ঘোষণা মতোই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করল রাজ্যের সব বিরোধী দল। কংগ্রেস, বামফ্রন্ট তো বটেই, রাজ্য বিজেপির কোনও প্রতিনিধিও রেড রোডে গেলেন না শুক্রবার। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দুই মন্ত্রী এবং জাতীয় রাজনীতির আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কুশীলব অবশ্য হাজির ছিলেন মমতার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার হতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিংসার খবর আসছে। প্রায় সব জেলায় বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে বাম-কংগ্রেস যৌথ প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যেই রাজ্যপালকে ডেপুটেশন দিয়েছে। ধর্মতলায় অবস্থান বিক্ষোভ করেছে বামেরা। সেই মঞ্চে হাজির হয়ে জোট অক্ষুন্ন রাখার বার্তা দিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও। আক্রমণের মুখে পড়ে বাম-কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছিল, হিংসা না থামলে মমতার শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করা হবে। সেই অবস্থানেই অনড় থেকে শুক্রবার রেড রোড মাড়ালেন না বামফ্রন্ট বা কংগ্রেসের কোনও নেতা।
রাজ্য বিজেপি-ও মমতার শপথ বয়কট করা কথা ঘোষণা করেছিল। কাকদ্বীপে আক্রান্ত বিজেপি কর্মীকে দেখতে গিয়ে মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় তৃণমূলের হামলার শিকার হওয়াতেই বিজেপি এই বয়কটের ঘোষণা করে। রূপার আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে রাজ্য বিজেপি কালীঘাট অভিযানের ডাকও দিয়েছিল। সেই কর্মসূচি ঘিরে হাজরা মরে পুলিশ-বিজেপি খণ্ডযুদ্ধ হয়। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারি দেন, শপথে বিজেপি তো যাবেই না। এমনকী আক্রমণ না থামলে শুক্রবার রেড রোডের অনুষ্ঠানও ভেস্তে দেওয়া হবে। অনুষ্ঠান ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা বিজেপি করেনি। তবে বয়কটের সিদ্ধান্তে তারা অনড় থেকেছে।
রাজ্য বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়েছেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং বাবুল সুপ্রিয়। তাঁরা দু’জন মমতার শপথে যোগ দেন। রাজ্য বিজেপির সাফাই, বিজেপি নেতা হিসেবে নন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা যোগ দিয়েছেন শপথে। বিজেপি দল হিসেবে মমতার শপথকে বয়কটই করেছে বলেই তাঁদের দাবি। সেই বক্তব্যকেই মান্যতা দিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ শুক্রবার বলেছেন, ‘‘জনগণের রায়কে সম্মান জানাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মর্যাদা দিতে দুই মন্ত্রী মমতার শপথে গিয়েছিলেন। বিজেপি মমতার সঙ্গে সংঘর্ষের পথ থেকে সরে আসছে না।’’
কংগ্রেসের অস্বস্তি বিজেপির তুলনায় কিছুটা কম। প্রদেশ কংগ্রেস বামেদের সুরে সুর মিলিয়ে মমতার শপথ বয়কটের ঘোষণা করলেও, এআইসিসি বয়কটে রাজি ছিল না। বৃহস্পতিবার শোনা যায়, সনিয়া গাঁধীর শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে অম্বিকা সোনি মমতার শপথে আসবেন। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর তীব্র আপত্তিতে তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। সনিয়া মমতার শপথে কোনও প্রতিনিধি পাঠাননি। তবে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী শুক্রবার মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাহুলের টুইট, ‘‘দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য মমতাজিকে অভিনন্দন। তাঁকে এবং ক্যাবিনেটকে নতুন মেয়াদের জন্য আমার শুভেচ্ছা।’’
বিরোধীদের এই বয়কটের সিদ্ধান্ত অবশ্য বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক সৌজন্য লঙ্ঘন করেছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলগুলি, বলছে একটি শিবির। জনসাধারাণের রায়কে সম্মান জানাতে এবং রাজনৈতিক সৌজন্যের খাতিরেই শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া উচিত ছিল বিরোধীদের, বলছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। কিন্তু বাম-কংগ্রেস এবং বিজেপির দাবি, গণতান্ত্রিক সৌজন্য লঙ্ঘন করেছে তৃণমূলই। বিপুল জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরও যে ভাবে বিরোধীদের উপর আক্রমণ হচ্ছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে বিরোধীরা মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy