Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Future of MAMC

এমএএমসি-র ভবিষ্যৎ কী, চাপানউতোর নির্বাচনের মুখে

কারখানার নতুন নাম হয় ‘এমএএমসি ইন্ডাস্ট্রিজ় লিমিটেড’ (এমএএমসিআইএল)। ঠিক হয়, উৎপাদনের দায়িত্বে থাকবে বিইএমএল।

বন্ধ এমএএমসি কারখানা।

বন্ধ এমএএমসি কারখানা। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩৩
Share: Save:

২০২০-র ডিসেম্বরে শেষবার কনসোর্টিয়ামের তিন শরিক বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ‘মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশন’ (এমএএমসি) পরিদর্শনে এসেছিল। তার পর থেকে কারখানা খোলার বিষয়ে আর কোনও নড়াচড়া দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, এই অভিযোগ করেছেন দুর্গাপুরবাসী। লোকসভা নির্বাচনের মুখে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।

জানা গিয়েছে, খনির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি উৎপাদনের জন্য ১৯৬৫-তে দুর্গাপুরে এমএএমসি কারখানা চালু হয়। কারখানাটি ‘রুগ্‌ণ’ হয়ে গেলে ১৯৯২-তে তা ‘বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন’ (বিআইএফআর) অধীনে চলে যায়। ২০০২-এর ৩ জানুয়ারি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ফের কারখানা চালু করার জন্য ২০০৭-এর ১ জুন তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ বিইএমএল, সিআইএল ও ডিভিসি যথাক্রমে ৪৮, ২৬ ও ২৬ শতাংশ হারে অংশীদারিত্বে কনসোর্টিয়াম গড়ার জন্য ‘মৌ’ স্বাক্ষর করে। ২০১০-এর ১১ জুন কলকাতা হাই কোর্টে নিলামে সর্বোচ্চ একশো কোটি টাকা দর দিয়ে এমএএমসি-র দায়িত্ব পায় কনসোর্টিয়াম।

কারখানার নতুন নাম হয় ‘এমএএমসি ইন্ডাস্ট্রিজ় লিমিটেড’ (এমএএমসিআইএল)। ঠিক হয়, উৎপাদনের দায়িত্বে থাকবে বিইএমএল। উৎপাদিত খনির যন্ত্রাংশ কিনবে সিআইএল। সিআইএলের কাছ থেকে কয়লা তুলবে ডিভিসি। তিন সংস্থা মিলে কারখানা চালু করার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কনসোর্টিয়াম কারখানার দায়িত্ব পাওয়ার পরে কেটে গিয়েছে দুই দশকেরও বেশি সময়। কিন্তু কারখানা চালুর কোনও উদ্যোগ এখনও নজরে আসেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নানা কারণে কনসোর্টিয়ামের তিন সংস্থার মধ্যে ‘শেয়ার হোল্ডিং এগ্রিমেন্ট’ চূড়ান্ত হয়নি। এমনকি, ২০১৯-এর ২ অগস্ট বোর্ড মিটিংয়ে বিইএমএল তাদের শেয়ারের অংশ ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানিয়ে দেয়। বিধানসভা নির্বাচনের চার মাস আগে কনসোর্টিয়ামের পরিদর্শন নিয়ে রাজনৈতিক তরজায় জড়িয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলি। তার পরেই ২০২১-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিইএমএল বাকি দুই সংস্থাকে জানায়, এমএএমসি কারখানায় তারা ‘লং ওয়াল মাইনিং’, ‘কন্টিনিউয়াস মাইনস’, ‘সারফেস মাইনস’ যন্ত্রপাতি তৈরি করার কথা চিন্তাভাবনা করছে। ওই বছর ১৯ মে কনসোর্টিয়ামের অন্তর্বতী বোর্ড বৈঠকে ঠিক হয়, এমএএমসি কারখানায় উৎপাদন চালুর সম্ভাবনা ও বাস্তবতার দিকটি দেখার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, কেন্দ্র বিইএমএলের বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে নতুন করে সংশয় তৈরি হয়েছে বলে দাবি দুর্গাপুরবাসীর।

সিটু নেতা বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তীর দাবি, কারখানা খোলার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছিল রাজ্যের তৎকালীন বাম সরকার। কিন্তু পালাবদলের পরে বর্তমান রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়নি। তিনি বলেন, “আর কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ কারখানা খোলা তো দূরের কথা, চালু সংস্থাই বিলগ্নিকরণের নীতি নিয়েছে। সব মিলিয়ে এমএএমসি খোলার প্রক্রিয়া কার্যত অথৈ জলে। এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারই সমান দায়ী।” কারখানার আইএনটিইউসি ‘হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক অসীম চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, তিনি কারখানা খোলার দাবি জানিয়ে বার বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। অভিযোগ মানতে চাননি বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক, দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। তিনি বলেন, “বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা খুলতে গেলে রাজ্যেরও সহযোগিতা দরকার। কিন্তু এই রাজ্যে শিল্প নিয়ে সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই।” যদিও তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু বার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন। আমাদের দল আন্দোলন করেছে। কিন্তু কেন্দ্র নির্বিকার। তাই রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে যাঁরা পার পাওয়ার কথা ভাবছেন, লোকসভা ভোটে মানুষ তাঁদের জবাব দেবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE