Advertisement
১৬ মে ২০২৪

ঠাঁই নাই চেস্টে, ট্রাঙ্ক কেনার ধুম

কেউ রাখতে পারে সাড়ে তিনশো কোটি। তার ঘাড়ে হয়তো চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে পাঁচশো কোটিরও বেশি। আবার কারও ক্ষমতা একশো কোটির বেশি নয়। কিন্তু তার ঘরে এখন পর্যন্ত জমা প্রায় দেড়শো কোটি।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৯
Share: Save:

কেউ রাখতে পারে সাড়ে তিনশো কোটি। তার ঘাড়ে হয়তো চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে পাঁচশো কোটিরও বেশি। আবার কারও ক্ষমতা একশো কোটির বেশি নয়। কিন্তু তার ঘরে এখন পর্যন্ত জমা প্রায় দেড়শো কোটি।

এই মুহূর্তে এমনই অবস্থা রাজ্যের কারেন্সি চেস্টগুলির। ২১৮টি চেস্ট রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তার বেশির ভাগেই এখন বাতিল এক হাজার ও পাঁচশো জমা হয়ে রয়েছে পাহাড়ের মতো। চেস্টের ঘরে এখন ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’। ৮ নভেম্বর মধ্য রাত থেকে বাতিল হয়ে যায় পুরনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট। তার পর থেকে মানুষ নিজেদের সঞ্চয়ে রাখা এমন নোট ক্রমাগত জমা করছেন ব্যাঙ্কে। সেগুলির ঠাঁই দিতে গিয়েই উপচে পড়ছে চেস্ট। ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিজেই এখন এই টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে নানা ভাবে সময় নিচ্ছে। যেমন, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কয়েকটি ব্যাঙ্ককে বলা হয়েছে, আপনারা বাতিল নোট রাখার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থা করুন। সে ক্ষেত্রে ঘর ভাড়া তো বটেই, ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা ও টাকা-পয়সা নিয়ে যাতায়াতের যাবতীয় খরচও আরবিআই-ই দেবে বলে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। তার পর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তারা টাকা সংগ্রহের জন্য গাড়ি পাঠায়নি বলে ব্যাঙ্ক সূত্রে দাবি। উপরন্তু, কলকাতায় তো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছে তাদের আবেদন, আপনাদের অফিস বিল্ডিংয়ে যে জায়গা ফাঁকা আছে, সেখানে এই নোট রাখাতে দিন!

অবস্থা বেগতিক বুঝে অনেক চেস্ট ব্যাঙ্কই এখন বিকল্প ব্যবস্থা করছে। সে জন্য কেনা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ ট্রাঙ্ক। তাতেই আপাতত ভরে রাখা হবে বাতিল টাকা। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, লাগাতার ট্রাঙ্ক কিনলে তো ক’দিন পরে ঘরে পা রাখারই জায়গা হবে না! এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জানাচ্ছেন, কলকাতার রিজার্ভ ব্যাঙ্কেই তো ঠাঁই মেলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ক’দিন আগে জেলা থেকে বাতিল নোট নিয়ে একটি গাড়ি পাঠানো হয় আরবিআই-তে। সেই গাড়ি কলকাতায় আরবিআই দফতরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তিন ঘণ্টা। কারণ, ভেতরে নাকি ট্রাঙ্ক সরিয়ে জায়গা করা হচ্ছিল তখন! দুশ্চিন্তা অবশ্য ট্রাঙ্ক কেনাতেও মিটছে না। কয়েক জন ব্যাঙ্ক অফিসার বলছেন, এমন চলতে থাকলে এক সপ্তাহ বাদে বাড়তি ঘর ভাড়া করতে হতে পারে।

কারেন্সি চেস্ট

সারা দেশে টাকা জোগান দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নির্দিষ্ট কিছু ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তারা এই টাকা সরবরাহ করে। সেই ব্যাঙ্কগুলি টাকা রাখতে সব দিক থেকে সুরক্ষিত বিশেষ ঘরের ব্যবস্থা করে। সেগুলিই ‘কারেন্সি চেস্ট’। দেশে চার রকমের চেস্ট আছে। সব থেকে ছোটটি ১০০ কোটি অবধি জমা রাখতে পারে। সব থেকে বড়টি এক হাজার কোটি বা তার বেশি টাকা রাখতে সক্ষম।

দেশে মোট চেস্ট ৪০৭৫টি। স্টেট ব্যাঙ্কে ২৭২২টি, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ১১৭৩টি, বেসরকারি ব্যাঙ্ক ১৬০টি, বিদেশি ব্যাঙ্কে ৪টি সমবায় ব্যাঙ্কে ৩টি ও গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ৫টি

এই রাজ্যে মোট কারেন্সি চেস্ট ২১৮টি

কলকাতায় ৫৯টি, বাকিটা জেলায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Banks Banned Note Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE