Advertisement
১১ জুন ২০২৪

ফের আক্রান্ত সিপিএম, ধৃত তৃণমূল নেতা

দলনেত্রী কলকাতায় নিজের বাড়িতে ডেকে সতর্ক করার পরে মোটে দু’টো সপ্তাহ পেরিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বর্ধমানের তৃণমূল নেতাদের হুঁশ ফিরছে না।দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে দিন পইপই করে বলে দিয়েছিলেন, সিপিএমের কোনও মিটিং-মিছিল-জাঠার উপরে যেন হামলা না করা হয়।

তৃণমূলের কাউন্সিলর সৈয়দ মহম্মদ সেলিমের (ডান দিকে) সামনেই ইট ছুড়ছে দলের কর্মী।

তৃণমূলের কাউন্সিলর সৈয়দ মহম্মদ সেলিমের (ডান দিকে) সামনেই ইট ছুড়ছে দলের কর্মী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৯
Share: Save:

দলনেত্রী কলকাতায় নিজের বাড়িতে ডেকে সতর্ক করার পরে মোটে দু’টো সপ্তাহ পেরিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বর্ধমানের তৃণমূল নেতাদের হুঁশ ফিরছে না।

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে দিন পইপই করে বলে দিয়েছিলেন, সিপিএমের কোনও মিটিং-মিছিল-জাঠার উপরে যেন হামলা না করা হয়। কিন্তু ফের সেই হামলা হল। এবং নেতারা যতই অস্বীকার করার চেষ্টা করুন, রাতে পুলিশ গ্রেফতার করল তৃণমূল কাউন্সিলরকেই।

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বামেরা রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করতেই নানা জায়গায় তাদের উপরে আক্রমণ শুরু হয়েছে। বর্ধমানে এর আগে মেমারি, রায়না, জামালপুর, জামুড়িয়ায় জাঠা আক্রান্ত হয়েছে। শনিবার হল বর্ধমান শহরে। এ দিন কালনা রেলগেট বাজারের কাছে ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারে পথসভা করছিল সিপিএম। সেই সভা ভেস্তে দিতে তৃণমূলের লোকেরা লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। সিপিএম কর্মীরা যে সমস্ত গাড়িতে করে এসেছিলেন, সেগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েকশো সিপিএম কর্মী-সমর্থক ওই সভায় এসেছিলেন। খানিক বাদে তৃণমূলেরও কিছু লোকজন জড়ো হন। প্রথমে দু’পক্ষে বচসা, পরে মারামারি বেধে যায়। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বোমা-গুলি ছুড়তে শুরু করে। শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সৈয়দ মহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কাউন্সিলর অবশ্য দাবি করেন, ওই রাস্তা ধরে পুর উৎসবে যাচ্ছিলেন তাঁরা। তখন সিপিএম কর্মীরাই তাঁদের দিকে বোমা ছোড়ে। পরে নিজেদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।


বর্ধমানে দলের পথসভায় আসা সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের মিনি ট্রাকে আগুন। শনিবার।

এক সময়ে তাড়া খেয়ে সিপিএম কর্মীরা রেললাইন পেরিয়ে চলে যান। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আইনুল হকের অভিযোগ, ‘‘আমরা আগে থেকে পুলিশ মোতায়েন রাখার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু পুলিশের সামনেই হামলা হয়।” পরিস্থিতি সামলানোর নামে পুলিশ সিপিএম কর্মীদেরই লাঠিপেটা করে বলেও তাঁর অভিযোগ। বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল যদিও তা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের দিকে ইট-পাথর ছোড়া হলে পাল্টা তাড়া করা হয়েছে।’’

কেন এই হামলা?

সিপিএম নেতাদের দাবি, জাঠায় বারবার আক্রমণের পরেও দমে না গিয়ে দলের তরফে নানা রকম কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। সেখানে যথেষ্ট লোকও হচ্ছে। বিধানসভা ভোটের আগে তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে তৃণমূল। যে কোনও ভাবে সভা বা মিছিল পণ্ড করার চেষ্টা হচ্ছে। দলের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘মানুষের সাড়া দেখেই ভয় পাচ্ছে তৃণমূল।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য পাল্টা বলেন, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে লোক কোথায়? ওরা সহানুভূতি কুড়োতে এ সব মিথ্যে অভিযোগ করছে।’’ তা হলে আক্রমণ করা হল কেন? স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের কেউ আক্রমণ করেনি। সিপিএমের লোকেরাই গাড়িতে করে ইট, পাথর, বোমা এনে হামলা চালায়।’’

রাতে বর্ধমানের দলীয় পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘যারা দলের লাইনের বিরুদ্ধে যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এর ঠিক পরেই কাউন্সিলর গ্রেফতার হয়ে যান।

ছবি: উদিত সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news attack on cpm cpim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE