কলেজে ঢোকার পথে চলছে ব্যারিকেড বাঁধার কাজ। নিজস্ব চিত্র।
জেলার একমাত্র কলেজে ভোটের আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করল পুলিশ। আজ, বুধবার ও কাল জেলার ২৬টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাটোয়া কলেজ ছাড়া কোথাও বিরোধীরা সেভাবে মনোনয়ন তুলতে পারে নি, বা তুললেও জমা দিতে পারেনি। ফলে একমাত্র কাটোয়া কলেজেই ভোট হতে চলেছে আজ।
বাম আমল থেকেই কাটোয়া কলেজের ছাত্র সংসদ ছাত্র পরিষদের দখলে রয়েছে। সেই সময়ও একের পর এক কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হত এসএফআই। মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়া নিয়ে বিরোধীদের বাধা দেওয়ারও অভিযোগও ছিল। কাটোয়া কলেজে অবশ্য বরাবরই নির্বাচন হতো। ১৯৮৪ সাল থেকে কাটোয়া কলেজের ছাত্র সংসদ দখলে রেখেছে ছাত্র পরিষদ। গত বার কলেজ নির্বাচন চলাকালীন কাটোয়া শহরে জেলার মন্ত্রী উপস্থিত থাকলেও টিএমসিপি একটি আসনেও জিততে পারেনি।
এ বারও কাটোয়া কলেজে ছাত্র পরিষদ ছাড়া অন্য কোনও সংগঠন সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। ৪২টি আসনের মধ্যে টিএমসিপি ৩৩টি আসনে, এসএফআই ১৬টি, এবিভিপি ৯টি এবং ডিএসও একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ছাত্র পরিষদের দাবি, ৬টি আসনে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন। তবে এরপরেও কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা রয়েছে। সোমবার কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন এ নিয়ে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে। নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য কলেজ থেকে ২০০ মিটার এলাকা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হবে বলে জানায় মহকুমা প্রশাসন। এ ছাড়াও ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কলেজের ভিতর ৮টি ভিডিও ক্যামেরা থাকবে, প্রিসাইডিং অফিসার প্রয়োজন মতো ব্যবহার করবেন তা। কেডিআই মোড় থেকে কলেজ মোড়ের আগে পর্যন্ত রাস্তার দু’দিক ব্যারিকেডে ঘেরা থাকবে। সেখানে ছাত্র সংগঠনগুলির শিবির করতে পারবে, তবে কোনও শিবিরেই কুড়ি জনের বেশি থাকতে দেবে না পুলিশ। তাছাড়া প্রত্যেক ভোটারকে সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে কলেজে প্রবেশ করতে হবে। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া কলেজে ভোটার আনুমানিক ছ’হাজার।
তবে সর্বদলীয় বৈঠকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে টিএমসিপি। সংগঠনের বর্ধমান জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কলেজের টিচার-ইন চার্জ বা নির্বাচন কমিটি আমাদের কোনও দাবি মানেনি। নিরপেক্ষতা বজায় না রেখে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” কাটোয়া কলেজের টিচার ইন চার্জ অবশ্য বলেন, “ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীরাই সবচেয়ে ভাল বলতে পারবে আমি নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছি কি না!” ছাত্র পরিষদের কাটোয়ার নেতা শেখ সোলেমান বলেন, “জেলার মধ্য একমাত্র কাটোয়া কলেজেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। নির্বাচন শান্তিতে করার জন্য প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষের যে কোনও সিদ্ধান্তই স্বাগত।” এসএফআইয়ের বর্ধমান জেলার সম্পাদক দীপঙ্কর ঘটকেরও দাবি, “জেলার মাত্র একটি কলেজে নির্বাচন হচ্ছে। আমরা চাই সেই নির্বাচন নিরপেক্ষতার সঙ্গে সুষ্ঠু ভাবে করুক কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মহকুমা প্রশাসন।”
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেডিআই মোড়ের পর থেকে রাস্তায় যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ১৫০ জন পুলিশ কর্মী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোনয়নপত্র তোলার দিনের মতোই বুধবার কলেজ গেটে থাকবেন মহকুমাশাসক (কাটোয়া) মৃদুল হালদার। তিনি বলেন, “আমি ছাড়াও তিন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন। কলেজের ভিতরের মতো বহিরাগতদের রোখার জন্য গেটের বাইরেও ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থা থাকছে। এ ছাড়াও কলেজের বারান্দায় পুলিশ থাকবে। প্রয়োজনে প্রিসাইডিং অফিসার তাঁদের ডাকবেন।”
অন্য দিকে, কাটোয়া শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অমর রাম অভিযোগ করেছেন, “ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে, মঙ্গলবার থেকে নানা ভাবে প্ররোচনা সৃষ্টি করছে কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদ ।আমরা পুরো বিষয়টি কাটোয়া থানাকে জানিয়েছি।” যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্র পরিষদ ও কংগ্রেস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy