Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বাজেটে ‘সাত বিভ্রান্তি’ নিয়ে প্রশ্ন অসীমের

অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের পেশ করা বাজেট সাত দফা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। তাঁর মূল অভিযোগ, “রাজস্ব বৃদ্ধির হার কম হওয়ার প্রধান কারণ রাজ্যে শিল্প না-হওয়া। যা বাজেটে স্বীকার করা হয়নি।” শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি নিয়েও অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি মানতে নারাজ অসীমবাবু। আলিমুদ্দিনে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর দাবি, রাজ্যের কোথায় কী শিল্প হয়েছে, নাম ও জেলা চিহ্নিত করে তা জানিয়ে দিন অমিতবাবু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২১
Share: Save:

অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের পেশ করা বাজেট সাত দফা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। তাঁর মূল অভিযোগ, “রাজস্ব বৃদ্ধির হার কম হওয়ার প্রধান কারণ রাজ্যে শিল্প না-হওয়া। যা বাজেটে স্বীকার করা হয়নি।” শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি নিয়েও অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি মানতে নারাজ অসীমবাবু। আলিমুদ্দিনে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর দাবি, রাজ্যের কোথায় কী শিল্প হয়েছে, নাম ও জেলা চিহ্নিত করে তা জানিয়ে দিন অমিতবাবু।

অসীমবাবু যে-সাতটি বিভ্রান্তির দিকে আঙুল তুলেছেন, সেগুলি হল:

প্রথমত, চতুর্দশ অর্থ কমিশন ইতিমধ্যেই রাজ্যের খাতে রাজস্বের প্রাপ্য প্রায় ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪২ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। ফলে অন্যান্য রাজ্যের মতোই পশ্চিমবঙ্গও ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে কেন্দ্রের কাছ থেকে বাড়তি টাকা পাবে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের এক দিন আগেই কেন তড়িঘড়ি করে রাজ্যের বাজেট পেশ করতে হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অসীমবাবু। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য নিঃসন্দেহে রাজ্যের আয়-ব্যয়ের উপরে প্রভাব ফেলবে। তা হলে কি সরকার ফের বাজেট পেশ করবে?”

দ্বিতীয়ত, রাজ্যের কর আদায়ে কেন ঘাটতি দেখা দিল? ২০১২-’১৩ সালে অমিতবাবু প্রবেশ কর চালু করেন এবং তার হিসাব ধরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি দেখান ৩১%। এ দিন অসীমবাবু বলেন, “আমরা তখনই বলেছিলাম, এটা আদায় করা যায় না। আমাদের কথাই সত্যি হল। মামলা হওয়ায় বিষয়টি আটকে আছে। ফলে রাজ্য প্রবেশ করের টাকা পাচ্ছে না।” কেন চলতি বছরে রাজ্যের ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বাবদ আয় কমে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অসীমবাবু বলেন, “আসলে শিল্প হয়নি বলেই আয় কমেছে। শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা দিলেই ভ্যাট আদায় কম হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।” অসীমবাবুর মতে, জ্বালানি তেলের দাম কমায় সেস ও বিক্রয় কর বাবদ আয় কমেছে ঠিকই। কিন্তু তা ৫ হাজার কোটি টাকা নয়।

তৃতীয়ত, ২০১১ থেকে ’১৫ সাল পর্যন্ত রাজ্যে ৮০ হাজার কোটি টাকা নির্মিত বা নির্মীয়মাণ শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে বলে অমিতবাবু বিধানসভায় যে-বিবৃতি দিয়েছেন, তাকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে অসীমবাবু বলেন, “কোন শিল্প নির্মিত হয়েছে আর কোনটা নির্মীয়মাণ, তা উনি স্পষ্ট করে জানান।” অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি ৮%-এর বেশি হয়েছে। এই তথ্যকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অসীমবাবু পাল্টা প্রশ্ন করেন, “যেখানে রাজ্যে কারখানাই হচ্ছে না, সেখানে কী করে শিল্পে উৎপাদন ৮%-এর উপর বাড়ে?”

চতুর্থত, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে তাঁর প্রশ্ন, “বামফ্রন্টের শেষ বছরে চালের দাম ছিল কেজিতে ২০ টাকা। এখন তা ৪০ টাকা কেজি। যদি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, তা হলে দাম বাড়ল কেন?” কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে অসীমবাবু বলেন, “কৃষি উৎপাদন কত, তা নিয়ে আগে কৃষি দফতর, ভূমি রাজস্ব দফতর এবং পরিসংখ্যান দফতর (ব্যুরো অব অ্যাপ্লায়েড স্ট্যাটিসটিক্স) মিলে হিসাব করত, যাতে পরিসংখ্যান ঠিক হয়। কিন্তু খবর পাচ্ছি, এই পদ্ধতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনের হিসাবের ক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞানের সাহায্য আর নেওয়া হচ্ছে না।” কীসের ভিত্তিতে শিল্প ও কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি চিহ্নিত করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অসীমবাবু বলেন, “মোট উৎপাদন বৃদ্ধি ১০% ধরা হচ্ছে। তা নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে।”

পঞ্চমত, অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় দাবি করেছেন, রাজ্যে ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। কোথায়, কোন ক্ষেত্রে ওই কর্মসংস্থান হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অসীমবাবু। তিনি বলেন, “এ নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। রাজ্যের আর্থিক সমীক্ষায় কোনও বক্তব্য নেই কেন?”

ষষ্ঠত, বিধানচন্দ্র রায়ের সময় থেকে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের বিদায় পর্যন্ত রাজ্যের ঘাড়ে মোট কেন্দ্রীয় ঋণ ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে বড় অংশ ছিল স্বল্প স্বঞ্চয়ের সুদ। রাজ্যের আয় বৃদ্ধি হয়েছে বলে বাজেটে দাবি। অসীমবাবুর অভিযোগ, তা সত্ত্বেও কী করে চার বছরের মধ্যে রাজ্যের ঘাড়ে থাকা ঋণ বেড়ে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াল?

সপ্তমত, তাঁর সর্বশেষ প্রশ্ন পরিকল্পনা খাতে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে। তিনি বলেন, “২০১৩-’১৪ সালে পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ হয়েছিল ২৪ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। ২০১৪-’১৫ তে তা বেড়ে দাঁড়াল ৪৪ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। এ বছরে ধরা হয়েছে ৪৯ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। গত বছর হঠাৎ যে ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ধরা হয়েছিল, তা কি কেন্দ্রীয় বাজেটের অর্থ সাহায্য ধরে? কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকাও কি রাজ্য নিজের পরিকল্পনা খাতে দেখাচ্ছে?”

অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এই প্রশ্নগুলির জবাব দিয়ে সাতটি বিভ্রান্তি দূর করবেন বলে আশা অসীমবাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state budget ashim dashgupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE