ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে বিতর্কের আবহে এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এসে ফের সরব হলেন রাজনীতিবিদ যোগেন্দ্র যাদব ও অর্থনীতিবিদ পরকালা প্রভাকরেরা। বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে যোগেন্দ্রের দাবি, এসআইআর-এর মূল লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ। পাল্টা সরব হয়েছে বিজেপি-ও।
দুই সংগঠন ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’ ও ‘দ্য এডুকেশনিস্টস ফোরাম’ আয়োজিত ‘এসআইআর: কার্যত নাগরিকের ভোটাধিকারের উপরে আঘাত’ শীর্ষক সভায় যোগ দিয়ে শনিবার যোগেন্দ্র দাবি করেছেন, “বিহার ছিল এসআইআর-এর পরীক্ষাগার। কিন্তু এটা মূলত পশ্চিমবঙ্গের জন্য তৈরি হয়েছে। বিজেপি ও কমিশন ভোটার তালিকার সংশোধন, শুদ্ধিকরণ, অনুপ্রবেশকারীদের বার করার কথা বললেও, এসআইআর আসলে ভোটবন্দির কৌশল।” যোগেন্দ্রের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬-এর ১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা হওয়ার কথা ৭ কোটি ৬৮ লক্ষ ৭০ হাজার। অন্য রাজ্যে থাকা এখানকার লোকজনকে এর মধ্যে ধরা হয়নি। এসআইআর শুরুর দিন অর্থাৎ ৪ নভেম্বর কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে ভোটার ৭ কোটি ৬৭ লক্ষ ৫০ হাজার। যোগেন্দ্রের দাবি, “দু’টি সংখ্যার ফারাক পশ্চিমবঙ্গে খুব কম। ফলে, পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা এক কোটি নাম বাদ যাবে বলছেন, তাঁরা কোন ভিত্তিতে বলছেন? বিহারে ওই ফারাকটা ছিল প্রায় ৩০ লক্ষ।”
তবে বিজেপি-সহ বিভিন্ন দল সূত্রে বক্তব্য, রাজ্যের ভোটার-তালিকায় যে সব নাম এখন আছে, তার মধ্যেই রয়েছে ভুয়ো, মৃত ভোটার। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল বলেছেন, “বিহারে এসআইআর শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তা হচ্ছে। আসলে এখন যাঁরা নানা কথা বলছেন, তাঁরা নিজেদের কৃতকর্মকে ঢাকতে চাইছেন।”
অর্থনীতিবিদ পরকলাও এসআইআর-এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাঁর দাবি, “এসআইআর রক্তপাতহীন রাজনৈতিক গণহত্যা। মানুষের ভোটদানের রাজনৈতিক অধিকারকে হরণ করতেই এটা করা হয়েছে। সরকার ভোটারকে বেছে নিচ্ছে। বিহারে কত জন অনুপ্রবেশকারীকে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেই হিসাব কমিশন দেয়নি কেন?” রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র, অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর নাসরিনেরাও বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ এসআইআর-এর বিরোধিতা করেছেন। যদিও বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রার বক্তব্য, “বাম ও তৃণমূল আমলে বাংলাদেশি, অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গাদের এই রাজ্যে আনা হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়ের মুখের গ্রাস কেড়ে, আমাদেরই করের টাকায় তাঁদের রেশন, ‘কন্যাশ্রী’, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ দেওয়া হয়েছে। এটাই রক্তপাতহীন গণহত্যা।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)