Advertisement
০২ মে ২০২৪

চেক বিলিতে দুর্নীতি, বদলি কৃষি সহায়ক

আগে চেক বিলি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছিলেন চাষিরা। এ বার অতিবৃষ্টির সরকারি ক্ষতিপূরণ বিলিতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের নামে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে জেলা কৃষি আধিকারিককে চিঠি লিখলেন কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।

অভিযোগের চিঠি।—নিজস্ব চিত্র।

অভিযোগের চিঠি।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০১:৩৭
Share: Save:

আগে চেক বিলি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছিলেন চাষিরা। এ বার অতিবৃষ্টির সরকারি ক্ষতিপূরণ বিলিতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের নামে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে জেলা কৃষি আধিকারিককে চিঠি লিখলেন কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।

যদিও তৃণমূলের একাংশের দাবি, এমনিতেই পঞ্চায়েতে ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর বিরোধীরা ক্ষতিপূরণের ফর্ম পায়নি। যদিও বা পঞ্চায়েত সমিতির তরফে ফর্ম দেওয়া হয়েছিল, ওই কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক টোকেন ছাড়া চেক বিলি করে দেওয়ায় হিসেবে গোলমাল হয়ে যায়। তাতেই ক্ষুব্ধ হন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। এরপরেই কালনা ১ ব্লক কৃষি দফতরের কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পরিমল দাসের নামে অভিযোগ করে চিঠি পাঠান তিনি।

আবার চিঠি যাওয়ার পরেই জেলা কৃষি দফতর মঙ্গলবার বিকেলে পরিমলবাবুকে আউশগ্রাম ১ ব্লকে বদলির চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন জায়গায় কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে তাঁকে। যদিও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির লিখিত অভিযোগের কথা স্বীকার করেননি জেলা কৃষি আধিকারিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘নিয়ম না মেনে ক্ষতিপূরণের চেক বিলি হচ্ছে এ সংক্রান্ত কোনও চিঠি আমি পাইনি।’’ তাহলে বদলির কারণ? আধিকারিকের দাবি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। তার জেরেই বদলি। কারণ পঞ্চায়েতকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হয় কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের।

২৯ ফেব্রুয়ারি কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবণী পাল জেলা কৃষি আধিকারিককে চিঠি লিখে জানান, কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পরিমল দাসকে চেক বিলি নিয়ে কিছু অভিযোগের কথা জানাতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু উনি অনীহা দেখান। বাধ্য হয়ে আধিকারিকেই চিঠি লেখেন তিনি। শ্রাবণীদেবীর দাবি, চেক দেওয়ার আগে কুপন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ওই কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক নির্দিষ্ট কুপন ছাড়াই চেক বিলি করেছেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে উনি কোনও প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বাজে ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ। সভাপতির সঙ্গে অভিযোগের চিঠিতে স্বাক্ষর করেন সহ সভাপতি উদয় শঙ্কর ঘোষ, শ্যামলকুমার দাঁ, সোমা বর্মণ, সাদেক শেখ -সহ সাত কর্মাধ্যক্ষ। অভিযোগের চিঠি প্রথম যায় কালনা ১-এর বিডিও অসীমকুমার নিয়োগীর কাছে। তিনি তা পাঠান জেলা কৃষি আধিকারিককে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, চাষিদের মধ্যে ফর্ম বিলি করার কাজ মূলত পঞ্চায়েত করে। পরে তা জমে পড়ে কৃষি দফতরে। ফর্মের টোকেন অংশটি চাষিদের ফেরত দিয়ে ফর্মটি জমা নিয়ে নেওয়া হয়। পরে শিবির করে চেক বিলির সময় ওই টোকেন দেখেই চেক দেওয়া হয়। তবে শুধু পঞ্চায়েত নয়, কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতিও বেশ কিছু ফর্ম তুলে নেয়। অভিযোগ, ওই সমস্ত ফর্ম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তো বটেই বহু সদস্যও ঘনিষ্ঠ চাষিদের বিলি করেন। ২৯শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবণীদেবী জানতে পারেন কালনা ১ ব্লকের কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পরিমলবাবু নান্দাই পঞ্চায়েতর বেশ কিছু চাষিকে মাস্টার রোলে স্বাক্ষর করিয়ে টোকেন ছাড়াই চেক দিয়ে দিয়েছেন। এতেই ক্ষুব্ধ হন তিনি। জানা যায়, প্রথমে ফোনে পরে সামনাসামনি পরিমলবাবুর সঙ্গে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় তাঁর। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কৃষি আধিকারিকের কাছে পরিমলবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হবে।

সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের চেক বিলির যাবতীয় দায়িত্ব কৃষি দফতরের। যদিও পরে জেলা পরিষদ একটি রেজ্যুলিউশন করে পঞ্চায়েতকেও এ কাজে জুড়ে দেয়। প্রশ্ন উঠেছে, পঞ্চায়েত ফর্ম বিলি করা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত সমিতির আলাদা করে ফর্ম নিয়ে বিলি করার প্রয়োজন কী ছিল। উত্তরে তৃণমূল থেকে নির্বাচিত কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্য বলেন, ‘‘আমাদের দলে সব জায়গাতেই কমবেশি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। পঞ্চায়েতে ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী স্বাভাবিক ভাবেই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কর্মী সমর্থকদের ফর্ম দেবে না। আমাদের মাধ্যমে তাঁরাই ফর্ম পেয়েছেন।’’ যদিও জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার অজানা।’’ আর পঞ্চায়েত সমিতি ফর্ম বিলি করতে পারে কি না সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘কাজের সুবিধার জন্য পঞ্চায়েতকে ক্ষতিপূরণ বিলির কাজে যুক্ত করা হয়েছে। কোনও পঞ্চায়েত সমিতি এ কাজ করেছে কি না জানা নেই। অভিযোগ এলে খোঁজ নেব।’’

এ দিকে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পরিমলবাবুর বদলির নির্দেশ রদ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূলের অনেকেই। সভাপতির চিঠিতে স্বাক্ষর করলেও মঙ্গলবার তাঁকে ভাল ছেলের সার্টিফিকেট দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘উনি অত্যন্ত ভাল ছেলে। কোনও দুর্নীতিতে জড়িত নন। কিন্তু সভাপতিকে জিজ্ঞেস না করে ভোটার কার্ড দেখে চাষিদের চেক দিয়ে দেওয়া নিয়ে মতপার্থক্য হয়। তার জেরেই অভিযোগ জানান সভাধিপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE