Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

পুলিশের ব্যারিকেডে আটকাল এবিভিপি

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুক্রবার রাতে হওয়া অশান্তির জেরে সোমবার কলকাতার রাস্তায় বিস্তর ভোগান্তি হল সাধারণ মানুষের।যাদবপুরের পড়ুয়াদের ‘সবক শেখাতে’ এ দিন মিছিলের আয়োজন করেছিল বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)।

ব্যারিকেডের উপরে। সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এবিভিপির মিছিল ।ছবি: রণজিৎ নন্দী

ব্যারিকেডের উপরে। সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এবিভিপির মিছিল ।ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০৩:৫৮
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুক্রবার রাতে হওয়া অশান্তির জেরে সোমবার কলকাতার রাস্তায় বিস্তর ভোগান্তি হল সাধারণ মানুষের।

যাদবপুরের পড়ুয়াদের ‘সবক শেখাতে’ এ দিন মিছিলের আয়োজন করেছিল বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। বিকেল পাঁচটা নাগাদ গোলপার্ক থেকে শুরু হওয়া ওই মিছিল পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোডের একটা বড় অংশ জুড়ে দু’প্রান্তেই প্রায় চার ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।

এবিভিপি-র মিছিল ঘিরে উত্তেজনার রসদ অবশ্য কম ছিল না। শুক্রবার রাতে একটি ছবির প্রদর্শনী ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে ঝামেলা হয় তাতে চার বহিরাগতের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। এই চার জনই এবিভিপি-র সদস্য। সে দিন রাতে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ুয়াদের হাতে আটক ওই চার জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। শুক্রবারের ঘটনার জেরেই এ দিনের মিছিলের ডাক দিয়েছিল এবিভিপি।

মিছিল শুরুর সময় সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সুবীর হালদার রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘‘যাদবপুরের বামপন্থী পড়ুয়ারা ক্যাম্পাস থেকে বেরোলে তাদের পা কেটে নেব।’’ যদিও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর অন্যতম, ফেটসু-র সাধারণ সম্পাদক স্বর্ণেন্দু বর্মন বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতেও ওরা একই হুমকি দিয়েছিল। ওতে ভয় পাই না।’’ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও সঙ্ঘ পরিবারকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, ‘‘গুন্ডা ও অপরাধীদের নামিয়ে আরএসএস-সঙ্ঘীদের ক্যাম্পাস দখলের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হবে। শুধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আজ ধর্মনিরপেক্ষতাই আক্রান্ত।’’

এই চাপানউতোরের পরিপ্রেক্ষিতে দু’পক্ষ মুখোমুখি হলে আরও এক প্রস্ত অশান্তির আশঙ্কা ছিল। কিন্তু পুলিশ দক্ষতার সঙ্গেই অবস্থা সামাল দেয়। যা দেখে সুরঞ্জনবাবুর মন্তব্য, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন এ দিন যে ভাবে ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকেছে, তা প্রশংসনীয়।’’ সেই সঙ্গে পড়ুয়া-শিক্ষক-কর্মচারীরা প্ররোচনায় পা না-দিয়ে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখেছেন জানিয়ে তাঁদেরও প্রশংসা করেছেন উপাচার্য। অন্য দিকে, শুক্রবার রাতে উপাচার্যের ভূমিকায় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ঘনিষ্ঠ মহলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

তবে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গোলমাল এড়ানো গেলেও আমজনতার দুর্ভোগ এড়ানো যায়নি। এবিভিপি-র মিছিলের পথ গড়িয়াহাট রোড ও রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোড হলেও তার রেশ গিয়ে পড়ে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের মতো নিকটবর্তী রাস্তাগুলোয়। শুধু গাড়ি চলাচল নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিলের প্রবেশ ঠেকাতে পুলিশি ব্যারিকেডে রাস্তার যে অংশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল, সাধারণ মানুষ তার ফুটপাথ দিয়েও চলাফেরা করতে পারেননি। রাস্তার সঙ্গে সঙ্গে ফুটপাথও গার্ডরেল দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। এক সময়ে ধৈর্য হারিয়ে ব্যারিকেড ভেঙে মানুষ এগোনোর চেষ্টা করেন।

ক্যাম্পাসে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

যাদবপুর সেন্ট্রাল রোডের একটি কোচিংয়ে মেয়েকে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন সাঁপুইপাড়ার বাসিন্দা মৈত্রেয়ী রায়। পুলিশের বাধা পেয়ে তিনি বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকে ঘিরে মাঝেমধ্যেই রাস্তা অবরোধ একটা অসহ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়েটার আজ কোচিংয়ের পরীক্ষা দেওয়া হল না।।’’ যাদবপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা রতন রায়ের আত্মীয়। পুলিশ তাঁরও অনুরোধ শোনেনি। বিরক্ত রতনবাবু বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এই ভোগান্তির শেষ চাই।’’

এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ বিজেপি, আরএসএস এবং আয়োজক এবিভিপি-র প্রায় সাড়ে তিনশো সমর্থক গোলপার্ক মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। তখন থেকেই যাদবপুর থানা থেকে এইট বি মোড়ের দিকে রাজপথের দু’টি লেন-ই বন্ধ করে দেওয়া হয়। যানবাহন ঘুরিয়ে দেওয়া হয় এক দিকে সুকান্ত সেতু, অন্য দিকে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টর দিয়ে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ মিছিলকারীরা ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিতে দিতে যাদবপুর থানা পর্যন্ত পৌঁছনোর পর বুঝে যান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকা তো দূরের কথা, আর এগনোই সম্ভব না। পুলিশ ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকে দিয়েছে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র পলিটেকনিক কলেজের সামনে থেকে।

ফলে, কলেজের সামনে গিয়ে ব্যারিকেডের আগেই বসে পড়েন এবিভিপি সমর্থকেরা। কেউ কেউ অবশ্য ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ সজাগ থাকায় সেটা সম্ভবপর হয়নি। সাড়ে তিনশোর মিছিল ঠেকাতে চার জন ডেপুটি কমিশনারের নেতৃত্বে দেড়শোরও বেশি পুলিশ মোতায়েন ছিলেন এবং এক জন যুগ্ম কমিশনার গোটা বিষয়টির তত্ত্বাবধান করেন, যা এক রকম অভূতপূর্ব।

আবার ক্যাম্পাসের মধ্যে তৎপর হন পড়ুয়া, কর্মচারী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সেমেস্টার ছাড়াও স্নাতকোত্তরের দু’টি প্রবেশিকা পরীক্ষা ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বহু অভিভাবক সকাল থেকে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন। তাঁরা যাতে অসুবিধায় না পড়েন, সে দিকে খেয়াল রেখেছিল ছাত্র সংগঠনগুলো। ক্যাম্পাসের ভিতরে মিছিলের ঢুকে পড়া আটকাতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা মানববন্ধন করার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তার দরকার হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ABVP VC Jadavpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE