প্রতীকী ছবি।
জঙ্গলমহলে ফের সক্রিয় হচ্ছে মাওবাদীরা। গোয়েন্দাদের খবর, ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণ ঘটাতে ঝাড়খণ্ড থেকে ৫ মাওবাদী ঢুকে পড়েছে এ রাজ্যে। তাই পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে বিশেষ সতর্কতা জারি হয়েছে। খবর নবান্ন সূত্রের।
গোয়েন্দাদের খবর, গত সোম ও মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় মাওবাদীদের বিশেষ বৈঠক বসেছিল। পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত সেখানেই নেওয়া হয়েছে। আঘাত হানতে বেলপাহাড়ির শিমুলপাল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে পাঁচ জঙ্গি মাওবাদী রাজ্যে ঢুকেছে। মূলত ল্যান্ড মাইন ফাটিয়ে নাশকতা ঘটাতেই এদের পাঠানো হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
মাওবাদীদের সেই গোপন বৈঠকের একটি অডিও টেপ হাতে পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি— এই টেপ থেকে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের একটি রাজনৈতিক দল পশ্চিমবঙ্গে গোলমাল পাকাতে মাওবাদীদের টাকা জোগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও মাওবাদী আদর্শের একেবারে ভিন্ন মেরুতে থাকা ওই রাজনৈতিক দল কেন জঙ্গিদের টাকা দেবে— তার জবাব গোয়েন্দাদের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়।
এক গোয়েন্দা কর্তা জানান, এ রাজ্যে ঢুকে পড়া পাঁচ মাওবাদীর খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা পুলিশকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। ঝাড়খণ্ড-লাগোয়া অঞ্চলে যৌথ বাহিনী নাকাবন্দি করাও শুরু করেছে।
বাম আমলে জঙ্গলমহল জুড়ে অশান্তির সময় এই শিমুলপাল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ছিল মাওবাদী কার্যকলাপের অন্যতম ঘাঁটি। ২০০৮ সালে এখানেই ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে একটি অ্যাম্বুল্যান্স উড়িয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। সেই ঘটনায় এক আদিবাসী ডাক্তার ও নার্সের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে এই এলাকায় বহু গুম-খুন হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। স্থানীয় কয়েক জন সিপিএম নেতা এখনও নিখোঁজ। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ওই আমলে এখানকার প্রায় সব ক’টি বড় রাস্তাতেই মাইন পাতা থাকত। ফলে দীর্ঘদিন এই চত্বরে প্রশাসনের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। পুলিশের দাবি, এ বারও তাই শিমুলপালকেই পাখির চোখ করেছে মাওবাদীরা।
কেন শিমুলপাল?
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এই পঞ্চায়েতের সব গ্রামই ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া। জঙ্গল ও পাহাড় ঘেরা। ও পারে ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলা মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি। তাই বেলপাহাড়ি থানার কাঁকড়াঝোড় সংলগ্ন এই পঞ্চায়েতটি মাওবাদীদের যাতায়াতের করিডর হিসাবে পরিচিত। জঙ্গলমহলে নাশকতা সেরে এই রাস্তা দিয়েই পালাত মাওবাদীরা। যাতে পুলিশের গাড়ি না-ঢোকে, সে জন্য সমস্ত পাকা রাস্তায় মাইন বিছিয়ে রেখেছিল তারা।
নবান্নের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘মাওবাদীরা সক্রিয় হলে উদ্বেগ বাড়ে। কিন্তু পড়শি রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক দল টাকা জুগিয়ে মাওবাদীদের এ রাজ্যে পাঠিয়েছে, গোয়েন্দারা এমন কথা জানতে পারলে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যের।’’ স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, নোট বাতিলের ধাক্কায় সারা দেশে মাওবাদীদের হাতে থাকা অন্তত ১০০০ কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট ব্যাঙ্কে জমা করতে পারছে না তারা। ফলে নগদে টান পড়েছে। এই অবস্থায় কোনও রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মাওবাদীরা মোটা টাকার বিনিময়ে খুনোখুনির বরাত নিতেই পারে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, এখন আর সেই শিমুলপাল নেই। পাকা রাস্তা, কার্যত বিনা পয়সায় চাল, চিকিৎসার পরিকাঠামো— উন্নতি কম হয়নি। ফলে সীমানা ঘেঁষা এই গ্রামগুলিতে বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না মাওবাদীরা।
তবে নবান্নের কর্তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন। নজরদারিও তাই বাড়ানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy