Advertisement
E-Paper

রোগের আগেই প্রতিরোধের ধাক্কা, পথ দেখাল ‘শ্রীরামপুর মডেল’

রাজ্য জুড়ে মৃত্যু-মিছিলের মধ্যে শ্রীরামপুর পুরসভার পরিসংখ্যান বলছে, বছরের গোড়া থেকে এ পর্যন্ত শহরে ডেঙ্গিতে ৪০-৪৫ জন আক্রান্ত হন।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০৬
টানা পদক্ষেপ পুরসভার। শ্রীরামপুরে চলছে প্রচারও। ছবি: দীপঙ্কর দে।

টানা পদক্ষেপ পুরসভার। শ্রীরামপুরে চলছে প্রচারও। ছবি: দীপঙ্কর দে।

সলতে পাকানোটা শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে।

জ্বর-ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রচার এবং ‘অ্যাকশন’। গত বারের থেকে শিক্ষা নিয়ে তথ্য গোপন না-করে এ বার ফেব্রুয়ারি থেকেই মাঠে নেমেছিল শ্রীরামপুর পুরসভা। তাই ফলও মিলেছে হাতেনাতে। জ্বর-ডেঙ্গি এখনও পর্যন্ত অনেকটাই রুখে দিতে পেরেছে তারা। কিন্তু ওই কাজে ঢিলেমির জন্যই এ বার পাশের বৈদ্যবাটি, চন্দননগর বা দূরের বাদুড়িয়া, কাঁচরাপাড়া, হাবরার মতো রাজ্যের বহু পুরসভা ডাহা ফেল করেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

রাজ্য জুড়ে মৃত্যু-মিছিলের মধ্যে শ্রীরামপুর পুরসভার পরিসংখ্যান বলছে, বছরের গোড়া থেকে এ পর্যন্ত শহরে ডেঙ্গিতে ৪০-৪৫ জন আক্রান্ত হন। বেশির ভাগই ইতিমধ্যে সুস্থ। বর্তমানে জনাদশেক আক্রান্ত। মৃত্যু নেই এখনও। যা দেখে বিরোধীরা তো বটেই, চিকিৎসকের একাংশও মনে করছেন, ‘শ্রীরামপুর-মডেল’ যদি অন্যত্রও মানা হতো, তা হলে জ্বর-ডেঙ্গি পরিস্থিতি এতটা জটিল হতো না।

অথচ, গতবার ডেঙ্গি মরসুমের গোড়ায় শ্রীরামপুর পুরসভার বিরুদ্ধে কাজে ঢিলেমি, উদাসীনতা, গাফিলতির গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ উঠেছিল। কয়েক হাজার মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় অন্তত চার জনের। এ বার কী ভাবে প্রতিরোধ সম্ভব হল?

গতবার স্বাস্থ্য দফতর সব তথ্য প্রকাশ্যে এনে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গিকে ‘মহামারি’ ঘোষণা করার পরেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়। পুরোদমে মাঠে নামে পুরসভা। সাধারণ মানুষকেও সামিল করা হয় মশা নিধনে। ফলে, ডেঙ্গি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে। এ বার ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি প্রচার, মশা মারার তেল-ব্লিচিং ছড়ানো, জজ্ঞাল সাফাই, নালা পরিষ্কার, ছবির মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ, রোগীদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা— সব কিছুই শুরু হয়ে যায়। যত দিন এগিয়েছে, তত বেড়েছে কাজের গতি। পাশাপাশি যাবতীয় তথ্য জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য প্রশাসনকেও সমানে জানিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান শ্রীরামপুর পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের নোডাল অফিসার শৌভিক পণ্ডা।

মঙ্গলবার সকালেই শৌভিকবাবুকে দেখা গিয়েছে শ্রীরামপুর উড়ালপুলের নীচে সুপারাইজার জলি মুখোপাধ্যায় ও দলবলকে নিয়ে তেল-ব্লিচিং ছড়াতে। শৌভিকবাবু জানান, এ বার রীতিমতো ‘ক্যালেন্ডার’ তৈরি করা হয়েছে। ২৯টি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে সুপারভাইজারের নেতৃত্বের দু’জন করে স্বাস্থ্যকর্মী বহাল করা হয়েছে। ‘ক্যালেন্ডার’ মতো প্রতিটি দল প্রতি মাসে অন্তত দু’ বার করে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সমীক্ষা করছে কোথাও জল জমেছে কিনা। তেমন থাকলে সেই জল ফেলেও দিচ্ছে তারা। এ জন্য প্রতিটি বাড়িতে পুরসভা ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দিয়েছে। তাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা তথ্য লিপিবদ্ধ করছেন।

শৌভিকবাবু বলেন, ‘‘গতবার তেল ছড়ানোর পরেও কিছু এলাকায় ডেঙ্গি রোগী মিলেছিল। তখন দেখি, আদতে তেলের আয়ু বড়জোর সাত দিন। তাই চার-পাঁচ দিন অন্তর তেল ছড়াচ্ছি। ফল মিলেছে।’’ হাড়িপা়ড়ার বাসিন্দা কমল দাস বলেন, ‘‘পাড়ার কিছু বাড়িতে জ্বর ছড়িয়েছিল। পুরকর্মীরা দেখভাল করে তা নিয়ন্ত্রণে আনেন। রক্ত পরীক্ষা ওঁরাই করালেন। এখন আমাদের বিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে।’’ পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা জ্বর প্রতিরোধে নিজস্ব পরিকাঠামো তৈরি করেছি। চিকিৎসাও বিনা পয়সায় হচ্ছে।’’

অন্যত্র জ্বর-ডেঙ্গি রোধে এই পরিকাঠামোর অভাব নিয়েই প্রথম থেকে অভিযোগ তুলছিলেন ভুক্তভোগীরা। কাঁচরাপাড়া, বাদুড়িয়া, বৈদ্যবাটি, চন্দননগরের মতো বেশ কিছু পুরসভা এ বার মাঠে নামে এলাকায় ডেঙ্গি ছড়ানোর পরে। দেড় মাস বা দু’মাস আগে। হাবরা পুরসভা মে মাস থেকে কাজে নামলেও গতি ছিল না বলে অভিযোগ। আর সেই ফাঁকেই ডানা মেলেছে ডেঙ্গির মশা।

Degue Serampore ডেঙ্গু
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy