Advertisement
E-Paper

বড় শিল্প নিয়ে শুধুই নীরবতা, হতাশ বণিকরা

নোট বাতিলের জেরে ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য কিছু কর-ছাড়। কিন্তু বড় শিল্প কিংবা সার্বিক ভাবে রাজ্যের শিল্পায়নের প্রসঙ্গে শুধুই নীরবতা।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩০

নোট বাতিলের জেরে ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য কিছু কর-ছাড়। কিন্তু বড় শিল্প কিংবা সার্বিক ভাবে রাজ্যের শিল্পায়নের প্রসঙ্গে শুধুই নীরবতা। আগামী দিনে রাজ্যের আয় বৃদ্ধি কিংবা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি নিয়েই যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শুক্রবার রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর বাজেটে বিভিন্ন প্রস্তাব যেমন শিল্প মহলের তালি কুড়িয়েছে, তেমনই শিল্পায়নের প্রসঙ্গে সেই নীরবতা দেখে তৈরি করেছে সংশয়ও।

বাজেটে রাজ্যের ‘মানবিক’ দৃষ্টিভঙ্গীর পাশাপাশি শিল্প মহলের জন্য কিছু প্রস্তাব রেখেছেন অমিতবাবু। যেমন ভ্যাট-এর নথিভুক্তির ন্যূনতম সীমা ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হচ্ছে। ভ্যাট-এর অডিট রিপোর্ট-ও আর দিতে হবে না। ভ্যাট এর ‘রিফান্ড’-এর বকেয়া ‘কেস’-গুলি ডিসেম্বরের মধ্যে মিটিয়ে ফেলবে রাজ্য। তেমনই বিভিন্ন কর সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে গত কয়েক বছরের মতোই ই-গভর্ন্যান্স-এর উপর জোর দেওয়ার কথা রয়েছে বাজেটে।

স্বাভাবিক ভাবেই খুশি ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংগঠন ফ্যাকসি ও ফসমি। ফ্যাকসি-র প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহ ও ফসমির প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের মতে, ভ্যাট-এ ছাড় পেলে ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলির তৈরি পণ্য কম দামের কারণে প্রতিযোগিতার বাজারে কিছুটা সুবিধা পাবে।

এই সব প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে সিআইআই, ফিকি, বেঙ্গল চেম্বার, ভারত চেম্বার, বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার, ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন, এমসিসি চেম্বারের মতো বণিকসভাগুলিও। একই সঙ্গে শিল্প মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, বড় শিল্প নিয়ে বাজেটে কার্যত কিছুই না-থাকা নিয়ে। ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রাকেশ শাহের বক্তব্য, বড় শিল্পের উপস্থিতি ও তাদের সঙ্গে ছোট ও মাঝারি শিল্পের যোগসূত্র তৈরি না-হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না-হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

বস্তুত, রাজ্য সরকার নানা সুবিধা দেওয়ার দাবি করলেও পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক কালে বড় লগ্নি আসেনি বললেই চলে। একটি বণিকসভার এক প্রাক্তন কর্তা বলেন, ‘‘বাজেটে বড় শিল্পকে টানার কোনও প্রস্তাবই নেই। এমনকী, একটি অর্থবর্ষে রাজ্যে লগ্নি প্রস্তাবের হিসেব-সহ যে সার্বিক চিত্র বাজেটে দেওয়ার রীতি রয়েছে, তা-ও অমিল। পাশাপাশি যে কর্মসংস্থানের কথা বলা হচ্ছে, তা কোথায় হয়েছে, তারও কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।’’

রাজ্যে ব্যবসা না বাড়লে তার প্রভাব রাজ্যের আয়ের উপরেও পড়ার আশঙ্কা শিল্প মহলের একাংশের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্প কর্তার বক্তব্য, অর্থমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। তাই রাজ্যে শিল্পায়নে গতি না-এলে আগামী দিনে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি নিয়েই সংশয় থাকে। আর শিল্পায়নের চাকায় গতি জোগানোর জন্য তেমন আশার আলো মেলেনি বাজেটে।

যদিও সংশ্লিষ্ট মহলের কেউ কেউ মনে করছেন, সদ্য হওয়া ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’-এই রাজ্যের সার্বিক নীতির প্রতিফলন ঘটেছে। সেখানেই আগের বছরের প্রস্তাবিত লগ্নির ৪০ শতাংশ রূপায়িত হওয়ার দাবি করে এ বারে ২.৫০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি লগ্নি প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন অমিতবাবু। তা ছাড়া সাধারণ ভাবে বাম আমল থেকেই বাণিজ্য কর, ছোট ও মাঝারি শিল্পের মতো ক্ষেত্রগুলিই প্রাধান্য পেয়েছে বাজেটে। বড় শিল্পের জন্য বাজেটে আলাদা করে খুব বেশি নজর কখনওই দেওয়া হয়নি। লগ্নি টানতে দেশের অন্য রাজ্যগুলি যখন একে অপরের সঙ্গে তুমুল প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ, অমিত মিত্রের বাজেটে অবশ্য খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না শিল্প মহলের অনেকেই।

State Budget Amit Mitra Heavy Industries
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy