Advertisement
E-Paper

উত্তর-দক্ষিণ করিডরে ঋণ দিতে রাজি এডিবি

রাজ্য সড়ক চওড়া করার প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)। তবে তাদের শর্ত, রাস্তা তৈরির কাজ শুরু আগে প্রয়োজনীয় জমির অধিগ্রহণের কাজ অন্তত ৫০ শতাংশ শেষ করতে হবে।

সোমনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:১৪

রাজ্য সড়ক চওড়া করার প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)। তবে তাদের শর্ত, রাস্তা তৈরির কাজ শুরু আগে প্রয়োজনীয় জমির অধিগ্রহণের কাজ অন্তত ৫০ শতাংশ শেষ করতে হবে। রাজ্য প্রশাসনের আমলাদের মতে, জমি অধিগ্রহণের কাজ ৫০ শতাংশ না-হলে এডিবি টাকা দেবে না, এটাই ওই শর্তের সারকথা।

তবে প্রস্তাবিত ‘নর্থ-সাউথ রোড করিডর’ প্রকল্পে এডিবি-র ঋণ পেতে জমি বাধা হবে না বলেই রাজ্য প্রশাসনের আশা। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশের মতো পড়শি দেশগুলির সঙ্গে হলদিয়া বন্দরের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য চার ও সাত নম্বর রাজ্য সড়ককে চওড়া করতে হবে। সেই কাজেই রাজ্যকে ৪৫০০ কোটি টাকা (মোট প্রকল্প-ব্যয়ের ৭০ শতাংশ) ঋণ দেবে এডিবি।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, এই কাজের জন্য প্রাথমিক ভাবে ২৭১ হেক্টর জমি লাগবে। সেই জমি জোগাড়ের ভার দেওয়া হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন বা পশ্চিমবঙ্গ সড়ক উন্নয়ন নিগমকে। ওই নিগম সূত্রের খবর, রাস্তা তৈরির ‘ডিপিআর’ বা সবিস্তার পরিকল্পনা তৈরি করছেন এডিবি-র বিশেষজ্ঞেরা। খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা প্রকল্পের রিপোর্ট দেখে অনুমোদন করবেন। মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকেই ওই রাস্তার জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি অনুমোদন করা হবে।

চার ও সাত নম্বর রাজ্য সড়ক চওড়া করার জন্য মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান ও দুই পূর্ব মেদিনীপুরে জমি লাগবে। সেই জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পাঁচ জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে প্রস্তুতি সেরে রাখা হচ্ছে বলেই সড়ক উন্নয়ন নিগমের খবর। ওই নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনোজ অগ্রবাল বলেন, ‘‘আমাদের জমি পেতে কোনও অসুবিধা হবে না। আমরা টাকা দিয়ে জমি কিনে নেব। রাজ্য সরকার তো জাতীয় সড়কের জন্য বিভিন্ন জেলায় জমি অধিগ্রহণ করছে। তবে জোর করে জমি নেওয়া হবে না।’’ অগ্রবালের দাবি, জমিদাতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সূত্র মারফত আলোচনা হয়েছে। সকলেই জমি দিতে রাজি।

রাজ্য সড়ক উন্নয়ন নিগমের চিফ জেনারেল ম্যানেজার শ্রীকুমার ভট্টাচার্য জানান, প্রস্তাবিত উত্তর-দক্ষিণ করিডর যাবে মুর্শিদাবাদের মোড়গ্রামে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশ দিয়ে। মোড়গ্রাম থেকে বাদশাহি রোড ধরে সেটি বর্ধমান জাতীয় সড়ক২বি হয়ে এনএইচ-২ পেরিয়ে আরামবাগে গিয়ে পড়বে। সেখান থেকে ঘাটাল হয়ে হলদিয়ায় যাবে। হলদিয়া থেকে ওড়িশা যাওয়ার রাস্তা ধরে পৌঁছবে পারাদ্বীপে। এই রাস্তাকেই ‘নর্থ-সাউথ রোড করিডর’ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন শিলিগুড়ি থেকে হলদিয়া যেতে হলে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার উপর দিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কলকাতা ঘুরে যেতে হয়। মোড়গ্রাম থেকে মেছোগ্রাম দিয়ে চার লেনের রাস্তা তৈরি হলে উত্তরের সঙ্গে হলদিয়ার দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার কমে যাবে। কলকাতার যানজট এড়িয়ে সহজেই মালবাহী গাড়ি তাড়াতাড়ি যাতায়াত করতে পারবে। পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বেড়ে যাবে এই রাস্তায়।

করিডরের উপকারিতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু কাঁটা হয়ে অনবরত খোঁচা দিচ্ছে শুধু জমির প্রশ্ন। জমি-সঙ্কটের অভিজ্ঞতা এমনই কর্কশ যে, কর্তাদের আশাবাদ তাতে তেমন মলম লাগাতে পারছে না। উন্নয়ন প্রকল্প হোক বা শিল্পায়ন, এ রাজ্যে জমি-জট সর্বত্র হাজির। টাকা বরাদ্দের পরেও বহু প্রকল্প শেষ করা যাচ্ছে না স্রেফ জমি না-মেলায়। যেমন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চার লেনের করার জন্য ২০১০ সালে কাজ শুরু হয়। কিন্তু সেই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সব জমি এখনও অধিগ্রহণ করতে পারেনি রাজ্য সরকার। উত্তর ২৪ পরগনায় কয়েকটি জায়গায় কাজ শুরুই করা যায়নি। বিহার সরকার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কাছে সেতু তৈরি করলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার জমি নিতে না-পারায় সেটি চালু হয়নি।

বাংলার এই রূঢ় পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই করিডরে ঋণের ক্ষেত্রে এডিবি জমি অধিগ্রহণের শর্ত দিয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে। সড়ক নিগমের কর্তারা জমি অধিগ্রহণ নিয়ে তেমন মাথা না-ঘামালেও জমি-জট কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়ি-হলদিয়া সড়ক হয় কি না, ওই সংস্থার একাংশই সেই বিষয়ে সন্দিহান। তাঁরা বলছেন, না-আঁচালে বিশ্বাস নেই!

west bengal highway development corporation adb asian development bank 4 no state highway highway expansion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy