Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বাংলার আরও এক আয়েশার খোঁজ দিল্লিতে

হাতে-পিঠে, কোমরে দগদগে লাল দাগ। কোথাও কোথাও কালশিটে পড়ে গিয়েছে। ফুলে রয়েছে শরীরের কয়েকটি জায়গা। মার খেতে খেতে আর দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হতে হতে শরীরে আর কোনও শক্তিই অবশিষ্ট নেই। মন পুরোপুরি বিধ্বস্ত।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০৪:৩৪
Share: Save:

হাতে-পিঠে, কোমরে দগদগে লাল দাগ। কোথাও কোথাও কালশিটে পড়ে গিয়েছে। ফুলে রয়েছে শরীরের কয়েকটি জায়গা। মার খেতে খেতে আর দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হতে হতে শরীরে আর কোনও শক্তিই অবশিষ্ট নেই। মন পুরোপুরি বিধ্বস্ত।

শনিবার দক্ষিণ দিল্লির গোবিন্দপুরী থেকে এই অবস্থাতেই উদ্ধার করা হল এ রাজ্যের কিশোরী দেবী (নামবদল)-কে। তার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং এলাকায়। গ্রেফতার হয়েছে মূল অভিযুক্ত লিটু মিত্র নামে এক যুবক। বছর দেড়েক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনারই ডায়মন্ড হারবার থেকে পাচার হয়ে যাওয়া এক কিশোরীর খোঁজ মিলেছিল রাজধানীতে। লাগাতার ধর্ষণের পরে এইচআইভি-তে আক্রান্ত সেই আয়েশা (পরিবর্তিত নাম) এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। তার পরে ওই জেলার আরও এক আয়েশাকে উদ্ধারের ঘটনাকে ঘিরে প্রশ্ন উঠছে, বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মেয়েদেরই কেন নিশানা করছে পাচারকারীরা? তাদের রুখতে জেলা বা রাজ্য প্রশাসন কি আদৌ তৎপর? কী করছে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর?

অসুস্থ দেবী জানিয়েছে, ২০১৩ সালে ভাল কাজ দেওয়ার নাম করে লিটু তাকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কাজ দেওয়ার বদলে সে তাকে ধর্ষণ করে এবং সেই ছবি মোবাইলে তুলে রাখে। পরে সেই ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেলিং করতে থাকে। নিজে রোজ ধর্ষণের পাশাপাশি দেবীকে সে যৌন ব্যবসায় নামায়। প্রতিবাদ করলেই জুটত মার। গুরুতর অসুস্থ, আহত অবস্থাতেও ওই কিশোরীকে দিয়ে যৌন ব্যবসা করানো হতো।

আরও পড়ুন: রক্ত সঙ্কটে কলকাতারও ভরসা কাঁথি

শনিবারেও অত্যাচারের পরে দেবীকে বেঁধে রেখে বেরিয়ে গিয়েছিল লিটু। সেই সুযোগে কোনও রকমে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়েটি স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে চায়। এলাকার লোকজনই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও পুলিশকে খবর দেন। দেবীকে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে দিল্লির এক হোমে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে একই ভাবে উদ্ধার হয়েছিল মগরাহাটের আয়েশা। তাকে গাজিয়াবাদ, দিল্লি-সহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে জোর করে যৌন ব্যবসায় নামিয়েছিল বাবু ও আসলাম নামে দু’টি লোক।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে পরের পর কিশোরী পাচারের ঘটনায় জেলা পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। কয়েকটি সংস্থাকে নিয়ে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করে বিভিন্ন স্কুলে সচেতনতা বাড়িয়ে চলেছে তারা। তাতে কিছুটা হলেও পাচার কমেছে বলে দাবি পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীদের। তবে রেল পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে হাওড়া-শিয়ালদহ থেকে কী ভাবে মেয়েদের ট্রেনে পাচার করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন দিল্লির উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঋষিকান্ত। আর সচেতনতা বৃদ্ধির নমুনা হিসেবে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের কথা বলছেন নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ayesha Delhi Human Trafficking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE