Advertisement
E-Paper

‘ওকে অ্যারেস্ট করিয়ে দে, গাঁজা কেস...’, অনুব্রতর ভিডিয়ো ক্লিপ ঘিরে তোলপাড় রাজ্য

আউশগ্রামের এক তৃণমূল কর্মীকে (যিনি এখন বিক্ষুদ্ধ) এবং ওই এলাকারই এক মহিলাকে ‘গাঁজার কেস’ দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন অনুব্রত— এমনই দেখা গিয়েছে ভিডিয়োটিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:৫৮
তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের একটি ভিডিয়ো ক্লিপিং ঘিরে। ফাইল চিত্র।

তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের একটি ভিডিয়ো ক্লিপিং ঘিরে। ফাইল চিত্র।

ফের বিতর্কে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে একটি ভিডিয়ো ক্লিপিং ঘিরে। আউশগ্রামের এক তৃণমূল কর্মীকে (যিনি এখন বিক্ষুদ্ধ) এবং ওই এলাকারই এক মহিলাকে ‘গাঁজার কেস’ দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন অনুব্রত— এমনই দেখা গিয়েছে ভিডিয়োটিতে। রবিবারই বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। সেই বৈঠকেই এই কথোপকথন হয়েছে বলে অভিযোগ। বিরোধী দলকে এবং নিজের দলের বিক্ষুব্ধ অংশকে পুলিশ দিয়ে কী ভাবে ‘শায়েস্তা’ করেন অনুব্রত, এ বার তা হাতেনাতে প্রমাণ হয়ে গেল, বলছেন বিরোধীরা। জেলা তৃণমূল অবশ্য প্রশ্ন তুলছে ভিডিয়োর সত্যতা নিয়েই।

বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয়ে এ দিন বৈঠকে বসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, অনুব্রতর দুপাশে বসে রয়েছেন রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ। সামনের দিকে তাকিয়ে অনুব্রত মণ্ডল কারও উদ্দেশে বলছেন, ‘‘ওই ফাইভ ম্যান কমিটি থেকে একজনকে বাদ দিলাম না। ওই ছেলেটিকে। ওকে অ্যারেস্ট করিয়ে দে। ওই যে মেয়েটার কী নাম? মোটা করে মেয়েটা, কাপড়ের দোকান আছে। ...সঙ্গীতা(কেউ মনে করিয়ে দেওয়ার পরে)। ও বিজেপি করে, ওকেও অ্যারেস্ট করিয়ে দে গাঁজা কেসে।’’ আর তার পরেই পাশের সিটে বসে থাকা অভিজিৎ সিংহকে বলেন ‘‘আউশগ্রামের আইসিকে ধর তো। বর্ধমানের এসপিকেও ফোন কর।’’ সামনের দিকে অনুব্রত ফের প্রশ্ন করেন ‘‘ওঁদের কন্ট্রোল করতে পারবি কী? কন্ট্রোল করতে পারলে বল, না হলে অ্যারেস্ট করিয়ে দেবো। কে আছিস রে? পারবি কন্ট্রোল করতে?’’ সামনে থেকে উত্তর আসে ‘হ্যাঁ, চেষ্টা করছি।’ তাতে ফের মেজাজ হারিয়ে অনুব্রতর উত্তর ‘‘ও সব চেষ্টা চলবে না। হ্যাঁ কি না? উত্তর চাই।’’

যে ‘ফাইভ ম্যান কমিটি’র কথা বলা হচ্ছে, সেটি আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র এলাকার দলীয় কমিটি বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। যাঁর বাদ পড়ার কথা বলা হচ্ছে, তাঁর নাম উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, খবর স্থানীয় সূত্রের। এই উজ্জ্বল দীর্ঘ দিনের তৃণমূল কর্মী। কিন্তু এখন তিনি বিক্ষুব্ধ বলে খবর। তাঁকেই অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার করাতে বলছেন বলে অভিযোগ। সঙ্গীতা নামে এক মহিলাকেও গ্রেফতার করানোর কথা বলতে দেখা গিয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে। তিনি বিজেপি করছেন বলে তাঁকে গ্রেফতার করাতে হবে, এমনই বলতে শোনা গিয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতিকে।

দেখুন ভিডিয়ো

যে সূত্র থেকে ভিডিয়োটি ছড়িয়েছে, সেই সূত্র জানাচ্ছে, যাঁর দিকে তাকিয়ে অনুব্রত মণ্ডল কথাগুলো বলছিলেন, তিনি আউশগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থানদার। প্রথমে গ্রেফতার করানোর কথা বলেও অনুব্রত পরে ফের অভেদানন্দর কাছে জানতে চাইছেন, তিনি উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বা সঙ্গীতাদের ‘সামলাতে’ পারবেন কি না? যদি ‘সামলাতে’ না পারেন, তা হলে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়া হবে, ‘গাঁজার কেস’ দেওয়া হবে। এমনই বলছেন অনুব্রত, দেখা গিয়েছে ভিডিয়োয়। আউশগ্রামের আইসি এবং বর্ধমানের পুলিশ সুপারকে ফোন করার নির্দেশ দিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। আনন্দবাজার ডিজিটাল পক্ষে অবশ্য ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন: ‘রাস্তায় অস্ত্র রেখে যান, পুলিশ নিয়ে যাবে’, আমডাঙাকে আহ্বান জ্যোতিপ্রিয়র

এই ভিডিয়ো ক্লিপ সম্পর্কে জানতে ফোন করা হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণে তিনি নিজে ফোন ধরতে পারেননি। ফোন ধরেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘ওটা আমাদের দলীয় বৈঠক ছিল। কোনও জনসভা নয়। সেখানে কী কথোপকথন হয়েছে, তা নিয়ে বাইরে মন্তব্য করব না। তবে ভিডিয়ো আজকাল নানা ভাবে তৈরি করানো যায়। সবাই সেটা জানেন। অনুব্রত মণ্ডলের মুখে কোনও বিতর্কিত কথা বসিয়ে দেওয়া গেলে তো আর কথাই নেই। এ ক্ষেত্রেও সে রকমই কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ভিডিয়ো একটা ছড়ানো হয়েছে বলে শুনছি। কিন্তু আমরা তো দেখিনি। না দেখে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।’’

এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাতে বলেন, ‘‘ভিডিয়ো দেখিনি, সত্য কি না জানি না। মন্তব্য করতে পারব না।’’

আরও পড়ুন: আমার কোনও বিপদ হলে দায়ী অনুব্রত: ভিডিয়ো বার্তা সঙ্গীতার

বিরোধীরা অবশ্য ওই ভিডিয়োকে হাতিয়ার করে ‘পুলিশ দিয়ে শায়েস্তা করার তৃণমূল নীতি’র বিরুদ্ধেই সরব হয়েছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘‘শুধু অনুব্রতর বীরভূমে নয়, সব জায়গাতেই এরকম হচ্ছে। এ বার যদি একই ভাবে বিজেপি বলে, সব কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে অনুব্রত সহ অন্য তৃণমূল নেতাদের পিছনে লাগিয়ে দেওয়া হবে, তা হলে ওঁরা বাঁচতে পারবেন তো? এই ঘটনা আর একবার প্রমাণ করল, পুলিশকে তৃণমূল পুরোপুরি দলদাসে পরিণত করেছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘বিরোধী কোনও স্বর রাজ্যে রাখতে দেওয়া হবে না, এটা আবার স্পষ্ট হল। দলীয় নেতৃত্বের সুনজরে না থাকলে তৃণমূল কর্মীরও রেহাই নেই। মুখ্যমন্ত্রী হয় এর পরে অনুব্রত এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আর না পারলে পুলিশমন্ত্রীর পদ ছাড়ুন!’’

বীরভূমের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানের তিন বিধানসভা কেন্দ্র, মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম ও কেতুগ্রামের দায়িত্বেও রয়েছেন অনুব্রত। তৃণমূল সূত্রের খবর, আউশগ্রামের বিল্বগ্রাম অঞ্চলে দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব সামাল দিতে পাঁচ জনের কমিটি গড়ে দিয়েছেন অনুব্রত। সেই কমিটির এক জনকে (আড়াই মাস আগে নিহত এক তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ) বাদ দেওয়া হয়েছে। ভিডিয়োয় অন্য যে মহিলার কথা বলা হয়েছে, তিনি ওই অঞ্চলে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত। তাঁর পোশাকের দোকান আছে বনপাশ স্টেশনের কাছে। ওই মহিলা এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘আমি কখনও কোনও দল করিনি। মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী হিসাবে পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলাম। সে জন্য দেড় বছর ধরে আমাকে নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। গ্রেফতার করানোর হুমকি কেন দেওয়া হল, জানি না।’’

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

Anubrata Mandal TMC BJP অনুব্রত মণ্ডল Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy