Advertisement
১৬ মে ২০২৪

অন্ধকার ছেড়ে আলোয়, খেল্ দেখাচ্ছে এডিস মশা

আলো এখন শত্রু থেকে বন্ধু! এন্টেমোলজির যে কোনও পাঠ্য বইয়ে লেখা, এডিস ইজিপ্টাই মশা ফোটোফোবিক, তীব্র আলো তাদের অপছন্দ। তাই প্রধানত কম আলোর স্যাঁতসেঁতে এলাকাকেই ডিম পাড়ার জন্য বেছে নেয় ওরা।

দেবদূত ঘোষঠাকুর
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

আলো এখন শত্রু থেকে বন্ধু! এন্টেমোলজির যে কোনও পাঠ্য বইয়ে লেখা, এডিস ইজিপ্টাই মশা ফোটোফোবিক, তীব্র আলো তাদের অপছন্দ। তাই প্রধানত কম আলোর স্যাঁতসেঁতে এলাকাকেই ডিম পাড়ার জন্য বেছে নেয় ওরা।

সেই মতো পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে বলা হয়, বাড়ির ভিতর প্রায় অন্ধকার জায়গার জমা জলে এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা খুঁজতে হবে। বাইরে পড়ে থাকা পরিষ্কার জমা জলে খুঁজতে হবে অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই অর্থাৎ ম্যালেরিয়াবাহী মশা। কারণ, তারা আলোয় পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ে। ওরা ফোটোফিলিক।

সেই মতো বাড়ি বাড়ি মশার লার্ভা খুঁজতে গিয়ে ফাঁপড়ে পড়েছেন পুরকর্মীরা। বাড়ির বাইরে পাত্রে জমানো জল থেকে যে মশার লার্ভা তাঁরা পেয়েছেন, দেখা যাচ্ছে সেগুলি অ্যানোফিলিসের লার্ভা নয়। ডাক পড়ছে পতঙ্গবিদদের। আলোকজ্জ্বল এলাকায় পরিষ্কার জলের পাত্র থেকে সংগৃহীত এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা দেখে থ পতঙ্গবিদরাও!

পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, ‘‘২০১২-এ যে বার কলকাতায় ডেঙ্গির মারাত্মক সংক্রমণ হয়, সে বার বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখেছি ভিতরে অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে এলাকায় জমানো পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ছে এডিস মশা। এটাই দস্তুর। কিন্তু এ বার দেখলাম ‘ফোটোফোবিক’ এডিস মশা ‘ফোটোফিলিক’ হয়ে গিয়েছে!’’

দেবাশিসবাবুর পিএইডি থিসিসের বিষয় ছিল এডিস মশার চরিত্র বদল। এ বারের সংক্রমণে এডিস মশার নতুন চরিত্র দেখে তিনি অবাক। বলেন, ‘‘এ বার যেখানে যেখানে আমরা নমুনা সংগ্রহে গিয়েছি, সেখানে বাড়ির বাইরে পাত্রে জমানো পরিষ্কার জলে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছি।’’ শুক্রবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, হেয়ার স্কুল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের আনাচেকানাচে পরিত্যক্ত পাত্রে জমা জল থেকে যে লার্ভা পুরসভা সংগ্রহ করেছে, সেগুলি মূলত এডিস মশারই লার্ভা। এর আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ অন্য জায়গাতেও তাদের একই অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেবাশিসবাবু।

এ ভাবে এডিস মশার চরিত্র বদল হল কী ভাবে? দেবাশিসবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘২০১২-র কলকাতায় ডেঙ্গির ব্যাপক সংক্রমণের পরে আমরা মানুষকে টানা সচেতন করে বলেছি, ঘরের মধ্যে পরিষ্কার জল জমাবেন না। তাতে এডিস মশার বংশবিস্তার কিছুটা হলেও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আমার মনে হয়, অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই এডিস মশারা তাদের চরিত্র পাল্টে ফেলেছে।’’ কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদের মতে, ‘‘ওরা বুদ্ধির লড়াইয়ে ক্রমেই কোণঠাসা করছে আমাদের। সংক্রমণ ছড়ানোর আগে ওদের চরিত্র বদলের আঁচই পাচ্ছি না। তাই লড়াই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mosquito Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE