বছর দেড়েক আগে পার্ক স্ট্রিট ছেয়ে গিয়েছিল স্কুল-কলেজের উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের ভিড়ে। নিখরচার ওয়াইফাই জোনে দল বেঁধে স্মার্টফোনে ঘাড় গুঁজে থাকত তরুণ তুর্কির দল। দুপুর গড়িয়ে পায়ে পায়ে ঘনিয়ে আসছে সন্ধে, তবু নেট সার্ফিংয়ের বিরাম নেই।
তখনই মালুম হয়েছিল, ফ্রি ওয়াইফাই জোনের সুবিধেটা বেশি মনে ধরেছে ‘জেনারেশনেক্সট’-এর। টেকস্যাভি হবু নাগরিকের দল ওয়াইফাইয়ের সুবিধে চেটেপুটে নিতে মরিয়া। ক্রমে কলকাতার অন্যত্র— ইকো পার্ক থেকে শ্যামবাজার, সল্টলেক, গড়িয়াহাট-সহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াইফাই পরিষেবা চালু হয়েছে। নেটে অনলাইন চালু রাখার ব্যবস্থা হয়েছে মেট্রো স্টেশনেও। শীঘ্রই নিখরচায় নেটচর্চার সুযোগ কায়েম হতে চলেছে কলেজে কলেজে।
‘‘রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মতো সব কলেজেই এ বার ফ্রি ওয়াইফাই পরিষেবা চালু করা হবে,’’ বৃহস্পতিবার বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেটা হলে ছাত্রছাত্রীদের কাছে যে অন্য একটা দিগন্ত খুলে যাবে, একবাক্যে তা মেনে নিচ্ছেন কলকাতা ও জেলার বেশির ভাগ কলেজপড়ুয়া। এ বিষয়ে দ্বিমত নেই শিবনাথ শাস্ত্রী কলেজের বাংলা দ্বিতীয় বর্ষের গার্গী চট্টোপাধ্যায় এবং আসানসোলের বিধানচন্দ্র রায় কলেজের প্রাণিবিদ্যার প্রথম বর্ষের শাশ্বত মুখোপাধ্যায়ের। গার্গী বলছিলেন, ‘‘ফ্রি ওয়াইফাইয়ের দৌলতে কলেজে বসেই চাকরি সংক্রান্ত খুঁটিনাটি ঘাঁটাঘাঁটি করা যেতে পারে। বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কোর্সের সুবিধা রয়েছে, কোথায় কোন প্রজেক্ট চালু হল, এ-সব খবরও আঙুলের ডগায় চলে আসবে। অনেক দুশ্চিন্তার অবসান ঘটবে।’’ আর শাশ্বতের কথায়, ‘‘প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসের জন্য নেটের শরণ নিতেই হয়। নিজের ফোনের বাড়তি ডেটা খরচের হাত থেকে রেহাই পেলে তো ভালই হবে।’’
তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ফ্রি ওয়াইফাই পরিষেবা এখনও পুরোটা জাঁকিয়ে বসতে পারেনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভবনের মোটা দেওয়ালের ঘেরাটোপে এক বার ঢুকে গেলেই মোবাইলের নেট-সংযোগ নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে বসে নেটের সাহায্য কার্যত নিতেই পারেন না। বরং বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের বাইরে কলেজ স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে ফ্রি ওয়াইফাইয়ের সুবিধে মেলে সহজে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ওয়াইফাইয়ের সুবিধে পান না। সেখানে এই সুযোগ স্রেফ শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য বরাদ্দ। ‘‘তবে আমরাও স্যারেদের থেকে পাসওয়ার্ড জেনে নিয়ে স্মার্টফোনে ফ্রি ওয়াইফাইয়ের সুবিধে নিই! সম্ভবত বেশি ডেটা ব্যবহার হচ্ছে দেখেই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে পাসওয়ার্ড বদলে দেন,’’ বললেন ইতিহাস অনার্সের এক ছাত্রী।
ওয়াইফাইয়ের কেব্ল বসেছে পার্ক সার্কাসে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও। পরিকাঠামো প্রায় তৈরি। কিন্তু ওয়াইফাই সংযোগ চালু হয়নি। মালদহের মেয়ে, সদ্য ইংরেজি অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া ইরশা উন্নিসার কথায়, ‘‘আমাদের হোম ইউনিভার্সিটি। প্রাইভেট কোচিং নেই। সন্ধেয় ক্লাসের পরে ফ্রিতে নেট ঘাঁটা গেলে তো ম-স্ত সুবিধে! আজকাল পড়াশোনার বেশির ভাগ রেফারেন্সই তো নেট-নির্ভর।’’
কিছু প্রশ্নের কাঁটা অবশ্য আছেই। পড়ুয়ারা নেট ঘেঁটে পড়াশোনায় কতটা মগ্ন থাকবেন আর কতটা ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের আড্ডায়, তা নিয়ে সংশয়ে কেউ কেউ ভুরু কোঁচকাচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য ছাত্রছাত্রীদের শুভবুদ্ধির উপরেই আস্থা রাখছেন। তিনি মনে করেন, ‘‘কলেজপড়ুয়ারা প্রাপ্তবয়স্ক। নিজেদের ভাল তাঁরা বুঝবেন, এটাই প্রত্যাশিত।’’ আজকের অ্যাপ-নির্ভর জীবনচর্যা বা অনলাইন কেনাকাটার রোজনামচায় নেট ছাড়া অনেকেরই একটি বেলাও কাটে না। তাই ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজে নেটচর্চার রাস্তা খুলে দেওয়াটাই ঠিক রাস্তা বলে মনে করছেন পার্থবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy