E-Paper

শান্তিনিকেতনে জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ি, চর্চায় এ বার ‘দোতারা’

শান্তিনিকেতনেরই এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ বছর আগে রতনপল্লিতে প্রায় ১০ কাঠা জায়গার উপরে থাকা বাড়িটি আনুমানিক দেড় কোটি টাকা দিয়ে জ্যোতিপ্রিয় কিনেছিলেন তাঁরই এক নিকটাত্মীয়ের নামে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:২৩
শান্তিনিকেতনের রতনপল্লিতে এই বাড়িটিই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বলে অভিযোগ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

শান্তিনিকেতনের রতনপল্লিতে এই বাড়িটিই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বলে অভিযোগ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

বালু-কাণ্ডেও শান্তিনিকেতন যোগ!

নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে চর্চায় এসেছিল শান্তিনিকেতনের ফুলডাঙায় ‘অপা’ বাড়ি। যে বাড়ি কেনা হয়েছিল অর্পিতার নামে। এ বারে রেশন-দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারির পরে শিরোনামে শান্তিনিকেতনের আর এক বাড়ি। নাম যার ‘দোতারা’।

রতনপল্লির এই পেল্লায় বাড়িটি শুক্রবার সকাল থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে। ঘটনাচক্রে ‘দোতারা’ নিয়ে যখন এত চর্চা, তখন রতনপল্লি থেকে কিছু দূরে কবিগুরু হস্তশিল্প উন্নয়ন সমিতি মার্কেটের সামনে, বিশ্বভারতীর ফলক-বিতর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি নিয়ে মঞ্চ বেঁধে অবস্থানে বসেছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তিনিকেতনেরই এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ বছর আগে রতনপল্লিতে প্রায় ১০ কাঠা জায়গার উপরে থাকা বাড়িটি আনুমানিক দেড় কোটি টাকা দিয়ে জ্যোতিপ্রিয় কিনেছিলেন তাঁরই এক নিকটাত্মীয়ের নামে। এলাকাবাসীদের দাবি, বিপুল টাকা খরচ করে নতুন ধাঁচে দোতলা বাড়িটিকে একটি বাংলো বাড়ির রূপ দেওয়া হয়। শুধু বাড়িটি নতুন করে রং করতেই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে এলাকা সূত্রে জানা যাচ্ছে। সে বাড়ির নামা রাখা হয় ‘দোতারা’। বর্তমানে ওই বাড়ির বাজার মূল্য ছয়-সাত কোটি টাকা বলে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর। বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সঞ্জয় দাস বলেন, “পুজোর ছুটি চলছে। খোঁজ না নিয়ে বলা সম্ভব নয়, বাড়িটি কার এবং কী অবস্থায় রয়েছে।”

রতনপল্লির ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য দাবি, এই বাড়িটিতে মাঝেমধ্যে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আসতেন। তবে অন্যান্য সময় তাঁর মেয়ে ও পরিচিতেরা আসা যাওয়া করতেন। স্থানীয় বাসিন্দা ফাল্গুনী মণ্ডল, রবি লোহার বলেন, “ওঁকে এখানে খুব বেশি আসতে দেখিনি। তবে, পরিবারের লোকজন মাঝমধ্যেই এখানে এসে থাকতেন। মাসখানেক আগেও তাঁরা এসেছিলেন।’’ তাঁরা জানান, মাঝেমধ্যে বড় গাড়িও আসতে দেখেছেন। বাড়িটির দেখাশোনার জন্য কেয়ারটেকার আছেন। যদিও শুক্রবার ‘দোতারা’য় গিয়ে কেয়ারটেকারের দেখা মেলেনি।

বিরোধীদের দাবি, শুধু পার্থ বা বালু নন, বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকায় শাসকদলের আরও নেতা-মন্ত্রীর বাড়ি ও জমি আছে। তবে, বাড়ি-জমির অধিকাংশই তাঁদের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের নামে রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর। বীরভূম জেলারও কিছু তৃণমূল নেতার নামে ও বেনামে হোটেল-রিসর্ট রয়েছে বলে অভিযোগ। জেলার এক দু’জন বিজেপি নেতার নামও রয়েছে শান্তিনিকেতন-বোলপুরের জমি নিয়ে।

কোটি টাকা দিয়ে বাড়ি কী ভাবে কিনলেন বনমন্ত্রী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষের কটাক্ষ, “আগে শান্তিনিকেতনে মানুষ আসতেন রবীন্দ্রনাথের জন্য। আর এখন লোকে আসবে অপা-দোতারা বাড়ি দেখতে। এটাই সবচেয়ে লজ্জার!” বিজেপি-র বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, “গরু-কয়লা-বালি-বাড়ি-জমি থেকে শুরু করে একে একে সব বেরোবে।”

পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরে বামুনপাড়া পঞ্চায়েতের গ্রামে রয়েছে জ্যোতিপ্রিয়ের আর এক বাড়ি। ফলকে লেখা, ‘নবশক্তি ভবন’। তার সঙ্গেই জ্বলজ্বল করছে প্রয়াত পিতা শক্তিপদ মল্লিক ও মাতা নবনলিনী মল্লিকের নাম। গ্রামবাসীরা জানান, বছর আষ্টেক আগে পৈতৃক ভিটার পাশে তিনি এই ভবনটি তৈরি করান। এই গ্রামে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পরিবারের নামে প্রায় ৪০ বিঘা জমিজমা ছিল। এখন পনেরো বিঘা মতো রয়েছে। বছরে দু’এক বার আসাযাওয়া করতেন জ্যোতিপ্রিয়। পারিবারিক দুর্গাপুজোয় নবমীর দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও আসতেন তিনি। যদিও এ বার আসেননি তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jyotipriya Mallick santiniketan TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy