Advertisement
E-Paper

জেলা জুড়ে হামলা চলছেই

ভোটে বিপুল জয়ের পরেই রাজ্যে শান্তি রক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু নেত্রীর সেই বার্তার পরে শুক্রবারও বর্ধমান জেলা জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় গণ্ডগোলের খবর মিলেছে। বর্ধমান গ্রামীণ ও শিল্পাঞ্চলে বিরোধীদের উপরে হামলা, তাদের পার্টি অফিসে ভাঙচুরে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০২:২৬
ভাঙচুরের পরে রানিগঞ্জের অশোকপল্লিতে সিপিএমের কার্যালয়।

ভাঙচুরের পরে রানিগঞ্জের অশোকপল্লিতে সিপিএমের কার্যালয়।

ভোটে বিপুল জয়ের পরেই রাজ্যে শান্তি রক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু নেত্রীর সেই বার্তার পরে শুক্রবারও বর্ধমান জেলা জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় গণ্ডগোলের খবর মিলেছে। বর্ধমান গ্রামীণ ও শিল্পাঞ্চলে বিরোধীদের উপরে হামলা, তাদের পার্টি অফিসে ভাঙচুরে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর লোকজনই গোলমাল পাকাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলেরই নেতৃত্ব। কোথাও আবার তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন তৃণমূলেরই নেতা-কর্মীরা।

জেলার শিল্পাঞ্চলের মধ্যে জামুড়িয়া কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর হেরে যাওয়ার খবর চাউর হতেই ওই এলাকায় বিরোধীদের উপরে হামলা শুরু হয় বলে অভিযোগ সিপিএম নেতৃত্বের। অভিযোগ, এই বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৫ জন সিপিএম নেতা-কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। জামুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন পুরপ্রধান তাপস কবির অভিযোগ, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে শুনতে পাই, কারা যেন আমার নাম ধরে গালিগালাজ করছে। বাড়ি লক্ষ করে ইট, পাথরও ছোড়া হয়।’’ তাপসবাবুর বাড়ির পাশেই থাকেন প্রাক্তন বিধায়ক পেলব কবি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ছোড়া পাথরে জানলা ও গাড়ির কাচ ভেঙে গিয়েছে।’’ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সৈকত দত্ত, মানিক বাগদি, বিবেক অধিকারিদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। লালমোহন পাল নামে এক সিপিএম সমর্থকের বাড়ির কম্পিউটার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। চুরুলিয়ার আনন্দপুরে দু’জন সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে মোটরবাইক, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে খবর। হামলা চলেছে পাণ্ডবেশ্বর বাজার এলাকাতেও।

শঙ্করপুরে বিজেপির কার্যালয়।

বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারেও বিরোধীদের কার্যালয়ে নতুন করে হামলাতেও নাম জড়িয়েছে শাসকদলের। দুর্গাপুরের কালীগঞ্জ, শঙ্করপুর, কাঁকসা, মণ্ডলপুর, চুরুলিয়া, জামুড়িয়া গ্রাম, চিচুরিয়া-সহ শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম ও বিজেপির কার্যালয়ে হামলা ও অগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে সিটুর কার্যালয় দখল করে আইএনটিটিঅউসি অনুমোদিত মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্যদের খোশমেজাজে গল্প করতে দেখা গিয়েছে। ওই কার্যালয়ের বসেই সংগঠনের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া দাবি করেন, ‘‘মহকুমার প্রায় সব পরিবহণ কর্মীই আমাদের সংগঠনের সদস্য। তাঁরাই এই কার্যালয়ের দখল নিয়েছেন।’’ সিটুর পরিবহণ কর্মী সংগঠনের সম্পাদক হেমন্ত সরকারের অভিযোগ, ‘‘বিষয়টি থানা ও পুর-কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সুরাহা হয়নি।’’ বামেদের কার্যালয় দখলের অভিযোগ উঠেছে অন্ডাল, রানিগঞ্জ, খোট্টাডিহি, পরাশকোল কোলিয়ারি, মুকুন্দপুর, বেলিয়াবাথান প্রভৃতি এলাকাতেও।

সিপিএমের অভিযোগ, শাসকদলের হামলা থেকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ির লোকজনেরও রেয়াত মেলেনি। সিপিএমের দাবি, জামুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু কবির বাড়িতে ইট ছোড়া হয়। অল্পের জন্য রক্ষা পায় ঘরে থাকা এক শিশু। বালানপুরে সিপিএম নেতা নির্মল সিংহ ও তাঁর ছেলেকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের অভিযোগ, কেন্দা গ্রামের এক সিপিএম নেত্রীর মেয়ের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্তের অভিযোগ, ‘‘এ দিন আচমকা দেখি এক দল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী বাড়ির দিকে আসছে। বাড়ির মূল দরজা বন্ধ থাকায় ওরা পাঁচিল টপকে ঢোকে। মেয়ের স্কুটি ভেঙে ফেলা হয়।’’

আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে সিটুর কার্যালয় দখলের অভিযোগ উঠল আইএনটিটিইউসির বিরুদ্ধে।

বিরোধীদের দাবি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও পুলিশের দাবি উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। ফল প্রকাশের পর হামলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে জামুড়িয়ায় তৃণমূলের অন্দরের কোন্দলও সামনে এসেছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি এই সব হামলার ঘটনায় দলেরই একাংশ জড়িত। হামলার কথা স্বীকার করে আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের (দাশু) বক্তব্য, ‘‘জামুড়িয়ায় যারা দলকে হারিয়েছে তারাই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে বিরোধীদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। পুলিশকে রং না দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে নেত্রীকে জানাতে বাধ্য হব।’’ যদিও বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘‘ভোট-প্রচারে প্রকাশ্যে বিরোধীদের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার কথা বলেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব পার পেয়ে গিয়েছেন। তাতেই ভুল বার্তা গিয়েছে।’’

তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল সামনে এসেছে দুর্গাপুরেও। স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ ইস্পাত নগরীতে কালীদাস রোড লাগোয়া দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় কয়েকজন যুবক। মারধর করা হয় ডিএসপি-র আইএনটিটিইউসি নেতা হিমাংশু আশ-সহ ৮ জনকে। হিমাংশুবাবু-সহ তিন জনকে ইস্পাত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই ঘটনার খানিক বাদেই দয়ানন্দ রোডে যুব তৃণমূল নেতা রাজীব ঘোষের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। হিমাংশুবাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত সোমা সরকার ক্ষোভ, ‘‘যুব নেতা রাজীববাবু আমাদের কার্যালয় দখল করে কর্তৃত্ব কায়েম করতে চান। সে জন্যই তাঁর লোকজন হামলা চালিয়েছে।’’ রাজীববাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘দুর্গাপুরে হারের পরে হতাশ দলের কর্মী-সমর্থকেরা। এলাকার বেকার যুবকদের ক্ষোভ রয়েছে। তারাই হয়তো হামলা চালিয়েছে। আমি যুব নেতা হওয়ায় পাল্টা আমার বাড়িতে হামলা চলে।’’

গোলমাল বেধেছে জেলার গ্রামীণ এলাকাতেও। শুক্রবার দুপুরে বর্ধমান শহরের বাসিন্দা প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল হক অভিযোগ করেন, ৮-১০ জন তৃণমূল কর্মী বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। কালনা জোনাল কমিটির সম্পাদক সুকুলচন্দ্র শিকদার অভিযোগ করেন, ‘‘শুক্রবার সকালে তৃণমূলের হামলায় কুলটি ও আটঘড়িয়ার দু’টি দলীয় কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ সিপিএমের অভিযোগ, ভাতারের বিভিন্ন এলাকাতেও হামলা চালেছে। কেতুগ্রামের বাবা সিপিএম কর্মী হওয়ায় ছেলেকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

যদিও যাবতীয় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের বর্ধমান জেলার (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘নেত্রী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে বলেছেন। তার বাইরে হামলা, মারধর হলে দল জড়িত থাকবে না। পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। সে কথা পুলিশকে জানানোও হয়েছে।’’

Shankarpur Asansol Attack political terror Burdwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy