় তাঁর অনুপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে, মুকুলও এড়াতে চাইছেন দলনেত্রীকে।

আজ সংসদে দলের ধর্নাও এড়িয়ে গিয়েছেন মুকুল। মমতা-ঘনিষ্ঠ শিবির বলছে, এ ভাবে দলে থাকাটাই অর্থহীন। মুকুল শুধু দলের বোঝাই বাড়াচ্ছেন। তিনি মানে মানে বিদায় নিলেই ভাল। মুকুল অবশ্য নিজে থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার কোনও ইঙ্গিত দিচ্ছেন না। তাঁর কাছের লোকেদের বক্তব্য, দলে থেকে দলকে বিরক্ত করাই আপাতত তাঁর লক্ষ্য। ধর্নায় মুকুলের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলছেন, “যাঁরা এসেছেন, তাঁদের কথা জানতে চান। কে কেন আসেননি, তা বলতে পারব না।”

তৃণমূলের ধর্নায় আজ ছিল ঝুড়ির পালা! কালো শাল, কালো ছাতা, হাঁড়ি বা লাল ডায়েরির পর এ বার সংসদ দেখল কালো ঝুড়ি! তাও একটা-দু’টো নয়। সব মিলিয়ে ২২টি! দলনেত্রীর নির্দেশে গতকাল রাতেই লেক মার্কেট থেকে সেগুলি বিমানে চড়িয়ে আনা হয়েছে। কাকলি ঘোষ দস্তিদারের বাড়িতে রাত জেগে তাতে লাগানো হয়েছে কালো রঙের পোঁচ। সেই ঝুড়ি মাথায় দিয়েই কেন্দ্রীয় বাজেটে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নামমাত্র বরাদ্দের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বসেন তৃণমূল সাংসদরা। ধর্নার ভিড়ে যাঁদের সচরাচর দেখা যায়, তাঁরা সকলেই ছিলেন। কাকলি, মুনমুন সেন, সৌগত রায়দের ভিড়ে বাকিদের কিছুটা অবাক করে এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দীনেশ ত্রিবেদীকেও! অন্যান্যদের মতো ঝুড়ি মাথায় স্লোগান না-দিলেও দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

ধর্নায় না বসলেও এ দিন মুকুল অবশ্য সংসদ কামাই করেননি। সাড়ে এগারোটা নাগাদ তিনি সংসদে প্রবেশ করেন। তত ক্ষণে ঝুড়ি-বিক্ষোভ শেষ করে লোকসভায় সারদা নিয়ে বিজেপির সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তৃণমূল সাংসদরা।

দিন কয়েক বাদেই রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ন’মাসে এই প্রথম দু’পক্ষের সরকারি বৈঠক। তার আগে, আজ তপসিয়ায় একটি শব সংরক্ষণাগারের উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দেয়েছেন, কেন্দ্র-বিরোধিতার সুর নরম করবেন না তিনি। বাজেটে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পশ্চিমবঙ্গের জন্য যে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের কথা বলেছেন, সে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “কোনও প্যাকেজ-ট্যাকেজ কিছু হয়নি। এটা বাজে কথা। আমরা পেতাম ৬১.৮২ শতাংশ। এখন পাব ৬২ শতাংশ।” প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগেই মমতার এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক দানা বেধেছে।

তৃণমূল যেমন কেন্দ্র-বিরোধী অবস্থান নরম না করার পথে হাঁটছে, তেমনই বিজেপিও সারদা-বিতর্ক খুঁচিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, দুর্নীতি প্রশ্নে তৃণমূলকে ছাড়বে না তারা। আজ দুপুরে নাগরিকত্ব বিল পেশ করার সময় আপত্তি তোলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। পরে বিলটি নিয়ে আলোচনায় বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় জায়সবাল বলেন, “সৌগত রায় সংসদকে আইন সংক্রান্ত যুক্তি দিচ্ছেন। অথচ তাঁর রাজ্যের শাসক দলের সাংসদ, বিধায়কেরা দুর্নীতি প্রশ্নে ফতার হচ্ছেন! এমনকী খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গীও গ্রেফতার হয়েছেন!” সৌগত পাল্টা জবাবে বলেন, “আমি বিলটি পেশ করা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলাম। বিলটির বিষয়বস্তু নিয়ে নয়।” সেই সঙ্গেই দুর্নীতির অভিযোগে কর্নাটকে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার গ্রেফতারির প্রসঙ্গ তুলে সৌগতর কটাক্ষ, “শাসক দল ভুলে যাচ্ছে, কী ভাবে তাদের দলের এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন!”

লোকসভার এই বাগ্যুুদ্ধের রেশ ছড়িয়েছে বাইরেও। আজ লোকসভার ঠিক বাইরের লবিতে তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন রাজ্যের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, নালিশ পৌঁছেছে স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের দরবারে। কল্যাণবাবুর অভিযোগ, বিনা প্ররোচনায় বাবুল অশালীন ভাষা প্রয়োগ করে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কল্যাণ বলেন, “আমি কেন বাবুলের বিরুদ্ধে সংসদে ও তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে সরব হয়েছি, তা নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দেন তিনি! ” বাবুলের পাল্টা যুক্তি, “কল্যাণ প্রায়শই লোকসভায় বসে বিজেপির মহিলা সাংসদদের উদ্দেশে বাংলায় গালমন্দ করেন। ঠোঁটের নাড়াচাড়া দেখেই বোঝা যায়, উনি কী বলছেন। আজ তাই কল্যাণদার সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমি বলি, দাদা এটা কী করছেন? এ কথা শুনেই কল্যাণদা উল্টে আমায় গালাগালি দেন। আমার গালাগালি দেওয়ার অতীত ইতিহাস নেই। কিন্তু কল্যাণদার ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে!”

mukul roy tmc turmoil abhisekh bandyopadhyay mamata bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy