প্রতীকী ছবি।
এ রাজ্যে ফেল করেও ভর্তি নেওয়া বা পাশ করিয়ে দেওয়ার আবদেরে অসুখ যেন আর সারছেই না!
দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও তৃতীয় বর্ষে উঠতে চেয়ে গত বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার উপাচার্য সুগত মারজিতকে ঘিরে হাঙ্গামা বাধিয়েছিল শহরেরই একটি কলেজের কিছু পড়ুয়া। প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফেল করেও স্নাতকোত্তরে ভর্তির দাবিতে এ বার ঘেরাও এবং কটূক্তি করা হল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবু তালেব খানকে। বিক্ষোভ চলল প্রতিষ্ঠানের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে।
দু’টি ঘটনাতেই অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। তারা বৃহস্পতিবার আলিয়ার উপাচার্যকে গালাগাল এবং তাঁকে লক্ষ করে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করেছে বলেও অভিযোগ। গোলমালের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির প্রক্রিয়া অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দিতে বাধ্য হন।
টিএমসিপি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উল্টে উপাচার্যের বিরুদ্ধেই স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ এনেছে তারা। আলিয়ায় টিএমসিপি ছাত্র সংসদের মেয়াদ শেষ। তাই টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেন, ‘‘ওখানে এখন আমাদের কোনও ইউনিট নেই। এরা (যারা গোলমাল পাকিয়েছে) কেউ টিএমসিপি নয়।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এ দিন এমটেকে ভর্তি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালেই প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন পড়ুয়াদের একাংশ। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন টিএমসিপি-র মেয়াদ-উত্তীর্ণ ছাত্র সংসদের সদস্যেরা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, উপাচার্য এমটেকে নিজেদের পড়ুয়াদের ভর্তি করার সুযোগ কেড়ে নিয়েছেন। তাঁদের এমটেকে ভর্তি নিতেই হবে।
উপাচার্য আবু তালেব খান জানান, এমটেকে আসন ৯০টি। বিটেক পাশ করেছেন ৩০০ জন। কেন্দ্রের নিয়ম মেনে এমটেকে ভর্তি হতে গেলে ‘গ্র্যাজুয়েট অ্যাপ্টিটিউ়ড টেস্ট’ পাশ করতে হয়। তার পরে আলিয়ার অভ্যন্তরীণ ভর্তি পরীক্ষা পাশ করলে তবেই কাউন্সেলিংয়ে সুযোগ মেলে। ‘‘যারা ভর্তির দাবি তুলেছে, তাদের কেউই এই দু’টি পরীক্ষায় পাশ করেনি। ফলে তাদের এমটেকে ভর্তি করার প্রশ্নই ওঠে না। তাই ভর্তি স্থগিত রাখা হচ্ছে,’’ বলেন উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি সূত্র জানায়, বিক্ষোভকারীদের দাবিদাওয়া শুনতে উপাচার্য তাঁদের আলোচনায় ডেকেছিলেন। অভিযোগ, ক্যান্টিনে সেই আলোচনার সময়েই এক দল পড়ুয়া তাঁকে ঘিরে ধরে কটূক্তি ও কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে যেতে থাকেন। পড়ুয়াদের আচরণে তিনি অত্যন্ত আহত বলে জানান উপাচার্য।
টিএমসিপি-র মেয়াদ-উত্তীর্ণ ছাত্র সংসদের তরফে আব্দুল রউফের দাবি, যে-সব পড়ুয়া বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁদের সকলেই দু’টি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। তবু তাঁদের স্নাতকোত্তরে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না।
গত বছর বেহালার বিবেকানন্দ কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় ফেল করেও তৃতীয় বর্ষে তুলে দেওয়ার দাবিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য সুগতবাবুকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান টিএমসিপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। ধাক্কাও দেওয়া হয়েছিল উপাচার্যকে। বছর ঘুরতেই নিগৃহীত হলেন অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। পরের পর উপাচার্যের হেনস্থায় পড়ুয়াদের মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা শিবিরে। মুখ্যমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও তাঁদের ছাত্র সংগঠনে সংযমের চিহ্ন নেই কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy