Advertisement
১৫ জুন ২০২৪

পরপর বুথ দখল, খবরে হতাশ নেতারা

খবর আসা শুরু হয়েছিল সকাল থেকেই। খুচরো ঝামেলা-গণ্ডগোল বাধছিল ভোট শুরুর পরেই। আসানসোলে দলের প্রধান অফিসে বসে তা প্রতিহত করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছিলেন সিপিএম নেতারা।

নিশ্চিন্তায় আক্রান্ত।

নিশ্চিন্তায় আক্রান্ত।

সুব্রত সীট
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৪৫
Share: Save:

খবর আসা শুরু হয়েছিল সকাল থেকেই। খুচরো ঝামেলা-গণ্ডগোল বাধছিল ভোট শুরুর পরেই। আসানসোলে দলের প্রধান অফিসে বসে তা প্রতিহত করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছিলেন সিপিএম নেতারা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ফোন আসা বাড়তে থাকল লাফিয়ে লাফিয়ে। দলের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, দখল হয়ে যাচ্ছে বুথের পর বুথ— পরপর এমন সব খবরে সকালের তরতাজা মুখে তখন ক্লান্তির ছাপ। সকালে কর্মীদের উৎসাহ দিচ্ছিলেন যাঁরা, দিনের শেষে সেই নেতাদের গলাতেই হতাশার সুর, ‘‘আর কিছু করা যাবে না!’’

আপকার গার্ডেন এলাকায় সিপিএমের ওই অফিসে সকালেই পৌঁছে গিয়েছিলেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়, রাজ্য কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী-সহ কয়েক জন নেতা-কর্মী। সকাল ১০টা নাগাদ এল বড় গণ্ডগোলের খবর। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মানিক রুইদাস আক্রান্ত হয়েছেন শুনে নেতারা পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে ছুটলেন নিশ্চিন্তা গ্রাম প্রাথমিক স্কুলে। হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দলের অফিসে ফেরেন পার্থবাবুরা। আভাসবাবুর দাবি, ‘‘এই ওয়ার্ডে আমাদের জেতা নিশ্চিত ছিল। তাই এমন করল ওরা।’’

সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ পার্টি অফিসে আসেন শহরের প্রাক্তন মেয়র তাপস রায়। জানান, বিসি কলেজের বুথে ভোট দিয়ে এলেন। তিনি বলেন, ‘‘সকালেই ওখানে গণ্ডগোল হয়েছিল। তবে আমি যখন ভোট দিতে গিয়েছি তখন কোনও অসুবিধা হয়নি।’’ তিনি এ কথা বলার সময়েই খবর আসে, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বহু বুথে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন দলের কর্মীরা। পার্থবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের মারধর বা বুথ দখলের ক্ষমতা এ বার তৃণমূলের ছিল না। প্রতিরোধের ব্যবস্থা আমাদের ছিল। কিন্তু পুলিশ ওদের পক্ষ নিল। পুলিশের হাতেই আমাদের বহু কর্মী-সমর্থক মার খেয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে আমাদের লোকদের।’’

বাঁ দিকে, রানিগঞ্জে ভাঙচুর সিপিএমের ক্যাম্প অফিস। ডান দিকে, আসানসোলে তৃণমূলের মোটরবাইক-বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।

পরের এক ঘণ্টায় ঘনঘন বেজে চলে পার্থবাবুর দু’টি ফোন। ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রীপল্লি এলাকায় দলের মহিলা কর্মীরা প্রতিরোধ গড়েছেন শুনে যেমন মুখের হাসি চওড়া হয়েছে, তেমনই গোলমাল পাকানোর অভিযোগে ৮১ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী ও এজেন্টকে পুলিশ আটক করেছে শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেতারা। দলীয় কর্মীদ‌ের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘‘কোনও ভাবে এলাকা ছাড়বি না। রক্ত ঝরলে ঝরুক।’’ ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সোনালিকা পালকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এজেন্ট তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর কৃষ্ণেন্দু ঘোষকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে শুনে এক সিপিএম কর্মীর কটাক্ষ, ‘‘ওখানে তৃণমূল প্রার্থী মন্ত্রীর আত্মীয়। পুলিশকে তো তাই এটা করতেই হবে!’’ ধ্রুবডাঙায় বহিরাগতেরা ভিড় বাড়াচ্ছে শুনে এক কর্মী পর্যবেক্ষককে ফোন করে বাহিনী পাঠানোর আর্জি জানান। ফোন ছেড়ে ওই কর্মী বলেন, ‘‘পর্যবেক্ষক বললেন, তিনি সিসিটিভি-তে দেখছেন, ওখানে সব শান্তিপূর্ণ।’’ খানিক পরে খবর আসে, ওই বুথে গোলমাল চলছে। পর্যবেক্ষককে ফোন করেন পার্থবাবু। ফোন ছেড়ে তাঁর খেদোক্তি, ‘‘এখন আর ‘দেখছি’ বলে কী হবে!’’

দুপুর ১টার পরে খবর আসে, মলয় ঘটক ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মী বৈজু ঠাকুর আক্রান্ত হয়েছেন। পার্থবাবু কর্মীদের ফোনে বলেন, ‘‘তৃণমূলের অর্ন্তদ্বন্দ্ব মনে হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ আমাদের লোকদেরই ধরবে। তোরা সাবধানে থাকবি।’’ বুথ দখল, ছাপ্পা ভোটের খবর আসতে থাকে একের পর এক। বিকেল ৩টে নাগাদ কোনও আধিকারিককে ফোন করে পার্থবাবু হতাশ গলায় বলেন, ‘‘আপনারা যদি না দেখেন তা হলে আর কিছু করা যাবে না।’’ ফোন ছেড়ে বলেন, ‘‘শেষ দু’ঘণ্টায় সব শেষ করে দেবে!’’

বিকেলে পার্থবাবু ও আভাসবাবু দলের কর্মীদের ফোনে সতর্ক করেন, ইভিএমে ‘ক্লোজড’ বোতাম টেপা নিশ্চিত করেই যেন বুথ ছাড়া হয়। ভোটের পর কোনও রকম গোলমালে না জড়ানোর পরামর্শও দিলেন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘পুনর্নির্বাচন মানেই আবার সন্ত্রাস। তবু সারা দিন যা হল তার পরে সেই আবেদন তো জানাতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asansol municipal election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE