Advertisement
E-Paper

মেয়েটাই তো নেই, মেয়ের মেয়েকে নেবে কে

পিতৃকুল বা মাতৃকুলের কেউই ভাবেনি তার কথা। স্রেফ মেয়ে হয়ে জন্মানোর ‘অপরাধ’-এ ওই দুই বাড়িরই আপনজনদের কাছে ব্রাত্য হয়ে শেষে তিন্নির ঠাঁই হয়েছে হোমে।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ১৪:০০

মায়ের অপমৃত্যুর পরে বাবা গারদে। ঠাকুরদা, ঠাকুরমা-সহ নিজের বাড়ির সকলেই উধাও হয়ে গিয়েছেন। কে নেবে আড়াই মাসের শিশুকন্যা তিন্নি (নাম পরিবর্তিত)-কে?

মেয়েকে হারিয়ে মেয়ের মেয়ে তিন্নির প্রতি কোনও টান অনুভব করতে দেখা যায়নি দাদামশাই-দিদিমাকেও। কে নেবে তিন্নিকে?

পিতৃকুল বা মাতৃকুলের কেউই ভাবেনি তার কথা। স্রেফ মেয়ে হয়ে জন্মানোর ‘অপরাধ’-এ ওই দুই বাড়িরই আপনজনদের কাছে ব্রাত্য হয়ে শেষে তিন্নির ঠাঁই হয়েছে হোমে।

পুলিশি সূত্রের খবর, ১৫ মে উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানা এলাকার গরিবপুরের তরুণী গৃহবধূ পিঙ্কি কর্মকারের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। পিঙ্কির বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, আড়াই বছর আগে তারক কর্মকার নামে এক যুবকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন তাঁরা। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে অত্যাচার চলত মেয়ের উপরে। কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার পরে সেই অত্যাচার চরমে ওঠে। তার জেরেই পিঙ্কি মারা যান বলে অভিযোগ।

গোপালনগর থানার পুলিশ পিঙ্কির বাপের বাড়ির লোকেদের অভিযোগের ভিত্তিতে তারককে গ্রেফতার করে। কিন্তু পিঙ্কির শ্বশুর, শাশুড়ি-সহ সেই বাড়ির বাকি সকলে গা-ঢাকা দেওয়ায় পিঙ্কির আড়াই মাসের মেয়ে তিন্নিকে নিয়ে সমস্যায় পড়ে পুলিশ। কারণ, প্রথমে তো সেই মা-হারা মেয়েকে কোথাও খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে পিঙ্কিরই শ্বশুরবা়ড়ির তরফে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়া পুলিশের কাছে গিয়ে সেই শিশুকন্যাকে তাদের হাতে তুলে দেন।

স্থানীয় চাইল্ডলাইনে খবর দেয় পুলিশ। চাইল্ডলাইন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে নিয়ে যায় তিন্নিকে। কিন্তু পিঙ্কির বাপের বাড়ির লোকজন সব জেনেও ওই শিশুকন্যার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য কোনও আবেদন করেননি। তিন্নির দাদু-দিদার ক্ষুব্ধ প্রশ্ন, তাঁদের মেয়ের উপরে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল তিন্নির জন্মের পর থেকেই। তা হলে তাঁরা ওই শিশুকন্যাকে নেবেন কেন? যদি নিতেই হয়, সে-ক্ষেত্রে বিয়ের সময়ে পিঙ্কিকে যে-সব গয়না এবং যৌতুক হিসেবে যে-টাকা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ফেরত দিতে হবে। সেই সঙ্গে ওই শিশুকন্যাকে বড় করার জন্য যত টাকা লাগবে, দিতে হবে তা-ও। তবেই তাকে নেবেন।

জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির বক্তব্য, এই সব ক্ষেত্রে সাধারণত কাছের আত্মীয়েরাই শিশুর দাবিদার হন। কিন্তু এই ঘটনায় শিশুর বাবা গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁর পরিবারের অন্য লোকজন পলাতক। ফলে মামার বাড়ির তরফে শিশুকে নেওয়ার অধিকার জানানোর অবকাশ ছিল। কিন্তু সেই বাড়িরও কেউ ওই শিশুকন্যাকে নিতে চাইছেন না। এক বার খবরও নেননি কেউ। ‘‘তাই বাধ্য হয়েই ওকে হোমে পাঠাতে হয়েছে,’’ বললেন সমিতির এক কর্তা।

কিন্তু এই হৃদয়হীন প্রবণতা কেন? ‘‘এটা ঠিক কোন ধরনের প্রবণতা এবং কেন এই প্রবণতা, বুঝতে পারছি না। তবে মানুষের মন থেকে আবেগ ও মানবিকতা যে ক্রমশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এটা তার প্রমাণ। এই ধারা বজায় থাকলে সার্বিক ভাবে ক্ষতি হবে মেয়েদেরই,’’ আশঙ্কা প্রকাশ
করেছেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়।

Girl Girl Child Home
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy