গুজরাত খুঁড়তে গিয়ে বেরলো কলকাতা! বলা ভাল, চোদ্দো বছর আগের কলকাতা!
গুজরাতের এক মামলায় আরিফ হাসান নামে জনৈক অভিযুক্তকে ধরেছিল সেই রাজ্যের পুলিশ। বিহারের ঔরঙ্গাবাদে। কিন্তু দেখা গেল, ধৃত ব্যক্তি আদৌ সেই লোক নয়। বরং, বছর পঁয়তাল্লিশের প্রৌঢ়টি আরও বড় এক মামলার ফেরার আসামি, যে কি না ১৪ বছর ধরে নাম ভাঁড়িয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছে!
তার নাম হাসান ইমাম ওরফে হাসনু। কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত।
গুজরাত পুলিশ হাসানকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করে আমদাবাদ নিয়ে যায়। সেখানেই ভুলটা ধরা পড়ে। এ বার লালবাজার তাকে কলকাতায় নিয়ে আসছে। কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা-প্রধান বিশাল গর্গ সোমবার বলেন, ‘‘হাসান ইমামকে হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’ আজ, মঙ্গলবার তাকে কলকাতার কোর্টে তোলা হতে পারে বলে লালবাজারের ইঙ্গিত।
২০০২-এর ২২ জানুয়ারি কাকভোরে কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হামলা চলেছিল। ছ’জন পুলিশকর্মী নিহত ও ১৮ জন আহত হন। ২০০৫-এ সাত জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয় আদালত। এদের মধ্যে আফতাব আনসারি ও জামিলউদ্দিন নাসিরের ফাঁসির হুকুম হয়। পরে উচ্চ আদালত তা রদ করে আফতাবকে আমৃত্যু ও জামিলউদ্দিনকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার সময়ে মামলার আরও ছয় অভিযুক্ত ফেরার ছিল। যাদের অন্যতম সাদাকাত ধরা পড়ে ২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে, মুম্বই পুলিশের হাতে। পুলিশের দাবি, আমেরিকান সেন্টারের সামনে সাদাকাত-ই একে ফর্টি সেভেন থেকে এক লহমায় ৬৯টি গুলি ছুড়েছিল। এর আট বছর বাদে জালে পড়ল আর এক ফেরার হাসান ইমাম। বিহারের গয়ার বাসিন্দা হাসান ঘটনার অন্যতম ষড়যন্ত্রী হিসেবে অভিযুক্ত। কিন্তু চোদ্দো বছরের পুরনো মামলায় ওকে কাঠগড়ায় তুলে বিশেষ লাভ হবে কি?
লালবাজার অবশ্য আশাবাদী। গোয়েন্দাদের দাবি: হাসানকে জেরা করে মামলার কিছু আবছা দিক স্পষ্ট হতে পারে। আবার চক্রান্তে জড়িত আরও কয়েক জনের নাম সামনে আসতে পারে। কী রকম?
গোয়েন্দাদের ব্যাখ্যা: জঙ্গিরা সে দিন লাল-কালো মোটরবাইকে চড়ে এসেছিল। তদন্তে প্রকাশ, হাসান বিহারের হাজারিবাগ থেকে সেটি চালিয়ে কলকাতায় আসে ঘটনার পাঁচ দিন আগে। ১ নম্বর তিলজলা লেনের ডেরায় সে-ই দু’চাকাটি পৌঁছে দেয়। মোটরবাইকের মালিকের নাম এখনও জানা যায়নি। সেটা হাসানই বলতে পারে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
এ ছাড়া হানাদারির আগে কলকাতা ও হাজারিবাগে দুষ্কৃতীরা দু’টো ডেরা বানিয়েছিল। হাসান হাজারিবাগের আস্তানার দায়িত্ব নেয়। পুলিশের দাবি, আশপাশের আরও কিছু লোক ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল, যদিও তাদের নাম জানা যায়নি। ‘‘হাসানের কাছে তাদের হাল-হদিস মিলতে পারে।’’— বলছেন এক অফিসার।
পাশাপাশি গুজরাত পুলিশের হাতে যার মৃত্যুর বদলা নিতে কলকাতায় ওই হামলা, সেই আসিফ রেজা খানের ঘনিষ্ঠ ছিল সন্দেহভাজন হুজি-সদস্য হাসান ইমাম। শুধু তা-ই নয়, আমেরিকান সেন্টারে হানাদারির লক্ষ্যে ‘আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্স’ গঠনেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। ফলে পুরো চক্রান্তে সামিল আরও কিছু ব্যক্তির কথা হাসানের কাছ থেকে জানার অপেক্ষায় রয়েছে কলকাতা পুলিশ। সর্বোপরি গোয়েন্দাদের আশা, এই মামলার যে চার অভিযুক্ত এখনও ফেরার, সেই খুররম খৈয়াম, মহম্মদ নিয়াজ হোসেন, ফৈয়াজ হোসেন এবং আমির রেজা খানের (আসিফের ভাই) গতিবিধি সম্পর্কে হাসান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জোগাতে পারে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর: এক যুগেরও বেশি হল, ঔরঙ্গাবাদে রমেশ চকের কাছে নবাডিহা মহল্লায় ডেরা বেঁধে ছিল হাসান ইমাম। নাম নিয়েছিল আরিফ হাসান। ওখানে সে একটা কাপড়ের দোকান ও চিনা খাবারের দোকান চালাত এলাকার হকারদের এক সংগঠনের সভাপতি হওয়ার সুবাদে নানা সময়ে নানা আন্দোলনে সে সামিল হয়েছে। এমনকী, স্থানীয় পুলিশের একাংশের সঙ্গেও তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
বিহার পুলিশের এডিজি (সদর) সুনীল কুমার এ দিন বলেন, ‘‘হাসান ইমামকে গ্রেফতার করতে গুজরাত পুলিশকে আমরা সাহায্য করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy