যাঁদের সুবিধার জন্য সরকারি প্রকল্প, তার কথা খোদ উপভোক্তারাই জানেন না!
সরকারি প্রকল্পের ঢিলেঢালা প্রচার নিয়ে এ অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সরকারি তথ্যই বলছে, একই রকম সমস্যা রয়ে গিয়েছে ‘কিসান ক্রেডিট কার্ড’ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। সেই সঙ্কটের ছবিটা বদলাতে এ বার মাঠে নামল রাজ্য সরকার। কোথাও পথনাটিকা, কোথাও আলোচনার মাধ্যমে মঙ্গলবার জেলার প্রতিটি ব্লকে এ নিয়ে চাষির ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তি পক্ষ’ শুরু করল প্রশাসন।
যে কর্মসূচির মূল লক্ষ্যই ছিল, গ্রামীণ চাষিদের মধ্যে কিসান ক্রেডিট কার্ডের সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরা। প্রতিটি প্রান্তিক চাষির হাতে কিসান ক্রেডিট কার্ড পৌঁছে দেওয়া। যাতে এক জন চাষি তাঁর কার্ডটি ব্যবহার করে ফসল ও কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য স্বল্প সুদে ঋণ থেকে ফসল বিমা যোজনা-সহ কৃষি ক্ষেত্রে সব ধরনের সরকারি সুবিধা নিতে পারেন। জেলার যে সকল চাষির ক্রেডিট কার্ড নেই, তাঁদের হাতে পনেরো দিনের মধ্যে নতুন কার্ড দেওয়া হবে। পাশাপাশি পুরনো কার্ড নবীকরণ, ব্যবহার বন্ধ করা ও অনিয়মিত কার্ড পুনরায় চালু করা-সহ একগুচ্ছ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর কথায়, ‘‘শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ড চাষিদের হাতে পৌঁছে দিয়েই দায় মুক্তি নয়। কী কী ভাবে এক জন চাষি ওই কার্ড থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন, তা নিয়ে যেমন সচেতনতা গড়ে তোলা হবে, তেমনই সরাসরি চাষিদের সঙ্গে মিত্র ব্যাঙ্ক বা প্যাকসের কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ স্থাপনও করানো হবে।’’ এ নিয়ে এ দিন থেকেই জেলার প্রতিটি ব্লক কৃষি দফতর থেকে ধারবাহিক ভাবে প্রচার, কর্মশালা ও শিবির শুরু হল।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে চাষির ফসল রক্ষা করার জন্য শুরু হয়েছে ‘ফসলবিমা যোজনা’। কিন্তু এক জন চাষিকে সেই বিমার আওতায় আনতে হলে, সব চেয়ে আগে প্রয়োজন কিসান ক্রেডিট কার্ড থাকা। যে সব চাষি ঋণ নেন, তাঁরা এমনিতেই বিমার আওতায় আসেন। কিন্তু তথ্য বলছে, ফসলবিমা যোজনা চালু হওয়া সত্ত্বেও এই জেলার এখনও দুই তৃতীয়াংশ চাষি বিমার বাইরে থেকে গিয়েছেন। একটা বড় অংশের চাষির কাছে কার্ড নেই। আবার এমন অনেক চাষি রয়েছেন, যাঁদের হাতে আগেই ক্রে়ডিট কার্ড আছে। কিন্তু সময়ে নবীকরণ না করানোয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আবার কেউ কেউ একবার ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে চুপ করে বসে গিয়েছেন। তার পরে মিত্র ব্যাঙ্ক বা প্যাকস থেকে ঋণ না নিয়ে চড়া সুদে টাকা ধার করছেন।
জেলার হিসেব অনুয়ায়ী, গত সেপ্টেম্বরে নতুন করে ১৮,৪৮৭টি কিসান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। নবীকরণ হয়েছে ৬০,৭৭৫টির। কিন্তু এখনও ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ২৩০টি কার্ড দিতে বাকি আছে। ব্যাঙ্কে অনুৎপাদক ঋণ তৈরি হওয়ায় ১ লক্ষ ৭ হাজার ৯৬৮ জনের কার্ড সুপ্ত হয়ে রয়েছে। সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজারের বিডিও অতনু ঝুরি এবং তারাশঙ্কর ঘোষরা বলছেন, ‘‘সামনে অনেক কাজ। ওই সব দিকগুলিই এখানে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যই এই পক্ষকাল।’’ সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজার ব্লকের দুই এগ্রিকালচার ডেভলপমেন্ট অফিসার যথাক্রমে রাজীব হাজরা এবং পার্থসারথি সাহা জানাচ্ছেন, কিসান ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদ মাত্র ৭ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পরিশোধ করলে ৩ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে সুদের পরিমাণ কমে মাত্র ৪ শতাংশে দাঁড়ায়। সময়মতো কৃষিঋণ শোধ করলে ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ আরও ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
ওই কার্ড নিয়ে এলাকার চাষিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে জেলার বিভিন্ন ব্লকে পথনাটিকা ও আধিকারিকদের নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। সাঁইথিয়ার ‘আসর নাট্যম’ নাট্যগোষ্ঠী এবং রামপুরহাটের ‘রঙ্গম’ নাট্যগোষ্ঠী পথনাটিকার মাধ্যমে এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে নাটকের দায়িত্ব পেয়েছে। এ দিন নলহাটি ২ ব্লকের বারা ১ ও ২ এবং ভদ্রপুর ২ পঞ্চায়েতের ভবনে ব্যাঙ্ক আধিকারিক, চাষি, পঞ্চায়েত কর্মী ও ব্লক কৃষি আধিকারিকদের উপস্থিতিতে পথনাটিকা হয়েছে। নাটকের পরিচালক সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা তথ্য সংস্কৃতি দফতরের দেওয়া নাটক ‘মিত্র চেনো’ উপস্থাপন করেছি। নাটকের মূল বিষয়, কিসান ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের উপকারিতা। পাশাপাশি ফসলবিমা নিয়ে চাষিদের সচেতন করা হয়।’’ নানুরেও একই নাটক হয়েছে। মঞ্চস্থ করেছে লাভপুরের ‘দিশারি’ নাট্যদল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy