Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

জ্বর থেকে দুর্ঘটনা, ভরসা সেই কাটোয়া

খেলতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে পা ভেঙে গিয়েছিল বছর পাঁচেকের তানিয়ার। ব্যথায় কেঁদে অস্থির ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটে বেরিয়েছিলেন দাঁইহাটের পাতাইচণ্ডীতলার বাসিন্দা তপন পান।

বন্ধ পড়ে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র।

বন্ধ পড়ে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র।

সুচন্দ্রা দে
দাঁইহাট শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০১:০৩
Share: Save:

খেলতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে পা ভেঙে গিয়েছিল বছর পাঁচেকের তানিয়ার। ব্যথায় কেঁদে অস্থির ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটে বেরিয়েছিলেন দাঁইহাটের পাতাইচণ্ডীতলার বাসিন্দা তপন পান। কিন্তু একটাও চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা পাননি তিনি। এমনকী, ওষুধের দোকানের ঝাঁপও বন্ধ ছিল। নিরুপায় তপনবাবু টোটো ভাড়া করে মেয়েকে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। শুরু হয় চিকিৎসা। শুধু তপনবাবু নন, রাতবিরেতে জ্বরজারি থেকে দুর্ঘটনা, যে কোনও কিছুতেই দাঁইহাটবাসীর ভরসা কাটোয়া হাসপাতাল।

শহরের ১৪টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের বকুলতলায় পুর-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও চিকিৎসকের দেখা মেলে না। বৃহস্পতিবার ঘণ্টা দুয়েকের জন্য দেখা মেলে এক ডাক্তারের। বারবার হাসপাতালের দাবি জানানো হলেও লাভ হয়নি বলে বাসিন্দাদের দাবি। দাঁইহাট লাগোয়া কাটোয়া ২ পঞ্চায়েতের নোয়াপাড়াতেও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। অভিযোগ, চিকিৎসকের দেখা মিললেও সন্তান প্রসবের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় জরুরি অবস্থায় প্রসূতীদের হাসপাতালে ছুটতে হয়। এ ছাড়া পথে-ঘাটে দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাথমিক চিকিৎসাও সেখানে মেলে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সমাজবাড়ি, ডাকাতেকালীতলা, বাগটিকরার প্রসূন দে, সমর মণ্ডল, ধ্রুবপ্রসাদ গড়াইদের দাবি, রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য গুটিকয়েক বাস ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। টোটো বা ভাড়ার গাড়িও পাওয়া যায় না অনেক সময়। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো এলাকায় ১৪-১৫টি ওষুধের দোকান থাকলেও দুপুরে ও রাত ৯টা বাজলেই সবক’টি দোকান বন্ধ হয়ে যায় বলে তাঁদের অভিযোগ। এ ছাড়াও এক একটি দোকান সপ্তাহের আলাদা আলাদা দিনে বন্ধ থাকে। ফলে প্রয়োজনে বাড়ির কাছে ওষুধ না পেয়ে দূরে ছুটতে হয় অনেককেই।

দাঁইহাট বালিকা বিদ্যালয় লাগোয়া এলাকায় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমও রয়েছে। কিন্তু সেখানেও অধিকাংশ সময় চিকিৎসক থাকেন না বলে শহরবাসীদের অভিযোগ। তাঁরা জানান, এক জন ডাক্তার শুধু আউটডোরে রোগী দেখেন। দুরারোগ্য ব্যধির চিকৎসা তো দূর, কোনও অস্ত্রোপচারই হয় না। ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও সেগুলোও ওষুধের দোকানের মতো অধিকংশ দিন বন্ধ থাকে বলেও রোগীদের দাবি। বাগটিকরার বাসিন্দা সোমা দাস জানান, হাসপাতাল তৈরি তো দূর, ওষুধের দোকান খোলার ব্যাপারেও পুরসভায় অনেকবার জানানো হয়েছে। বেশ কয়েকবার ওষুধ বিক্রেতাদের নিয়ে বৈঠকও হয়। কিন্তু কাজ হয়নি।

কাটোয়া কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শমীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ওষুধের দোকানগুলো যাতে সকাল থেকে অন্তত রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে ও পালা করে প্রতিদিন একটি করে দোকান যাতে রাতে খোলা থাকে এ বিষয়ে নোটিস পাঠানো হবে। নির্দেশ না মানলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলেও তাঁর দাবি। আর পুরপ্রধান বিদ্যুৎ ভক্ত জানান, আলোচনা করে স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Katwa Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE