Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Bardhaman Water Tank Collapsed

কেন বদলানো হয়নি এত পুরনো ট্যাঙ্ক, উঠছে প্রশ্ন

বুধবার বর্ধমান স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপরে থাকা বড় জলের ট্যাঙ্কের দু’দিকের লোহার চাদর ভেঙে পড়ে। জলের তোড় ও লোহার চাদরের ধাক্কায় প্ল্যাটফর্মের ছাউনি ভেঙে পড়লে মৃত্যু হয় তিন জনের।

Bardhaman Water Tank Collapsed

ভাঙা হল বর্ধমান স্টেশনের সেই জল ট্যাঙ্ক। ছবি: উদিত সিংহ।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৩৩
Share: Save:

বাইরে থেকে ছিল চকচকে, কিন্তু ভিতরে যে মরচে ধরেছিল, তা ট্যাঙ্কের ভেঙে পড়া অংশ দেখলেই মালুম হচ্ছে— বর্ধমান স্টেশনের দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে বিশেষজ্ঞদের অনেকের এমনই মত। এত পুরনো একটি ট্যাঙ্ক জনবহুল জায়গায় রাখাই বা হয়েছিল কেন, প্রশ্ন তাঁদের অনেকের। বুধবারের ওই দুর্ঘটনায় মৃতদের এক জনের পরিবার বৃহস্পতিবার রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেছে বর্ধমানের রেল পুলিশ থানায়।

বুধবার বর্ধমান স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপরে থাকা বড় জলের ট্যাঙ্কের দু’দিকের লোহার চাদর ভেঙে পড়ে। জলের তোড় ও লোহার চাদরের ধাক্কায় প্ল্যাটফর্মের ছাউনি ভেঙে পড়লে মৃত্যু হয় তিন জনের। আহত হন অন্তত ৩৪ জন। ঘটনার পরে রেল-কর্তাদের অনেকে জানিয়েছিলেন, ট্যাঙ্কটি ১৩৩ বছরের পুরনো। কিন্তু এ দিন রেল সূত্রে জানা যায়, ট্যাঙ্কটি তৈরি হয়েছিল তারও আগে, ১৮৪৯ সালে। কয়েক মাস আগে ট্যাঙ্কটি ভাঙার জন্য দরপত্র ডাকলেও কোনও ঠিকাদার মেলেনি। তবে দুর্ঘটনার পরে রেলের কর্তারা ট্যাঙ্কটি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন। রেল সূত্রের দাবি, আড়াই কোটি টাকায় কংক্রিটের ট্যাঙ্ক তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে প্রক্রিয়া শীঘ্র শুরু হবে।

রেলের প্রাক্তন কর্তাদের একাংশের দাবি, জনবহুল জায়গায় যেখানে এখন কংক্রিটের ট্যাঙ্কই রাখা হয় না, সেখানে পুরনো পদ্ধতিতে তৈরি লোহার চাদরের ট্যাঙ্ক এত দিন দাঁড় করিয়ে রাখাই বড় গাফিলতি। রেল এবং রাজ্য পূর্ত দফতরের কয়েক জন বিশেষজ্ঞের দাবি, কংক্রিটের ট্যাঙ্কের মেয়াদ ধরা হয় ৫০-৭০ বছর। লোহার ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তা ১০০-১২৫ বছর। সেই হিসাবে, বর্ধমান স্টেশনের ট্যাঙ্কটির মেয়াদ (লাইফ) অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।

ওই বিশেষজ্ঞদের দাবি, ট্যাঙ্কটির লোহার চাদরের ঘনত্ব থাকার কথা ১৮ মিলিমিটার। সব জায়গায় তা ছিল না। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ভেঙে পড়া ট্যাঙ্কের অংশ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, ভিতরের দিকে মরচে পড়ে গর্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে, ঘনত্ব কমেছে। রক্ষণাবেক্ষণে তা খেয়াল রাখা হয়নি।’’ বর্ধমান স্টেশন দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এনআইটি) এক শিক্ষকের মতে, ‘‘যখন এই ট্যাঙ্কের নকশা তৈরি হয়, তখন তো এত সংখ্যক ট্রেন চলাচল করবে, তা মাথায় রাখা হয়নি। এখন এই লাইনে এত ট্রেন চলে, তাতে যে কম্পন তৈরি হয়, সেটার একটা প্রভাব পড়ে। দীর্ঘ দিন জল রাখার ফলে লোহার ক্ষয় হয়। তাতে জলধারণের ক্ষমতাও ক্রমশ কমে। দুর্ঘটনার পিছনে এগুলিও থাকতে পারে।’’

রেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য ট্যাঙ্ক ভাঙার কারণ নিয়ে এ দিনও কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁদের দাবি, তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লেই বিষয়টি বোঝা যাবে। দুর্ঘটনায় মৃত বর্ধমান শহরের মফিজা খাতুনের স্বামী আব্দুল মফিজ শেখ রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, রেলের গাফিলতিতে তাঁর স্ত্রী-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। মফিজার ছ’বছরের মেয়েও আহত হয়ে আইসিইউ-তে ভর্তি। রেল পুলিশের সুপার (হাওড়া) পঙ্কজ কুমার বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। ফরেন্সিক পর্যায়ে তদন্ত হবে।’’

এ দিন সন্ধ্যায় বর্ধমান মেডিক্যালে জখমদের দেখতে যান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। পরে তিনি জানান, জখম শিশুটির জন্য রাজভবন থেকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে সাহায্য করা হবে। রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখছেন। রাজভবনও নজর রাখছে।’’ রাজ্য সরকারের তরফে এ দিন মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে সাহায্য করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE