২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর বর্ধমান পুরসভার ১৬ তম পুরপ্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন প্রবীণ শিশু চিকিৎসক স্বরূপ দত্ত। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল তাঁকে প্রার্থী করেছিল। দেওয়ালে তাঁর নামও লেখা হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রচন্ড ক্ষোভ-বিক্ষোভে তিনি নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দল বর্তমান বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে। এর দু’বছরের মধ্যে পুরভোট ঘোষিত হয়। তৃণমূল ৩৫টা আসনেই জিতে যায়। কে পুরপ্রধান হবে, তা নিয়ে দলের ভিতরেই বিতর্ক দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত শপথের দিন কলকাতা থেকে মুখবন্ধ খামে পুরপ্রধান হিসেবে স্বরূপ দত্তের নাম জানানো হয়। ঘোষণা হতেই রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। পুলিশকে লাঠি পর্যন্ত চালাতে হয়। এমনকি খোসবাগানে পুরপ্রধানের বাড়ি সামনে পুলিশ পিকেট বসাতে হয়।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সেই আঁচ পাঁচ বছর ধরে জ্বলেছে। কখনও ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ড, কখনও উন্নয়নের প্রশ্নে দলের কাউন্সিলরদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন পুরপ্রধান। তাঁর অপসারণের দাবিতে কালীঘাট পর্যন্ত ছুটেছেন কাউন্সিলরদের একাংশ। বিধায়কের সঙ্গে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, আলোর দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলরের সঙ্গেও মতপার্থক্য হয়েছে পুরপ্রধানের। পরিস্থিতি সামলাতে দলের তরফে ‘বিক্ষুব্ধ’ চেয়ারম্যান-ইন কাউন্সিলরদের পদ রদবদল করা হয়, কিন্তু বদলাননি পুরপ্রধান। এ দিন প্রশাসকের হাতে নথিপত্র তুলে দেওয়ার পরে স্বরূপবাবু বলেন, “চেয়ারে বসার পর থেকে কম যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়নি। কিন্তু কেউ কিছু করতে পারেননি। দলের নির্দেশ মত মানুষের কাজ করে গিয়েছি। শুধু পরিষেবা নয়, পুরসভার আয়ও বাড়িয়েছি। সমস্ত রকমের কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করেছি।’’ পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ৫ বছর আগে পুরসভার নিজস্ব তহবিল ছিল ৯ কোটি টাকা। আর এখন পুরসভার তহবিলে রয়েছে ১৫ কোটি।
অনুষ্ঠানে হাজির বিদায়ী চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল খোকন দাস বলেন, “এই বোর্ড সম্পত্তি করের আয় প্রায় তিন গুন বাড়িয়েছে। শহর জুড়ে ম্যাস্টিক রাস্তা, রাস্তা থেকে বাজার তুলে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে।’’
কিন্তু ভবী ভোলার নয়। এ দিনও ভবনের নকশার অনুমোদন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান। পুরপ্রধানের দাবি, কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এক দিনে ৭২টি ভবনের নকশার অনুমোদন দিয়েছেন উপপুরপ্রধান। তিনি বলেন, ‘‘৬৯টি নকশা আটকাতে পেরেছি। বাকি তিনটিও ফিরিয়ে আনা হবে। প্রশাসককে বলা হয়েছে।’’ আর উপপুরপ্রধান খোন্দেকার মহম্মদ শাহিদুল্লাহ বলেন, “নিয়ম মেনে কাজ করেছি। প্রশাসক তদন্ত করে দেখুক।’’