E-Paper

পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে দেখান, কেন্দ্রকে অভিষেক

কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। পক্ষান্তরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ‘আত্মরক্ষা’র জন্য প্রয়োজনে হিন্দুর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:২৩
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে কয়েক দিন নীরব থেকে এ বার সরাসরি পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ‘পুনরুদ্ধার করে’ জবাব দেওয়ার ডাক দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। পক্ষান্তরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ‘আত্মরক্ষা’র জন্য প্রয়োজনে হিন্দুর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

বিজেপির নাম না-করে অভিষেক রবিবার তাঁর এক্স হ্যান্ড্‌লে বলেছেন, ‘যে ত্রুটির জন্য নজিরবিহীন সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে, তা অনুসন্ধানের বদলে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল কী ভাবে লাভবান হয়, সেই আখ্যান প্রচার করার জন্য বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।’ এর পরেই তাঁর দাবি, ‘পাকিস্তান যে ভাষা বোঝে, সেই ভাষাতেই তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে! পাক-অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধারের সময় এসেছে’! হামলার পরে কেন্দ্রের ‘পদক্ষেপ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও। তাঁর বক্তব্য, “জঙ্গি-ঘাঁটি বলে যত বাড়ি ওড়ানো হল, সেগুলি তো ভারতের মধ্যেই ছিল। এত দিন কী করছিল কেন্দ্র, গোয়েন্দা দফতর?”

পহেলগামে নিহতদের স্মরণে প্রদীপ জ্বালানোর কর্মসূচিতে গিয়ে এ দিন কাঁথিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য বলেছেন, “আমাদের সকলের নরেন্দ্র মোদীর উপরে বিশ্বাস আছে। পুলওয়ামা-কাণ্ডের পরে যে ভাবে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল, এই বারেও তা হওয়া চাই।”

কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় নিহত ২৬ জনের স্মরণে প্রদীপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা বিজেপির।

কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় নিহত ২৬ জনের স্মরণে প্রদীপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা বিজেপির। —নিজস্ব চিত্র।

অভিষেকের পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দখলের ডাককে কটাক্ষ করেছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “উনি প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ, ওঁকেই বলবেন আশা করি! বিদেশের কোনও আগ্রাসন আমরা মানব না। আবার বাড়তি আগ্রাসনেও যাব না, যাতে নতুন কোনও সংঘাতের ক্ষেত্র খুলে যায়। অবশ্যই সন্ত্রাসবাদ দমনে কার্পণ্য চলবে না।”

ঘটনাচক্রে, মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনার প্রেক্ষিতে সীমান্তবর্তী এলাকায় দরকারে হিন্দুদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার ছাড়পত্র দেওয়ার যে দাবি শুভেন্দু করেছিলেন, এ দিন কার্যত তারই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতির মুখেও। পহেলগামের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের ঘটনাকে একত্র করে এ দিন বহরমপুরে মোমবাতি জ্বালানো এবং পরে লালবাগে মিছিলে ছিলেন সুকান্ত। তিনি বলেছেন, “পুলিশ রক্ষা না করতে পারলে হিন্দুদের আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র রাখার অধিকার আছে।” তাঁর সংযোজন, “গোলমাল করবেন না। করলে বিএসএফ, কেন্দ্রীয় বাহিনী নামবে। বাহিনী নামলে গুলি চালাবে! গুলি চালালে আপনার বাড়ির ছেলের প্রাণ যাবে। ফিরহাদ হাকিম বা কোনও তৃণমূল নেতার বাড়ির কেউ যাবেন না। যদি ৭৫% হিন্দু সমাজ হাতে অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামে, তা হলে কিন্তু চরম বিপদ হবে!”

পহেলগামের ঘটনা নিয়ে পথের প্রতিবাদ এ দিনও অব্যাহত ছিল। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হানায় নিহত ২৬ জন এবং মুর্শিদাবাদে নিহত পিতা-পুত্রের স্মরণে ‘বঙ্গীয় হিন্দু সুরক্ষা মঞ্চে’র ডাকে শ্যামবাজার, মৌলালি, কাশীপুর, বৌবাজার, উল্টোডাঙা, মানিকতলা, শ্যামপুকুর-সহ ২৮১টি জায়গায় ২৬টি করে প্রদীপ জ্বালানো হয়েছে। শ্যামবাজার থেকে হাতিবাগান পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করেছে বিজেপি। ছিলেন দলের নেতা তমোঘ্ন ঘোষ, তাপস রায়, সজল ঘোষ প্রমুখ। দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় একই কর্মসূচিতে ছিলেন বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ। পহেলগামের ঘটনার প্রতিবাদে ক্যানিংয়ে কংগ্রেস এবং জলপাইগুড়ি-সহ বিভিন্ন জায়গায় সিপিএমের বিভিন্ন গণ-সংগঠনও মিছিল করেছে। পাশাপাশি, জঙ্গি-হামলার পরে গুজরাত, অসম, মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে আক্রমণ চলছে বলে অভিযোগ তুলে তা দ্রুত বন্ধের দাবি জানিয়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pahalgam Terror Attack TMC BJP Pahalgam Incident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy