ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অনুদান নিতে এসে ক’দিন আগে নবান্নের সামনে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন দুই পড়ুয়া। পুলিশ তাঁদের চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেয়। এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল, তা নয়। চড়া রোদে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আগেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ ক’জন। তবে, এ বার দুই পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে। আর তাতেই কিছুটা সুরাহা মিলেছে বিভিন্ন জেলায় প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা দুঃস্থ ও কৃতী পড়ুয়াদের। বছরভর নবান্নের সামনে তাঁদের অপেক্ষার ছবিটা বদলে গিয়েছে অনেকটাই।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতী ও দুঃস্থ পড়ুয়াদের এককালীন ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে। রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্নে চলে আসার পরে এই ভবনের এক তলায় অনুদানের জন্য নথি জমা নেওয়ার কাউন্টার খুলেছে সরকার। সেই ভিড় যে লাফিয়ে বাড়ছে, তা অজানা নয় পুলিশ-প্রশাসনের। এবং জানে বলেই নবান্নের সামনে হাওড়া পুরসভার একটি জলের গাড়িরও ব্যবস্থা করেছে তারা। কিন্তু সেই ব্যবস্থাপনা যে পর্যাপ্ত ছিল না, দু’টি ছেলেমেয়ের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা তারই ইঙ্গিত। পুলিশ জানায়, গত ১৯ অগস্ট আরামবাগ থেকে পূর্ণিমা দলুই ও বারুইপুর থেকে শ্যামলাল মালাকার নবান্নে এসেছিলেন নথি জমা দিতে। দু’জনেই এ বছর মাধ্যমিকে ৬৫ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়েছেন। ভোরের আলো ফুটতেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু লাইন এত দীর্ঘ ছিল যে নবান্নের গেটে পৌঁছনোর আগেই অচেতন হয়ে পড়েন দু’জন। পূর্ণিমাকে হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। শ্যামলালকে চোখেমুখে জল দিয়ে মোটামুটি সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জানার পরেই নড়েচড়ে বসেন তাঁর অফিসের কর্তারা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের দু’জন ‘ওএসডি’ এক তলায় নেমে এসে যে ঘরে কৃতী পড়ুয়াদের আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়, সেখানকার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। এর পরেই পাশের একটি ঘরে অতিরিক্ত কম্পিউটার ও কর্মী বসিয়ে আবেদনপত্র জমা নেওয়ার ব্যবস্থা হয়। নবান্ন সূত্রের খবর, ক’দিন আগেও যেখানে প্রতি দিন দেড়শো-দু’শো আবেদনপত্র জমা নেওয়া হতো, এখন সেই সংখ্যাটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারশোর কাছাকাছি। নবান্নের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা থেকে আসা অভিষেক হালদার। আগের দিন দুপুরে বাড়ির লোকের সঙ্গে রওনা দিয়েছিলেন সুন্দরবনের ওই দ্বীপ-অঞ্চল থেকে। রাতে পৌঁছন নবান্নে। এর পরে ফুটপাথেই রাত্রিবাস। অভিষেক বললেন, ‘‘আবেদনপত্র ব্লক বা মহকুমায় নেওয়া হলে সুবিধা হতো। খাওয়াদাওয়া ও যাতায়াতের খরচ আছে। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীই গরিব। তাই ১০ হাজার টাকার জন্য এই কষ্ট স্বীকার।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের বাসিন্দা মহাশ্বেতা মাইতিরও বক্তব্য একই, ‘‘জেলায় আবেদনপত্র নেওয়া হলে সকলের সুবিধা হতো। রাত জেগে লাইন দিতে হতো না।’’ অনেকের আবার প্রশ্ন, এখন তো অনলাইনেই অনেক কাজ হয়। অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা করলে ক্ষতি কী?
মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে কর্তারাও যে পড়ুয়াদের এই সমস্যা ও প্রস্তাবগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন, তা নয়। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের সব প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও সে ভাবে ইন্টারনেটের পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। অনলাইনে আবেদন করতেও আলাদা কিছু খরচ লাগবে। সকলে তেমন সড়োগড়োও নন এ ব্যাপারে। তা ছাড়া সব ক্ষেত্রেই সশরীর হাজির হওয়া ও মূল নথি পরীক্ষার একটা পর্ব থাকে। নবান্নে এসে নথি জমা দিলে এক দিনে তার ‘স্ক্রুটিনি’ ও ‘ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন’-ও হয়ে যায়। জেলা বা ব্লক স্তরে আবেদনের ব্যবস্থা করা হলে এই অনুদান পাইয়ে দেওয়া নিয়েও যে টাকার খেলা শুরু হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা নবান্নের কর্তাদের। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা যেহেতু কেন্দ্রীয় ভাবে দেওয়া হয়, তাই তা জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবু উত্তরবঙ্গের জন্য শিলিগুড়িতে পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের ছেলেমেয়েরাই কেবল নবান্নে আসেন।’’ ওই কর্তার আরও আশ্বাস, ‘‘যদি দেখা যায় সমস্যা মেটেনি, তা হলে আরও কম্পিউটার ও লোক দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy