Advertisement
০২ ডিসেম্বর ২০২৪

মারা গেল পুরুলিয়ার নির্যাতিতা শিশু

পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামে ৬২ বছরের সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) বাড়িতে মেয়ে নিয়ে থেকে পরিচারিকার কাজ করছিলেন ওই শিশুর মা। সনাতনই ওই শিশুর উপরে অত্যাচার করেছে বলে চাইল্ডলাইনের কর্মীদের কাছে মেয়েটির মা পরে অভিযোগ করেন।

অস্ত্রোপচারের আগে দেহে বিঁধে থাকা সূচ। —ফাইল চিত্র।

অস্ত্রোপচারের আগে দেহে বিঁধে থাকা সূচ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০৪:২৩
Share: Save:

বাঁচানো গেল না পুরুলিয়ার সাড়ে তিন বছরের নির্যাতিতাকে। শুক্রবার ভোরে এসএসকেএম হাসপাতালের ‘পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’-এ তার মৃত্যু হয়।

পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান রুচিরেন্দু সরকার বলেন, ‘‘মেয়েটির দেহে সংক্রমণ ছিল। ওর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অসম্ভব কমে গিয়েছিল। মৃত্যুর প্রধান কারণ ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ, যাকে বলে ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস’ বলা হয়।’’

সম্প্রতি পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে জ্বর-সর্দির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি করানো হয় মেয়েটিকে। তাকে পরীক্ষা করে ডাক্তারেরা বোঝেন, শিশুটি নির্যাতিত। মেয়েটির মা মুখ না খোলায় গড়া হয় মেডিক্যাল বোর্ড।

পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামে ৬২ বছরের সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) বাড়িতে মেয়ে নিয়ে থেকে পরিচারিকার কাজ করছিলেন ওই শিশুর মা। সনাতনই ওই শিশুর উপরে অত্যাচার করেছে বলে চাইল্ডলাইনের কর্মীদের কাছে মেয়েটির মা পরে অভিযোগ করেন।

এক্স-রে প্লেটে ধরা পড়ে বাচ্চাটার শরীরের ভিতরে সুচ বিঁধে রয়েছে। তার দু’টি হাতও ভাঙা। গত মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করে ৭টি সুচই বার করা হয়। বুধবার রাত থেকে হঠাৎ শিশুটির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ওষুধ বদলেও সাড়া পাননি ডাক্তারেরা। দ্রুত অবস্থার অবনতি হয়। শিশুটির ম়ৃতদেহ কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে এ দিন কিছুটা বিভ্রান্তি ছিল। কারণ, শিশুটির মায়ের ‘ভূমিকা’ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। ফলে, তাঁকে বাচ্চার দেহ দেওয়া হবে কি না, পুরুলিয়া জেলা পুলিশের কাছে তা জানতে চায় কলকাতা পুলিশ। পুরুলিয়া পুলিশ জানায়, মায়ের হাতে দেহ তুলে দেওয়া নিয়ে তাদের আপত্তি নেই। শিশুটির গ্রামের কয়েক জন কলকাতায় এলে মায়ের হাতে মৃতদেহ তুলে দেবে পুলিশ। উপস্থিত থাকার কথা চাইল্ড লাইনের সদস্যদেরও।

আরও পড়ুন: বাংলা থেকে একটা সিটও পেতে দেব না বিজেপিকে: চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন মমতা

একরত্তি মেয়েটির উপরে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই সনাতনের উপরে ক্ষিপ্ত নদিয়াড়া। মেয়েটির মৃত্যুর খবর এ দিন পৌঁছতেই ফুঁসে ওঠেন গ্রামবাসী। অনেককে বলতে শোনা যায়, ‘‘তিল-তিল করে যন্ত্রণা দিয়ে যে ওই শিশুকে মারতে চেয়েছিল, তার জন্য ফাঁসি যথেষ্ট নয়। তাকে বাঘের খাঁচায় ছেড়ে দিতে হবে।’’ এ দিন সন্ধ্যায় পুরুলিয়া শহরে হওয়া মোমবাতি-মিছিল থেকেও দাবি ওঠে, ‘‘সনাতনের ফাঁসি চাই।’’ তবে সনাতন এখনও বেপাত্তা। তার খোঁজে ঝাড়খণ্ডে যাওয়া পুরুলিয়া পুলিশের দল ফিরে এসেছে খালি হাতে। জেলার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিভিন্ন সূত্র ধরে সনাতনের খোঁজ চলছে।’’

এ দিন সনাতনের স্ত্রী-র বাৎসরিক উপলক্ষে গ্রামে ফিরেছেন সনাতনের ছোট ছেলে লক্ষ্মণ গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘বাবার কঠিন শাস্তি চাই।’’ একমত তাঁর ঠাকুমা, সনাতনের আশি ছুঁই-ছুঁই মা পার্বতী গোস্বামী। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘আমার ছেলে দোষী না হলে, পালাবে কেন?’’ তবে তাঁর সংযোজন: ‘‘ওই মেয়েটা (শিশুকন্যার মা) কিছু জানে না, তা নয়। পুলিশ দেখুক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Tortured Girl পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ Pediatric intensive care unit SSKM Hospital সনাতন গোস্বামী Needle Acute respiratory distress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy