Advertisement
০৬ মে ২০২৪
TMC Candidate in Panchayat Election

মঞ্চের পিছনে গোপন ভোটের বাক্স, বিশেষ ফোন নম্বর, পঞ্চায়েতে অভিষেকের প্রার্থী সংগ্রহ অভিযান শুরু

পঞ্চায়েত নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে গোপন ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন সাধারণ মানুষ। ফোন করেও জানাতে পারবেন। দলের প্রার্থী বাছাইয়ে এমনই অভিনব উদ্যোগ নিলেন অভিষেক।

photo of abhishek banerjee.

দিনহাটার সভায় বিজেপিকে নিশানা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দিনহাটা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৩০
Share: Save:

পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাকে তৃণমূলের প্রার্থী চান, মতামত দিতে পারবেন সাধারণ মানুষ। ‘মানুষের পঞ্চায়েত’ গড়তে জনতা-জনার্দনকে দলের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় জুড়ে নিচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ৬০ দিনের ‘তৃণমূলে নব জোয়ার’ কর্মসূচি। প্রথম দিন কোচবিহারের দিনহাটার মঞ্চ থেকে দলের প্রার্থী সংগ্রহ অভিযানের সূচনা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বললেন, ‘‘মানুষের পঞ্চায়েত গড়ব। নিজের অধিকার বুঝে নিতে, নিজের প্রার্থীকে বেছে নিতে হবে সাধারণ মানুষকে। ভারতবর্ষে এমনটা আগে কখনও হয়নি।’’

‘মা-মাটি-মানুষের’ দল বলে বরাবরই নিজেদের প্রচার করে তৃণমূল। তবে রাজ্যের সাম্প্রতিক নানা ঘটনা তুলে ধরে তৃণমূল সরকার মানুষের পক্ষে নেই বলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। এই আবহে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ে সাধারণ মানুষকে জড়িয়ে নিতে চাওয়া, অভিষেক তথা তৃণমূলের মোক্ষম চাল বলেই মনে করছেন শাসক শিবিরের একাংশ। পাশাপাশি, প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের অন্দরে অসন্তোষ সামলাতেও এই প্রক্রিয়া কাজে দেবে বলে ধারণা তৃণমূলের একাংশের।

দিনহাটায় অভিষেকের সভার জন্য যে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, তার পিছনেই রাখা ছিল একটি ব্যালট বাক্স। অভিষেক তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে আপনার বুথে কে প্রার্থী হবেন, তা তৃণমূল ঠিক করবে না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করবে না। আপনারা যাকে প্রার্থী বাছবেন, তাঁকেই তৃণমূল সর্বশক্তি দিয়ে জিতিয়ে আনবে।’’ এর পরই ব্যালট বাক্সের প্রসঙ্গ টানেন তৃণমূলের সেনাপতি। বলেন, ‘‘মঞ্চের পিছনে একটা গোপন ব্যালট বাক্স রাখা রয়েছে। একটা করে ব্যালট পেপার দেওয়া হবে। ওই ব্যালট পেপারে আপনার পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে জানান। সবটাই গোপনে হবে।’’ প্রার্থী বাছাই করতে গোপন ব্যালটে ভোট দেওয়ার সময় ভোটদাতার নাম, পরিচয় লিখতে হবে না। শুধু কাকে প্রার্থী করবেন, তাঁর নাম লিখলেই হবে। অর্থাৎ, চূড়ান্ত গোপনীয়তার মধ্যেই যে গোটা প্রক্রিয়াটি চলবে, সেই আশ্বাসও দিয়েছেন অভিষেক। শুধু দিনহাটা নয়, রাজ্যের সব পঞ্চায়েতে এ ভাবেই তৃণমূলের প্রার্থী বাছাই হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

যাঁরা ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন না, তাঁরা ফোন করেও নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর নাম জানাতে পারবেন। এ কথাও জানিয়েছেন অভিষেক। দিনহাটার সভামঞ্চ থেকে এ জন্য একটি ফোন নম্বর জানান তিনি। বলেন, ‘‘৭৮৮৭৭৭৮৮৭৭ নম্বরে সুবিধা মতো ফোন করেও জানাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের নাম, বুথের নম্বর, আসন নম্বর জানাবেন।’’ এ হেন প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় সকলকে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন অভিষেক। বলেছেন, ‘‘নির্ভয়ে, নির্দ্বিধায় ভোট দিন। আপনারা প্রার্থী হিসাবে যাঁকে বেছে নেবেন, তাঁকেই আমরা প্রার্থী করে জেতাব।’’ এমনটা ভারতবর্ষে অতীতে আগে হয়নি বলেও দাবি করেছেন অভিষেক।

পঞ্চায়েতে কেমন প্রার্থী বাছাই করা উচিত মানুষের? এ নিয়েও নিজের মতামত জানিয়েছেন অভিষেক। বলেন, ‘‘এমন এক জনকে প্রার্থী করুন, যিনি আগামী ৫ বছর দলমত নির্বিশেষে পরিষেবা দেবেন। মানুষের পঞ্চায়েত গড়বেন। প্রগতিশীল পঞ্চায়েত গড়বেন।’’ পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি প্রধান, উপপ্রধান কে হবেন, তা মানুষই ঠিক করবে বলে দিনহাটার মাটিতে দাঁড়িয়ে ‘কথা দিয়েছেন’ অভিষেক। বিজেপিকেও কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের ‘সেকেন্ড-ইন কমান্ড’। বলেছেন, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, পৃথক রাজ্য গড়ার দাবি তুলে, ধর্মীয় ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট হয়েছিল। এ বার পঞ্চায়েতের কথা ভেবে ভোট দিন। মোদীর ৫৬ ইঞ্চির ছাতি নয়, আপনাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভোট দিতে হবে। ১০০ দিনের টাকা যাতে দিল্লি থেকে ছিনিয়ে আনা যায় সে জন্যই পঞ্চায়েতে ভোট দিতে হবে।’’

‘তৃণমূলে নব জোয়ার’ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জনসংযোগ যাত্রা। মঙ্গলবার কোচবিহারে জনসংযোগ যাত্রায় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেন অভিষেক। তাঁদের সমস্যার কথাও শোনেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় রয়েছি, যাঁরা বলেন তৃণমূল মানুষের সঙ্গে থাকে না, তাঁরা ৬ দিন তাঁবুতে কাটিয়ে দেখান।’’ পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের এই কর্মসূচিতে ৬০ দিন ধরে জেলায় জেলায় ঘুরবেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও শাসকদল এ ভাবে রাস্তায় নামে না। বিরোধীরা নামে। আমরা ক্ষমতায় থেকেও রাস্তায় নেমেছি। পরিবার, সংসার, বন্ধুবান্ধব ছেড়ে আপনাদের কাছে এসেছি। এক বার কলকাতা থেকে বেরিয়েছি। মাঝে আর ঢুকব না।’’ কেন এই কর্মসূচি করল তৃণমূল, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অভিষেক। বলেছেন, ‘‘২০২৬ সাল পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় রয়েছি। আবার জিতব। তৃতীয় সরকারের মেয়াদ ফুরোনোর আগেও আমরা রাস্তায় নেমেছি। কারণ, পঞ্চায়েতে যদি সঠিক প্রতিনিধি না থাকে, তা হলে উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। দুর্নীতিমুক্ত, রক্তহীন, অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। গণতান্ত্রিক নির্বাচন হোক।’’

অভিষেকের এই বক্তব্যের পাল্টা কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘ফেরেব্বাজির কথা এ সব। মানুষের পঞ্চায়েতকে ওরা ধ্বংস করে দিয়েছে। দিল্লির কাছ থেকে যা টাকা পায়, তা লুট করে। দিল্লি টাকা দিতে চায় না। আর টাকা পেলে রাজ্য লুট করে। ভোটটা কিসের জন্য? যেন লুটের রাজত্ব না-চলে। লুটেরাদের পঞ্চায়েত করে দিয়েছে। মানুষ যাতে ভোট দিতে না পারে, সেই পরিস্থিতি তৈরি করেছিল ২০১৮ সালে। এখন ভয় পেয়ে এ সব কথা বলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee TMC Panchayat Election 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE