Advertisement
E-Paper

কয়েক কোটি তছরুপে অভিযুক্ত আরাবুল

এ বার পাওয়ার গ্রিড নির্মাণের কয়েক কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠল আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এবং সেই অভিযোগ তুললেন ভাঙড়েরই একটি সংস্থার এক অংশীদার। যে সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের সাব-স্টেশনের একাংশ তৈরির বরাত পেয়েছিল অন্য একটি ঠিকাদার সংস্থার কাছ থেকে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৫

এ বার পাওয়ার গ্রিড নির্মাণের কয়েক কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠল আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এবং সেই অভিযোগ তুললেন ভাঙড়েরই একটি সংস্থার এক অংশীদার। যে সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের সাব-স্টেশনের একাংশ তৈরির বরাত পেয়েছিল অন্য একটি ঠিকাদার সংস্থার কাছ থেকে।

ভাঙড়-কাণ্ডের তদন্তে নেমে রাজ্য পুলিশের কর্তারা দাবি করছিলেন, পাওয়ার গ্রিড বিরোধিতা সামনে থাকলেও গ্রামবাসীদের আন্দোলনের আসল কারণ, আরাবুল বাহিনীর কৃষিজমি ‘দখলের’ বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের জমা ক্ষোভ। এ সংক্রান্ত তথ্যও তাঁদের হাতে আসছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। এই পরিস্থিতিতে আরাবুলের বিরুদ্ধে ভাঙড়ের ওই সংস্থার স্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক অংশীদার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন টাকা তছরুপের অভিযোগ তুলে।

হাইকোর্টে স্বরূপবাবুর অভিযোগ, সাব-স্টেশন তৈরির জন্য রাজ্য সরকার ভাঙড়ে যে ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল, সেই জমিতে মাটি ফেলা এবং নির্মাণকাজের জন্য ২০১৫ সালে ১০ কোটি টাকার বরাত এসেছিল। কিন্তু তাঁদের সংস্থার থেকে জোর করে আরাবুলের এক আত্মীয়ের নামে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নেওয়া হয়। তার কিছু দিন পরেই দেখা যায়, আরাবুল ও তাঁর ছেলে হাকিবুল ইসলামের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে বরাতের কয়েক কোটি টাকা! আত্মীয়ের মাধ্যমে আরাবুলই টাকা তছরুপ করেন বলে অভিযোগ।

মামলার শুনানি শুরু হয়নি। কিন্তু এত দিন পরে স্বরূপবাবু কেন হাইকোর্টে গেলেন? স্বরূপবাবুর আইনজীবী দেবব্রত ধর বলেন, ‘‘আমার মক্কেল ঘটনার পর পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন। পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। আন্দোলনের জেরে মক্কেল কিছুটা সাহস পেয়েছেন। তাই এখন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ওই ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধ না-থাকার কারণেই থানা হয়ত অভিযোগ নেয়নি।

স্বরূপবাবু বলেন, ‘‘জোর করেই আরাবুল নিজের আত্মীয়ের নামে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নিয়েছিলেন। তারপর আমাদের হাতে আর কিছু ছিল না। আমাদের সংস্থার বাকি দুই অংশীদারকে নিজের দিকে টেনে নিয়েছিলেন আরাবুল। তার পরে আমাকে সংস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও শুরু করেন।’’ স্বরূপবাবুর ক্ষোভ, ‘‘আমার নামেই বরাত এসেছিল। কাজ প্রায় শেষের পথে। কিন্তু এখনও এক টাকাও মুনাফা দেওয়া হয়নি।’’ ভাঙড়-কাণ্ডে তিনি জড়িত নন বলে আগে বারবার দাবি করেছেন আরাবুল ইসলাম। এ বার? তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ হয়েছে। তদন্তও হোক। আর কী বলব!’’ স্বরূপবাবু যে অভিযোগ তুলেছেন, সে সংক্রান্ত কিছু তথ্য ইতিমধ্যেই তাঁদের হাতে এসেছে বলে দাবি করেছেন ভাঙড়-কাণ্ডের তদন্তকারীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, সাব-স্টেশন নির্মাণের জন্য মূল ঠিকাদার সংস্থা রড ও সিমেন্ট সরবরাহ করেছিল। তারা অংশীদারি সংস্থাকে ১০ কোটি টাকা দিয়েছিল শুধু সাব-স্টেশনের অফিস এবং ভিতরের রাস্তা তৈরি এবং শ্রমিকদের মজুরির জন্য।

কাগজে-কলমে ওই অংশীদারি সংস্থার সঙ্গে আরাবুল বা তাঁর ছেলের সম্পর্ক ছিল না। অথচ, কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক কোটি টাকা আরাবুল ও তাঁর ছেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। এক পেট্রোল পাম্প মালিকের অ্যাকাউন্টেও টাকা গিয়েছে। পাম্প-মালিকের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

ভাঙড়-কাণ্ডে মোট ১৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। তিনটির তদন্ত করছে সিআইডি। এক তদন্তকারীর দাবি, ‘‘দেখা গিয়েছে, পাওয়ার গ্রিডের সব কাজের লভ্যাংশ মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকা আরাবুলের পরিবারেরই হস্তগত হয়। আরাবুলের ভাই একাধিক লোকের থেকে মাটি নিয়ে গ্রিডের নিচু জমি ভরাট করলেও দাম মেটায়নি। অথচ, ঠিকাদার সংস্থার থেকে সেই দাম নিয়ে নিয়েছে।’’

স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশও মানছেন, নিজেরা কোটি কোটি টাকা মুনাফা করলেও গ্রামবাসীদের কোনও কাজ দেননি আরাবুলরা। তাই ধীরে ধীরে আরাবুলদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘সেই ক্ষোভের আঁচ আরাবুল পেয়েছিলেন। তাই আচমকা পাওয়ার গ্রিড নিয়ে বিরোধিতায় নামেন। কিন্তু নকশাল নেতারা ভাঙড়ে আসার পরেই আরাবুলের পর্দা ফাঁস হয়ে যায়।’’

Arabul Islam Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy