Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪
Kalna

বাবা-মা হারিয়ে নার্সদের কোলেই বেড়ে উঠছে কথা

কালনা মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৬ এপ্রিল বলাগড়ের বাসিন্দা অন্তরা বিশ্বাসকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।

কালনা হাসপাতালে নার্সদের কাছে শিশু।

কালনা হাসপাতালে নার্সদের কাছে শিশু। —নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৪ ০৮:৩৯
Share: Save:

কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার পরেই মৃত্যু হয়েছিল মায়ের। স্ত্রীর মৃত্যুশোক সামলাতে না পেরে আত্মঘাতী হন স্বামী। সদ্যোজাতের হেফাজত চেয়ে পরিবারের থেকে লিখিত কোনও দাবি না আসায় শিশুটি থেকে যায় হাসপাতালেই। এখন তার বয়স দেড় মাস। কালনা মহকুমা হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগের নার্স ও চিকিৎসাকর্মীদের স্নেহে বড় হচ্ছে সে। সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সরকারি কোনও হোমে রাখার আর্জি জানিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটিকে চিঠি পাঠিয়েছে।

কালনা মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৬ এপ্রিল বলাগড়ের বাসিন্দা অন্তরা বিশ্বাসকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পর দিন তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় অন্তরার। জন্মের পরে সদ্যোজাতের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে স্থানান্তর করা হয় এসএনসিইউ-তে। ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে ওঠে।নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা আদর করে তার নাম দেন কথা। এরই মধ্যে খবর আসে, আত্মঘাতী হয়েছেন শিশুটির বাবা।

হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগ সূত্রের খবর, কথাকে সময়ে খাবার ও ওষুধ খাওয়ানো, পোশাক পরানো, ঘুম পাড়ানো-সহ সব কাজ পালা করে করেন বিভাগের নার্সরা। ঘুম ভেঙে আচমকা কেঁদে উঠলে তাঁদেরই কেউ না কেউ কাজ ফেলে কথাকে কোলে তুলে নেন। ওই বিভাগের নার্স রমলা রক্ষিত জানিয়েছেন, নানা শারীরিক সমস্যা ছিল কথার। অ্যান্টিবায়োটিক ও অক্সিজেন দেওয়া হয় তাকে। বেশ কয়েক দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয় কথা।

রমলা বলেন, ‘‘ওর চোখ দু’টো মায়া জড়ানো। সব সময় যেন কিছু বলতে চায়। আমরা ওর নাম দিয়েছি কথা। সারা দিন পালা করে ওকে আগলে রাখি।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘হাসপাতাল তো ওর স্থায়ী ঠিকানা হতে পারে না। তাই ও যে দিন হাসপাতাল ছেড়ে যাবে, সে দিন আমদের খুব কষ্ট হবে। আমরা চাই নির্দিষ্ট একটি আশ্রয় পাক কথা। সেখানে লেখাপড়া শিখে বড় মানুষ হোক।’’ আর এক নার্সের কথায়, ‘‘কথা এখনও মায়ের অভাব টের পায়নি। বাপ-মা মরা মেয়েটা হাসপাতাল থেকে যাওয়ার সময়ে সকলকে কাঁদাবে।’’

হাসপাতালের সুপার চন্দ্রশেখর মাইতি বলেন, ‘‘শিশুটির মা নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।অন্য একটি হাসপাতাল থেকে এখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল তাঁকে। প্রসবের ঘণ্টা দু’য়েক পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। শিশুটির অবস্থাও ভাল ছিল না। তবে এসএনসিইউ বিভাগে চিকিৎসায় সারা দেয় সে। এখন ও সম্পূর্ণ সুস্থ।’’ তিনি জানান, শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে সরকারি কোনও হোমে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে জেলা শিশুসুরক্ষা কমিটিকে। নিয়ম অনুযায়ী এই ধরনের শিশুদের দত্তক নিতে গেলে সরকারি পোর্টালে আবেদন জানাতে হয়। হাসপাতালের সহকারী সুপার সামিম শেখ বলেন, ‘‘কথাকে মাতৃস্নেহে সুস্থ করেছেন এসএনসিইউ-এর নার্সরা। শিশুটির যাবতীয় খরচ বহন করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalna Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE