প্রতাপের প্রতাপ অব্যাহত। এবং কলকাতার ভোটে সেই প্রতাপকে দরকার শাসক শিবিরের।
চার বছর আগেকার পুলিশ-পেটানোর মামলায় সেই প্রতাপ সাহা তাই আত্মসমর্পণ করলেন আদালতে। সঙ্গে সঙ্গেই মিলল জামিন। পুলিশের একাংশ বলছে, এতে রক্ষা পেল দু’কূলই। l কার্যকর না-হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা যে-কোনও ভোটের আগেই বাস্তবায়িত করা আবশ্যিক। প্রতাপ নিজে থেকে ধরা দেওয়ায় সেই বিধি মান্য করা হল এবং এড়ানো গেল গ্রেফতারিও।
l মহানগরের ভোটে শাসকের তরফে প্রতাপ দেখাতেও প্রতাপের আর বাধা রইল না।
প্রতাপ সাহার প্রতাপ অবশ্য বাধা মানেনি কোনও দিনই। দক্ষিণ কলকাতায় শাসক দলের নেতা তিনি। বহু বস্তি, কলোনি ও রিকশা ইউনিয়নের মাথা। মহানগরের ভোটে তাঁর মতো নেতাকে শাসক দলের প্রয়োজন। যে-হামলায় পুলিশকে থানার মধ্যেই ফাইলকে ঢাল করে টেবিলের তলায় লুকোতে হয়, সেই হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশকে মারধর করা ও পুলিশের ক্যামেরা ভেঙে দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত হয়েও সাড়ে চার বছর অধরা থাকতে পারেন তিনি। নিজে ধরা দিতে না-চাইলে তাঁকে আটকায় কে! সরকারি আইনজীবীও এ দিন তাঁর জামিনের কোনও বিরোধিতা করেননি। আর প্রতাপের আইনজীবী অরিন্দম দাস বিচারকের কাছে আর্জি জানান, ‘‘আমার মক্কেল এক জন রাজনীতিবিদ। চার বছরের পুরনো মামলা। তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।’’ হয়েও গেল জামিন।
একই ভাবে গত বছর গোপালনগর মোড়ে এক পুলিশ অফিসারকে মারধর এবং বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে নিগ্রহ— দু’টি ঘটনাতেই আদালত থেকে সহজে জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন প্রতাপ। আবার ২০১৪-র নভেম্বরে আলিপুর থানা ভাঙচুর, হামলা ও তার জেরে পুলিশকে টেবিলের নীচে লুকোনোর ঘটনায় প্রতাপের নাম উঠলেও সেই নাম পুলিশের চার্জশিটে ছিল না। এমনই প্রতাপের নামমাহাত্ম্য!
প্রতাপ এ দিন যে-মামলায় জামিন পেলেন, সেই ঘটনাটি ঘটে ২০১১-র ২১ ডিসেম্বর। আলিপুর থানা খবর পায়, নবোদয় লেনে বেআইনি নির্মাণ চলছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশকর্মীরা ওই বেআইনি নির্মাণে বাধা দেন। আর যায় কোথায়! প্রতাপ এবং তাঁর শাগরেদরা সেই পুলিশকর্মীদের মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। একটি ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে ঘটনার ছবি তুলছিলেন পুলিশকর্মীরা। সেই ক্যামেরাও ভেঙে দেওয়া হয়। হুমকি দেওয়া হয় পুলিশকর্মীদের।
তার পরেই তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার বিরুদ্ধে মারধর, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা (আলিপুর থানা, কেস নম্বর ৩৮৫, তারিখ: ২১ ডিসেম্বর, ২০১১) দায়ের করে আলিপুর থানা। দেড় বছর পরে, ২০১৩ সালে প্রতাপের বিরুদ্ধে সেই মামলায় চার্জশিট দেয় পুলিশ। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। ওই পর্যন্তই। পুলিশ কিন্তু প্রতাপকে গ্রেফতার করতে পারেনি। চার্জশিটে দেখানো হয়, ওই অভিযুক্ত পলাতক। যদিও পুলিশেরই একাংশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চেতলার ওই নেতাকে কোথাও পালাতে হয়নি। আলিপুরের বিস্তীর্ণ তল্লাটে অবলীলায় দাপট দেখিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
বিধানসভার ভোট এসে পড়ায় নির্বাচনী বিধির খাতিরেই পুরনো পরোয়ানা তামিল করার কথা। কিন্তু তা হলে তো প্রতাপকে গ্রেফতার করতে হয়। তার চেয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করাই ভাল। তা-ই হল।
এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ আলিপুর আদালতে ঢোকেন প্রতাপ। আত্মসমর্পণের জন্য প্রতাপের আইনজীবীরা প্রথমে তাঁকে নিয়ে যান আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চক্রবর্তীর আদালতে। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
‘‘কলকাতার ভোটে প্রতাপকে ছাড়া শাসক দলের চলবে না। তাই সরকারি কৌঁসুলি প্রতাপের জামিনের বিরোধিতা করেননি,’’ বললেন কলকাতা পুলিশের এক কর্তা। যদিও সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষালের দাবি, ‘‘ওই মামলায় চার্জশিট হয়ে গিয়েছে। তদন্তের জন্য অভিযুক্তকে প্রয়োজন নেই। সেই জন্যই জামিনের আর্জির বিরোধিতা করা হয়নি।’’
প্রতাপ সাহা নিজে কী বলছেন?
‘‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। আইনি পথেই এর মোকাবিলা করছি,’’ জানিয়ে দিলেন প্রবল প্রতাপান্বিত প্রতাপ সাহা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy