Advertisement
০৮ মে ২০২৪
আসন সংরক্ষণ হলেই কি নারীর ক্ষমতায়ন
Jemari Panchayat of Raniganj

স্ত্রী নামে প্রধান, ‘ক্ষমতা’ স্বামীর

আবার, জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ইন্দিরা বাদ্যকর। এলাকাবাসী জানান, সমিতির কার্যালয়ে সর্বদা তাঁর পাশেই বসে থাকতে দেখা যায় সঞ্জয়কে।

উপরে, জেমারি পঞ্চায়েতে। প্রধানের সামনে বসে কাজের তদারকি করেন স্বামী (নীল জামা)। নীচে, স্ত্রী পুরপ্রতিনিধি।

উপরে, জেমারি পঞ্চায়েতে। প্রধানের সামনে বসে কাজের তদারকি করেন স্বামী (নীল জামা)। নীচে, স্ত্রী পুরপ্রতিনিধি। কিন্তু কাজের তদারকি করতে দেখা যায় স্বামীকে (পাঞ্জাবি পরিহিত)। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। এমনই দাবি এলাকাবাসীর। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২৯
Share: Save:

আসানসোল পুরসভা হোক বা ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। বুধবার লোকসভায় ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হওয়ার পরে, বৃহস্পতিবার সকালে নানা জায়গায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, জেলায় একেবারে তৃণমূল স্তরে অনেক জায়গাতেই মহিলা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিজ্ঞতা, যাবতীয় কাজের জন্য কথা বলতে হয় ওই জনপ্রতিনিধিদের স্বামীর সঙ্গে! যদিও, তা মানছেন না তাঁরা। তবে, বিষয়টি সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহল থেকে উঠে আসছে নানা মত। প্রশ্ন উঠছে, সংরক্ষণ যদি হয়ও, তার পরেও, রাজনীতিতে নারী-ক্ষমতায়ন প্রকৃত অর্থে কতটা ঘটবে।

রানিগঞ্জের জেমারি পঞ্চায়েত। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতটির প্রধান রুমা মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে দেখা গেল, এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা অনিতা দাস। জানালেন, কয়েক মাস ধরে ছেলের জন্য ‘মানবিক ভাতা’ পাচ্ছেন না। সেটাই জানাতে এসেছিলেন রুমার স্বামী সঞ্জিতের কাছে! আবার, আধার কার্ডের সংশোধনের জন্য আসা রাহুল চৌবেও জানালেন, যাবতীয় কাজের জন্য সঞ্জিতকে বলতে হয়। কাজও হয় তাতে। যদিও, সঞ্জিত বলছেন, “স্ত্রীকে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ছাড়তে ও কাজ শেষ হয়ে গেলে নিতে আসি।” রুমাও দাবি করেছেন, “আমার পঞ্চায়েতের কাজে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। ফলে, নিজের কাজ নিজেই করতে পারি।”

এ দিকে, জামুড়িয়ায় পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে খোঁজখবর করে জানা গেল, সেখানেও একই ছবি। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ এলাকার কয়েক জন জানালেন, কোনও কাজের জন্য তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধি উষা পাসোয়ানের কাছে গেলে, প্রথমে যেতে হয় ওঁর স্বামী ভোলার কাছে। এমনকি, ভোলাকে ওয়ার্ডের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্মের তদারকি করতেও দেখা যায় বলে পর্যবেক্ষণ এলাকাবাসীর একাংশের। উষা যদিও বিষয়টি মানেননি। কিন্তু ভোলা বলছেন, “উষার মতো যাঁরা গৃহবধূ থেকে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তাঁদের বাইরে ঘোরাফেরার মতো কাজ করাটা অসুবিধার। তাই তাঁদের স্বামী বা পরিবারের সদস্যেরা সহযোগিতা করেন।” তাঁর সংযোজন: “এর ফলে মেয়েরা কাজ করছেন না বা তাঁদের কাজ পুরুষেরা করছেন, এটা প্রমাণিত হয় না।”

আবার, জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ইন্দিরা বাদ্যকর। এলাকাবাসী জানান, সমিতির কার্যালয়ে সর্বদা তাঁর পাশেই বসে থাকতে দেখা যায় সঞ্জয়কে। সভাপতির কাছে কাজে গেলেই, সঞ্জয়কেই সব কিছুর তদারকি করতে দেখা যায় বলে দাবি। যদিও, দু’জনেই তা মানেননি।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক পরিসরেও। বিজেপি মহিলা মোর্চার আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রেখা ভট্টাচার্য দাবি করছেন, “আসলে পুরষতান্ত্রিক মনোভাব বদলানো যায়নি। খবরদারিও তাই ঘটে। মেয়েদের আরও এগিয়ে আসা দরকার।” বাম প্রভাবিত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি কৃষ্ণা দাশগুপ্ত দাবি করেছেন, বামফ্রন্টের আমলে এমন ঘটনা ঘটতই না। এখন যদি ঘটে থাকে, বিষয়টিতে নজর রাখা হবে। যদিও, বিষয়টিতে আমল দিচ্ছেন না মহিলা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অসীমা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “এ রাজ্যে সব মহিলা জনপ্রতিনিধি নিজেরাই নিজেদের কাজ করেন। বিরোধীদের অপপ্রচারের কোনও অর্থ হয় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raiganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE