Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের আগে তৎপরতা

প্রকল্পে পিছিয়ে পড়া নিয়ে চিন্তায় কর্তারা

দিন পনেরো পরেই মুখ্যমন্ত্রীর শততম প্রশাসনিক সভা হতে চলছে বর্ধমানে। তার আগে একশো দিনের কাজে প্রথম স্থান হারানো নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সরাসরি না হলেও অনেকেই ঘনিষ্ঠমহলে বলছেন, আপাতত ক’দিনে যতটা পারা যায় হাল শোধরানোর চেষ্টা করতে হবে। না হলে জুটতে পারে তিরস্কার।

আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। সারানো হচ্ছে বর্ধমানের কাছারি রোড। রবিবার বিকেলে উদিত সিংহের তোলা ছবি।

আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। সারানো হচ্ছে বর্ধমানের কাছারি রোড। রবিবার বিকেলে উদিত সিংহের তোলা ছবি।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০১:২৯
Share: Save:

দিন পনেরো পরেই মুখ্যমন্ত্রীর শততম প্রশাসনিক সভা হতে চলছে বর্ধমানে। তার আগে একশো দিনের কাজে প্রথম স্থান হারানো নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সরাসরি না হলেও অনেকেই ঘনিষ্ঠমহলে বলছেন, আপাতত ক’দিনে যতটা পারা যায় হাল শোধরানোর চেষ্টা করতে হবে। না হলে জুটতে পারে তিরস্কার।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ জুলাই মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকটি করার কথা চলছে। তার আগে সভার প্রস্তুতি শুরু তো বটেই, একশো দিনের কাজে নবম স্থান থেকে যতটা সম্ভব উপরে উঠে আসার চেষ্টা করছেন কর্তারা। বিভিন্ন পঞ্চায়েতে কর্মদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় রাতে থেকে কাজের গতি বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।’’ ওই প্রকল্পের বকেয়া টাকা নিয়ে যে সমস্যা হয়েছিল তাও মিটে গিয়েছে বলে তাঁর আশ্বাস।

গত বছর একশো দিনের কাজে জেলার বেশির ভাগ ব্লকই রাস্তা তৈরি, পুকুর সংস্কার, নিকাশি নালা তৈরির মতো বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়েছিল। ফলে বহু শ্রমদিবসও তৈরি হয়। টাকা খরচের নিরিখে দেশের মধ্যে সেরা জেলার পুরস্কারও পায় বর্ধমান। তবে এ বার আর সাফল্য ধরে রাখা যায়নি। রাজ্যের মধ্যে ঠাঁই হয়েছে নবম স্থানে। পিছিয়ে পড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ পঞ্চায়েতই প্রকল্প নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি। ফলে, লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিও তারা পৌঁছতে পারেনি। যদিও পঞ্চায়েতগুলির দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া না পাওয়ায় কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। স্থানীয় মানুষেরা বহু পঞ্চায়েতে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। ফলে বকেয়া টাকা না মিটিয়ে নতুন প্রকল্প শুরু করা যায়নি। কালনা ১, কালনা ২ ব্লকের মতো বেশ কিছু ব্লকে কাজ দেওয়ার হার তলানিতে ঠেকেছে বলেও জেলা প্রশাসনের দাবি। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কেন্দ্রের কাছে এই প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা ছিল প্রায় হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে একা বর্ধমান জেলারই পাওনা ছিল ৪০০ কোটি টাকা। তবে সম্প্রতি বকেয়া টাকার বেশির ভাগই পঞ্চায়েতগুলি পেয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের কর্তারা। তার সঙ্গে নতুন প্রকল্পের জন্যও রাজ্যের হাতে অর্থ রয়েছে। ফলে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে বেশি করে শ্রমদিবস তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতগুলিকে।

শততম বৈঠকটিকে বিশেষ রূপ দিতে প্রধানদের হাজির করা-সহ বিশেষ কিছু পরিকল্পনাও করছে জেলা প্রশাসন। জেলার জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের মধ্যে এ নিয়ে বৈঠকও হয়ে গিয়েছে। তাতে ঠিক হয়েছে, জেলায় যে ৯টি কিসান মান্ডির কাজ শেষ হয়েছে সেগুলি এ বার মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। সাংসদ এবং বিধায়কেরা নিজেদের তহবিলের টাকা কতটা, কী ভাবে খরচ করতে পেরেছেন তা নিয়ে মহকুমা স্তরে বৈঠক হয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, যত দিন যাবে চাপ বাড়বে। তার আগে দ্রুত কাজ গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

তবে অস্বস্তি বেশি রয়েছে একশো দিনের কাজ নিয়েই। আমলাদের আশঙ্কা, এক থেকে নয় নম্বরে নেমে যাওয়াটা মোটেই ভাল চোখে দেখবেন না মুখ্যমন্ত্রী। তাই যতটা সম্ভব গতি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। দিন কয়েক আগে কালনা এবং কাটোয়া মহকুমায় জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু, অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রণব বিশ্বাস মহকুমা এবং ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান সহ পঞ্চায়েত কর্মীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বর্ধমানের দুই মহকুমাতেও বৈঠক হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকগুলিতে প্রতিটি ব্লকে কোন প্রকল্পের কি হাল, কতগুলি শ্রমদিবস এখনও পর্যন্ত তৈরি করা গিয়েছে— সে সব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারপরে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমদিবস তৈরির পরিকল্পনাও করা হয়েছে। যেমন, কালনার বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের লক্ষ্যমাত্রা ৩১৩৬৪। সেখানে এখন পর্যন্ত করা গিয়েছে ১১৩৪। নান্দাই পঞ্চায়েতে ১৬০০০ জায়গায় হয়েছে ৮৬০দিন। সুলতানপুরে লক্ষ্যমাত্রা ২৫৯৩৮, হয়েছে মাত্র ৩৬৮৫, অকালপৌষে ৪৭৪২০ দিনের জায়গায় হয়েছে ১০৪৩, বাদলা পঞ্চায়েতে লক্ষ্যমাত্রা ৪৮৭২৩, সেখানে হয়েছে ৭২৮টি শ্রমদিবস। বৈঠকে বেশ কয়েকজন প্রধানদের থেকে একশো দিনের প্রকল্পের এমন হাল কেন, তাও জানতে চান অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রণববাবু। বেশির ভাগেরই উত্তর, বকেয়া টাকা দীর্ঘ দিন পরে থাকায় তারা নতুন করে বড় প্রকল্পের কাজে হাত দেওয়ার সাহস পাননি। জেলা প্রশাসনের তরফে দ্রুত বহু মানুষকে কাজ দেওয়ার জন্য বৃক্ষরোপণ, পাট্টা, কেঁচো সার প্রকল্প, সেচনালা তৈরি করার মতো প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথাও বলা হয়। কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় কেঁচো সার তৈরির ব্যাপারে আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়।

যদিও অনেক প্রধানেরই দাবি, এখন কাজের গতি বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, অথচ এই মরসুমে কাজ করার নানা সমস্যাও রয়েছে। বেগপুর পঞ্চায়েতের প্রধান শিউলি মল্লিক যেমন বলেন, ‘‘একে বর্ষা এসে যাওয়ার কাজ করা মুশকিল, তার উপর আমন চাষের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাওয়ায় লোক পাওয়াও কঠিন।’’ সভাধিপতি দেবুবাবুর অবশ্য আশ্বাস, টাকা বকেয়া ছিল ঠিকই, কিন্তু আপাতত সে সমস্যা নেই। তাই প্রকল্পে গতি আনার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা প্রতি ব্লক থেকে দৈনিক ৫০০০ হাজার কর্মদিবস চাইছি। আশা করছি, মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের আগেই জেলাকে অনেকটা টেনে তোলা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE