Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Pollution

‘মেয়াদ পেরোনোর আট মাস পরেও দূষণ কমেনি প্লান্টের’

পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, গড়াগাছা ও পামারবাজারের হটমিক্স প্লান্ট থেকে যে দূষণ ছড়াচ্ছে, তা বছরখানেক আগে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টেই পরিষ্কার হয়ে যায়।

রাস্তার ধারের এমন অস্থায়ী হটমিক্স প্লান্ট এখন নিষিদ্ধ। ফাইল চিত্র

রাস্তার ধারের এমন অস্থায়ী হটমিক্স প্লান্ট এখন নিষিদ্ধ। ফাইল চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:০০
Share: Save:

বিটুমিন গলানোর জন্য রাস্তার ধারে অস্থায়ী হটমিক্স প্লান্ট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতের। শুধু তা-ই নয়, পামারবাজার ও গড়াগাছায় পুরসভার যে দু’টি হটমিক্স প্লান্ট রয়েছে, সেগুলিকেও পরিবেশবান্ধব করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু মেয়াদ পেরোনোর পরে আট মাস কেটে গেলেও এখনও সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের। ফলে প্লান্টের দূষণের মাত্রাও কমেনি বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, গড়াগাছা ও পামারবাজারের হটমিক্স প্লান্ট থেকে যে দূষণ ছড়াচ্ছে, তা বছরখানেক আগে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টেই পরিষ্কার হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে কোথাও নির্ধারিত মাত্রার থেকে চার গুণ, কোথাও আবার ন’গুণ বেশি দূষণের চিত্র ধরা পড়েছিল। পর্ষদের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্লান্ট দু’টি পরিদর্শনের পরে যে রিপোর্টটি দাখিল করা হয়, সেখানে দেখা যায়, গড়াগাছা প্লান্টের দু’টি চিমনি থেকে কার্বন, সালফার-ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত যে ধোঁয়া নির্গত হয়, তার একটিতে দূষণের পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৪৫৯.৬২ মিলিগ্রাম। অন্য চিমনি থেকে যে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল, সেখানে দূষণের মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১৩৮৯.১০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ, নির্ধারিত মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১৫০ মিলিগ্রামের থেকে প্রায় ন’গুণ বেশি।

একই ভাবে পামারবাজারের হটমিক্স প্লান্টের দু’টি চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় দূষণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ৪১৩.৭৫ মিলিগ্রাম ও ৬০৭.৩০ মিলিগ্রাম। ২০১৯-এর ডিসেম্বরে পরিদর্শনের পরে পর্ষদের তরফে চার মাসের মধ্যে (অর্থাৎ ২০২০ সালের এপ্রিল-মে) প্লান্ট দু’টির পরিকাঠামো পরিবেশবান্ধব করা এবং ধোঁয়া নির্গমনের ক্ষেত্রে দূষণের পরিমাণ নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে রাখার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু পর্ষদ নির্ধারিত সেই সময়ের পরে আট মাস পেরিয়ে গেলেও সেই কাজ এখনও হয়নি বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের আরও বক্তব্য, পরিবেশ আদালতে মামলা চলাকালীন পুরসভা হটমিক্স প্লান্ট পরিবেশবান্ধব করার জন্য বার বার সময় চেয়েছিল। ফলে হটমিক্স প্লান্ট থেকে দূষণ কমানোর সামগ্রিক প্রক্রিয়া এমনিতেই ক্রমাগত পিছিয়েছে।

এর পাশাপাশি, জনবসতি থেকে দূরে, রাজারহাটের শিরাকোলে পরিবেশবান্ধব ‘ব্যাচ মিক্স প্লান্ট’ তৈরির পরিকল্পনার কথাও ২০১৯ সালে আদালতকে জানিয়েছিল পুরসভা। যদিও সেই পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পর্ষদের যুক্তি ছিল, শহর থেকে শিরাকোলের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। রাস্তা সারাইয়ের ক্ষেত্রে ‘মিক্স’ বা প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরির সময়ে তাপমাত্রা থাকে প্রায় ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই মিশ্রণ প্লান্ট থেকে কাজের জায়গায় যদি ১০০-১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকাকালীন পৌঁছয়, তা হলে মেরামতি যথাযথ হয়। না হলে কাজ ঠিক মতো হয় না। ফলে শিরাকোলের প্রস্তাবিত প্লান্ট থেকে রাস্তা সারাইয়ের উপাদান আনতে অনেকটাই দেরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছিল পর্ষদ। ফলে সব মিলিয়ে হটমিক্স প্লান্ট নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি দূষণের মাত্রারও বিশেষ হেরফের হয়নি বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘প্লান্ট দু’টির মাধ্যমে কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে, তা তো পর্ষদের রিপোর্টেই পরিষ্কার।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘পর্ষদ বলেছিল চার মাসের মধ্যে প্লান্ট দু’টি পরিবেশবান্ধব করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই মেয়াদ পেরোনোর আট মাস পরেও দূষণ কমেনি প্লান্টের। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। এতগুলো বছর ধরে তো পুরসভা কিছু করতে পারেনি।’’

যদিও কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, হটমিক্স প্লান্ট পরিবেশবান্ধব করার প্রক্রিয়া ধারাবাহিক ভাবে চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সেই কাজ সম্পূর্ণ হবে। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন মেয়র পরিষদ (রাস্তা) রতন দে জানাচ্ছেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরিবেশ-বিধি মেনেই পামারবাজার ও গড়াগাছা প্লান্টে দূষণ কমানোর প্রয়োজনীয় যন্ত্র বসানো হচ্ছে। রতনবাবুর কথায়, ‘‘রাস্তার ধারে হটমিক্স প্লান্ট বসানো পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছি। পুরসভার দু’টি প্লান্টে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Plastic pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE