Advertisement
১৭ মে ২০২৪
বর্ধমান মেডিক্যাল

গুগ্‌ল খুলে দেদার টোকাটুকির অভিযোগ ডাক্তারি পরীক্ষায়

আর কিছু দিনের মধ্যেই তাঁরা চিকিৎসকের লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। হাসপাতালে বা প্রাইভেট চেম্বারে কাজ শুরু করবেন। তাঁদের হাতেই গিয়ে পড়বে অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দায়িত্ব। কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পরীক্ষায় যে ভাবে গণ টোকাটুকির অভিযোগ উঠেছে, তাতে ভবিষ্যতের ওই চিকিৎসকের উপরে কতটা ভরসা রাখা যাবে সেই প্রশ্নটাই বড়় হয়ে উঠেছে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমেন দত্ত
কলকাতা ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৯
Share: Save:

আর কিছু দিনের মধ্যেই তাঁরা চিকিৎসকের লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। হাসপাতালে বা প্রাইভেট চেম্বারে কাজ শুরু করবেন। তাঁদের হাতেই গিয়ে পড়বে অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দায়িত্ব। কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পরীক্ষায় যে ভাবে গণ টোকাটুকির অভিযোগ উঠেছে, তাতে ভবিষ্যতের ওই চিকিৎসকের উপরে কতটা ভরসা রাখা যাবে সেই প্রশ্নটাই বড়় হয়ে উঠেছে।

বাইরে থেকে কাগজ সরবরাহ করা নয়, কিংবা পরীক্ষার হলে কাগজ লুকিয়ে নিয়ে যাওয়াও নয়। এ একেবারে হাইটেক টোকাটুকি! পরীক্ষার হলে বসেই মোবাইলে গুগ্‌ল সার্চ খুলে পরীক্ষার্থীরা টোকাটুকি করেছেন বলে অভিযোগ।

এর আগেও একাধিক বার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষার হলে সিসিটিভি বিকল করে টোকাটুকির অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু স্বাস্থ্যভবন ও রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বর্ধমানে গত ৩-১৩ জানুয়ারি এমবিবিএস থার্ড প্রফেশনাল পার্ট-২ পরীক্ষা চলাকালীন যে ভাবে শিক্ষক ও গার্ডদের উপস্থিতিতে মোবাইল ব্যবহার করে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ টোকাটুকি হয়েছে, তাতে স্বাস্থ্য কর্তারা স্তম্ভিত। মেডিসিন, গাইনি, পেডিয়াট্রিক্স, সার্জারি, অর্থোপেডিক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে হবু ডাক্তারবাবুরা গণহারে গুগ্‌ল খুলে টুকেছেন বলে অভিযোগ।

স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আশ্রয়ে আর প্রশ্রয়ে যা হওয়ার তাই হয়েছে। শান্তিপূর্ণ টোকাটুকি চলেছে। সবাই মোবাইল খুলে গুগল দেখে টুকছে। এত ভাল সব উত্তর লিখেছে যে কাউকে একশোয় একশোর কম দেওয়া যাবে না!’’ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনার তদন্তে সহ-উপাচার্য কাকলি বসু রায়ের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গড়েছেন। তাতে কাজের কাজ কিছু হবে কি? আশা না দিয়ে ই ভবতোষবাবু বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটির সুপারিশ যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে। তার পর এগজিকিউটিভ কমিটি হয়ে জেনারেল কমিটিতে। তত দিনে দোষীরা পাশ করে প্র্যাকটিস শুরু করে দেবেন।’’

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, প্রতি বছরই সেখানে ‘ফাইনাল’ পরীক্ষার সময় টোকাটুকির অভিযোগ ওঠে। বছর দু’য়েক আগে পরীক্ষার হল-এ ৮টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়। তার পরেও গত বছর টোকাটুকি হয় বলে অভিযোগ। এ বছর তাই বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে সাড়া দিয়েছিল বর্ধমান ও বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ। পরে বাঁকুড়া মেডিক্যাল পিছিয়ে এলেও বর্ধমান মেডিক্যালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মর্যাদার অফিসারদের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

তা হলে? স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেক্ষকেরা তবে কী করলেন? পরীক্ষার হল-এ যাঁরা ডিউটি দিচ্ছিলেন, তাঁরাই বা কী করছিলেন?

স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, তাঁদের পর্যবেক্ষকদের পরীক্ষার হলে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। দু’টি পরীক্ষার পরেই হবু ডাক্তাররা সম্মিলিত ভাবে পরীক্ষা নিয়ামকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করেন, রাজ্যের ১৩টি কলেজের মধ্যে একমাত্র বর্ধমানেই ‘নন মেডিক্যাল’রা পরীক্ষার হল-এ ঢুকছেন। তাঁদের কাজ পরীক্ষা ব্যবস্থার উপর ‘নজরদারি’ করা, অথচ তাঁরা শিক্ষকদের মতো ‘গার্ড’ দিচ্ছেন। ওই চিঠির পাওয়ার পরেই ‘নজরদারি’ ব্যবস্থা ঢিলে হয়ে যায় বলে অভিযোগ। অবাধ টোকাটুকির অভিযোগও আসে।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার বসাকের দাবি, “আপাত দৃষ্টিতে বড় কোনও গোলমাল হয়নি। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরোটাই রেকর্ডিং করা আছে। পরীক্ষা চলাকালীন কী কী ঘটেছে তার পুরোটাই রেকর্ড করা আছে।” অন্যতম পরীক্ষার্থী তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মুস্তাক আলি কিংবা সভাপতি সোহম বেরার অবশ্য দাবি, “টোকাটুকির কোনও ব্যাপারই নেই। বুঝতে পারছি না, এ রকম মিথ্যা অভিযোগ উঠল কেন?”

এখনও একটি প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা বাকি থাকায় কোনও সাধারণ পড়ুয়া মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু পরীক্ষার্থী মানছেন, ‘‘একদম টোকাটুকি হয়নি বলব না। তবে অন্য কলেজের থেকে অনেক কম।”

বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘একদল বলছে টোকাটুকি হয়েছে। আর এক দল বলছে সব গুজব। তদন্ত শেষ হলে বোঝা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mass Copying Medical exam Vardhman Medical College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE