Advertisement
০২ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee at Dharna

রাজ্যপালের আশ্বাসে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কেন্দ্রকে সময় দিয়ে ধর্না প্রত্যাহার, পরামর্শ মমতার: অভিষেক

রাজ্যপাল দিল্লি গিয়েছেন। নেত্রী জানিয়েছেন, বাংলারও ‘সৌজন্য’ দেখানো উচিত। তাই ধর্না প্রত্যাহার। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সদুত্তর না পেলে ১ নভেম্বর থেকে ফের কর্মসূচি শুরু হবে, জানিয়ে দিলেন অভিষেক।

image of Abhishek Banerjee

ধর্নামঞ্চে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৪৪
Share: Save:

রাজ্যপাল আশ্বাস দিয়েছেন। শাসকদলের ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’-র অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে দিল্লি গিয়েছেন। তিনি ‘সৌজন্য’ দেখিয়েছেন। তাই তৃণমূল নেত্রীর পরামর্শে পাল্টা ‘সৌজন্য’ দেখিয়ে ধর্না তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কেন্দ্রকে সময় বেঁধে দিলেন তিনি। জানালেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বাংলার মানুষের দাবি নিয়ে পদক্ষেপ করা না হলে ১ নভেম্বর পথে নামবেন তাঁরা। তবে এ বার তাঁর নেতৃত্বে নয়, তৃণমূল পথে নামবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে।

সোমবার বিকেল ৪টেয় রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে অভিষেক-সহ তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। বৈঠকের পরেই দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন রাজ্যপাল। কী হয়েছিল সেই বৈঠকে, সেই বিষয়ে দুই পক্ষই জানিয়েছে। যদিও সন্ধ্যায় রাজভবনের উত্তর গেটে ধর্নামঞ্চ থেকে অভিষেক জানান, রাজ্যপাল আসলে কী উত্তর দিয়েছেন, তা তিনি মানুষকে জানাতে চান। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যপাল যে উত্তর দিয়েছেন, কেউ জানেন না। তিনি কথা দিয়েছেন, দু’সপ্তাহ নয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আমি যতদূর শুনেছি, ইতিমধ্যে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তিনি। আশা করছি, এর বিহিত উনি করবেন।’’

তার পরেই অভিষেক জানান, রাজ্যপাল আশ্বাস দিলেও তিনি আরও ২৪ ঘণ্টা ধর্নায় বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বারণ করেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কল্যাণদা (বন্দ্যোপাধ্যায়) অনুরোধ করেছেন। শোভনদা (চট্টোপাধ্যায়) , সুদীপদা (বন্দ্যোপাধ্যায়), সৌগতদা (রায়)-র সঙ্গে কথা বলেছি। দলনেত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। আরও ২৪ ঘণ্টা বসতে চেয়েছিলাম। নেত্রী বলেছেন, যেহেতু উনি সৌজন্য দেখিয়েছেন, বাংলারও সৌজন্য দেখানো উচিত।’’ অভিষেক জানালেন নেত্রীর সেই নির্দেশ মেনেই সোমবার সন্ধ্যায় ধর্না প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে জানিয়ে দেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কেন্দ্রের ‘সদুত্তর’ না পেলে ১ নভেম্বর থেকে ফের কর্মসূচি শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘‘১ নভেম্বর যখন রাস্তায় নামব, অভিষেকের নেতৃত্বে নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। ৫০ হাজার মানুষ হাঁটবেন, সামনে মমতা।’’

image of letter

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (বাঁ দিকে)-কে স্মারকলিপি তৃণমূলের। — নিজস্ব চিত্র।

সোমবার বিকেলে রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন অভিষেক-সহ তৃণমূলের ৩০ জনের প্রতিনিধি দল। সেখানে প্রায় ২০ মিনিট ধরে বৈঠক চলে। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দিয়েছে দল। সেখানে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে সমস্যা এবং তাঁদের দাবি বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়েছে। ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বেরিয়ে বলেন, ‘‘আমরা একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। চিঠিগুলো দিয়ে এসেছি। বৈঠক ভাল হয়েছে।’’

তৃণমূলের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজভবনের তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়। রাজ্যপাল জানিয়েছেন, তিনি ধৈর্য ধরে অভিষেকদের বক্তব্য শুনেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন যে, বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন এবং বাংলার মানুষের হিতার্থে যা করণীয়, তা করবেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বকেয়া টাকা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তৃণমূলকে কথা দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। যদিও রাজ্যপালের বিবৃতিতে এই সময়সীমার কথা নেই। তবে বৈঠকের পরে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যাতেই দিল্লি যাচ্ছেন রাজ্যপাল। ৬টা ৪৫ মিনিটের বিমান ধরে রওনা হওয়ার কথা তাঁর। এর পরেই ধর্না তুলে নিতে অভিষেককে অনুরোধ করেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের কথা শোনার পর এই অনুরোধ করেন তিনি। পাশাপাশি, ধর্না তুলে নেওয়ার আগে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথাও জানান। সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব অভিষেকের উপরেই ছাড়েন কল্যাণ। তার পরেই নেত্রীর পরামর্শ পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন অভিষেক। তবে তিনি জানিয়ে দেন, ২১ লক্ষ মানুষের দু’বছর ধরে রুটি রুজি বন্ধ। কাজ করেও তাঁরা টাকা পাননি। রাজ্যপালেরও এই নিয়ে ‘দায়বদ্ধতা’ রয়েছে। রাজ্যপাল কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার পরেও ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কোনও পদক্ষেপ করা না হলে আবার পথে নামবেন তিনি।

‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’-র অভিযোগে দিল্লিতে ২ এবং ৩ অক্টোবর, দু’দিন অভিষেক-সহ তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের কর্মসূচি ছিল। ২ অক্টোবর রাজঘাটে ছিল অবস্থান বিক্ষোভ। মূল কর্মসূচি ছিল ৩ অক্টোবর যন্তর মন্তরে। এর পর কৃষিভবনে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করতে যায় ওই প্রতিনিধি দল। তৃণমূলের অভিযোগ, দেখা না করেই পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন জ্যোতি। এর পর পুলিশ এসে কৃষি ভবন থেকে প্রতিনিধি দলকে আটক করে তুলে নিয়ে যায়। দিল্লি থেকে ফিরে কেন্দ্রের প্রতিনিধি রাজ্যপালের কাছে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’ নিয়ে স্মারকলিপি জমা দিতে যায় তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। রাজ্যপাল রাজভবনে না থাকায় তার উত্তর গেটে ধর্নায় বসেন অভিষেক। গত পাঁচ দিন ধরে ধর্না চালানোর পর রাজ্যপালের আশ্বাস এবং নেত্রীর পরামর্শ পেয়ে সোমবার তা তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন অভিষেক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee Dharna TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE