Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সবুজায়নের সঙ্গে সুস্থ শৈশব, পথ দেখাবে সবুজশ্রী

প্রাণকে স্বাগত জানাবে প্রাণ! প্রকল্পের নাম সবুজশ্রী। যেখানে গ্রামের বাড়ির নবজাতক উপহার পাবে একটি বৃক্ষ-শিশু। একই সঙ্গে বেড়ে উঠবে দু’জনে। পরে প্রাপ্তবয়স্ক গাছটি সহায় হবে তরুণ-তরুণীর।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০৪
Share: Save:

প্রাণকে স্বাগত জানাবে প্রাণ!

প্রকল্পের নাম সবুজশ্রী। যেখানে গ্রামের বাড়ির নবজাতক উপহার পাবে একটি বৃক্ষ-শিশু। একই সঙ্গে বেড়ে উঠবে দু’জনে। পরে প্রাপ্তবয়স্ক গাছটি সহায় হবে তরুণ-তরুণীর।

কী ভাবে? জন্মের সময় সরকারি উপহার হিসেবে পাওয়া চারাটি আসলে অর্থকরী গাছের। বড় হওয়ার পরে সেটি বিক্রি করে একসঙ্গে বেশ কিছুটা টাকার সংস্থান হবে। তবে সবুজশ্রীর এই উপহার সবার জন্য নয়। সন্তানের জন্ম যদি কোনও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হয় (যাকে সরকারি ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বলে), তবেই মিলবে ওই চারা গাছ। সরকারি এক কর্তা জানান, সবুজায়নের পাশাপাশি সুস্থ ভাবে, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শিশুর জন্ম নিশ্চিত করাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। খুব সম্প্রতিই এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।

মা ও শিশুর স্বাস্থ্যে নজরদারির জন্য গঠিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ রাজ্যে মোট প্রসবের প্রায় ৮৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়। কিন্তু বাকি ১৫ শতাংশও সংখ্যার বিচারে অনেক। নবজাতকের মৃত্যুহার রুখতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সংখ্যা বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবুজশ্রী প্রকল্প এতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করেন ওই স্বাস্থ্য কর্তা।

তবে সমস্যাও রয়েছে। শাল-সেগুন-মেহগনির মতো গাছ বেড়ে উঠতে বেশ কিছুটা পরিসর তো লাগে! গ্রামে সবার বাড়িতে সেই জায়গা নেই। তাঁদের জন্য কী উপায় হবে?

সমস্যা থাকলে সমাধানও রয়েছে। অন্তত বীরভূম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান রাজা ঘোষ একটা সমাধান বার করেছেন। তিনি জেলাশাসকের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন, গ্রামে যাঁদের ওই গাছ লাগানোর মতো জায়গা নেই, তাঁরা প্রাথমিক স্কুলের জায়গা ব্যবহার করুন। সন্তানের জন্মের পরে যে গাছ পাবেন, স্কুল চত্বরেই সেটা লাগিয়ে তার যত্ন নিন। আর তাঁদের শিশুটিও পড়ুক ওই স্কুলে। শিশুটিও জানবে কোন গাছটি তার, সেটির যত্ন নিতে শিখবে সে। শিশুটির নামেই হোক গাছটির নাম। ফলে বড় হয়ে নিজের নামের গাছ চিনতেও শিখবে সে। আর সে বড় না-হওয়া পর্যন্ত তার পরিবার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ যৌথ ভাবে সেটির দেখভালের দায়িত্ব নিন।

মনোবিদ প্রশান্ত রায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়ায় শিশুকে হাঁসফাঁস খাইয়ে দেওয়ার থেকেও জরুরি, তাকে সংবেদনশীলতার পাঠ দেওয়া। তার শুরু হতেই পারে এ ভাবে গাছ লালন-পালনের মাধ্যমে।’’ পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘সবুজশ্রী প্রকল্প রূপায়ণে বাধা হতে পারে জায়গা ও অর্থ। ওই বাধা দূর করতেও যদি কেউ উদ্যোগী হন, তবে তা প্রশংসনীয়।’’ আর বীরভূমের পথে যদি অন্য জেলাও এগিয়ে যায়, তবে রাজ্য জুড়েই ‘সবুজের অভিযান’ সম্ভব বলে মনে করেন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মীরা।

রাজাবাবু জানান, বীরভূম জেলায় মোট ২৪০০টি প্রাথমিক স্কুলে খালি জমির পরিমাণ ৬০০ একর। স্থানাভাবে প্রকল্পের সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী জানান প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানের প্রস্তাব তিনি পেয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। আপত্তির তো কারণ নেই। বিভাগীয় নির্দেশিকা মেনেই এগোব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plant Baby
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE