Advertisement
E-Paper

নিজেরই বেচা বন্দুক-বুলেটে বিদ্ধ বাবু সেন

তপস্যায় তুষ্ট হয়ে অসুর-দৈত্যদের মারণাস্ত্র দান করে দেবতাদের বিপাকে পড়ার কথা আছে পুরাণে। মধ্যমগ্রামের জোড়া খুনের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, তপস্যা নয়, নিতান্ত কাঞ্চনমূল্যের বিনিময়ে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করে তারই বুলেটের বলি হয়েছে বাবু সেন। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, রীতিমতো মুঙ্গেরি কারিগর রেখে দুষ্কৃতীদের জন্য রিভলভার বানাত সে। নিয়তির এমনই পরিহাস যে, তার কাছ থেকে রিভলভার কিনে তাকেই ঝাঁঝরা করে দিল দুষ্কৃতীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০৩:৩৮

তপস্যায় তুষ্ট হয়ে অসুর-দৈত্যদের মারণাস্ত্র দান করে দেবতাদের বিপাকে পড়ার কথা আছে পুরাণে। মধ্যমগ্রামের জোড়া খুনের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, তপস্যা নয়, নিতান্ত কাঞ্চনমূল্যের বিনিময়ে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করে তারই বুলেটের বলি হয়েছে বাবু সেন।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, রীতিমতো মুঙ্গেরি কারিগর রেখে দুষ্কৃতীদের জন্য রিভলভার বানাত সে। নিয়তির এমনই পরিহাস যে, তার কাছ থেকে রিভলভার কিনে তাকেই ঝাঁঝরা করে দিল দুষ্কৃতীরা।

বাবু সেন ওরফে তারক ঘোষ এবং তার সঙ্গী নিতাই পাল ওরফে নুঙ্কাইকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বাবু মণ্ডলের এক শাগরেদ সুমন চক্রবর্তীকে সোমবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবারের এই জোড়া খুনের ঘটনায় এ-পর্যন্ত ধরা পড়ল চার জন। ধৃতদের জেরা করে এ দিন ছ’টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ছয় রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ওই আগ্নেয়াস্ত্রগুলি দিয়েই খুন করা হয়েছে বলে ধৃতেরা স্বীকার করেছে। অস্ত্রগুলি বাবু সেনই তাদের বিক্রি করেছিল বলে জানা গিয়েছে।’’

বাবু সেন প্রথম দিকে বিহারের মুঙ্গের থেকে অস্ত্র কিনে এনে এ রাজ্যে বিক্রি করত বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। পরে নিজেই মধ্যমগ্রামের বাদুতে আস্ত একটি অস্ত্র কারখানা ফেঁদে বসে সে। সেখানে তৈরি অস্ত্র মোটা দামে কিনত অপরাধীরা। পুলিশ জানিয়েছে, একাধিক খুনে অভিযুক্ত পদ ওরফে প্রদীপ দেবও তার কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কিনত। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘পদকে জেরা করেই তার ডেরা থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল, পাঁচটি ওয়ানশটার এবং কিছু কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।’’

তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ধৃতেরা কবুল করেছে, ওই সব অস্ত্রশস্ত্র বাবু সেনের কারখানায় তৈরি। অস্ত্র দেখেই দাগি অপরাধীরা বলে দিতে পারে, সেটি কোন কারখানায় তৈরি। বস্তুত, অস্ত্র চেনা আর কেনার বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই বাবুর সঙ্গে পদ-র বিরোধের সূত্রপাত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, পদ-র বিরুদ্ধ গোষ্ঠী হল ঢাকাই গৌতম। দু’জনের বিরোধ এতটা চরমে উঠেছিল যে, তারা পরস্পরকে খুনের চেষ্টা চালাচ্ছিল। ২০১১ সালের ২১ অগস্ট পদ-র শাগরেদ-বাহিনী মধ্যমগ্রামের বঙ্কিমপল্লিতে ঢাকাই গৌতমের অফিসে চড়াও হয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পালিয়ে বাঁচে গৌতম। ওই অফিস থেকে কয়েকটি রিভলভার ও কার্তুজ লুঠ করে পদ। লুঠের অস্ত্রশস্ত্র দেখে সে বুঝতে পারে, সেগুলি বাবু সেনের কারখানাতেই তৈরি। তার পরেই সে বাবু সেনের কাছে জানতে চায়, কেন তার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীকে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে? তদন্তকারীদের জেরার মুখে পদ জানিয়েছে, তার প্রশ্নের জবাবে বাবু জানিয়ে দেয়, অস্ত্র তৈরি করে বিক্রি করাটাই তার ব্যবসা। ওই অস্ত্র কে কিনছে, সেটা দেখা তার কাজ নয়। তখন থেকেই বাবুর উপরে খাপ্পা হয়ে ওঠে পদ।

পদ-র সঙ্গে বাবু সেনের অস্ত্র-কাজিয়ার মধ্যেই জমি নিয়ে বাবু মণ্ডলের সঙ্গেও সেন-বাবুর বিরোধ চরমে ওঠে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, বাবু সেনকে সরাতে জোট বাঁধে বাবু মণ্ডল এবং পদ। ঝগড়া মেটানোর প্রস্তাব দিয়ে বাবু সেনকে ডাকা হয়। ফেরার পথে উড়ালপুলে খুন হয় সেন-বাবু এবং তার সঙ্গী। হত্যাকাণ্ডের মূল চক্রী বলে অভিযুক্ত বাবু মণ্ডল বা পুরো ঘটনায় লিঙ্কম্যান বলে অভিযুক্ত বাবু ঘোষ এখনও ধরা পড়েনি।

babu sen gun madhyamgram murder case police office
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy