Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলে ফেরত আর এক বহিষ্কৃত

জামুড়িয়ার অলোক দাস ও চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে এ বার দুর্গাপুরের খোকন রুইদাস। ভোটের মুখে ফের দলে ফেরানো হল বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতাকে। নেতাদের দুষ্কর্মের জেরে চাপে পড়ে শাস্তি ঘোষণা যে পুরোপুরি শাসক দলের লোক দেখানো, তা এই ঘটনায় ফের সামনে এল বলে দাবি করেছে বিরোধীরা।

খোকন দাস। নিজস্ব চিত্র।

খোকন দাস। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৬
Share: Save:

জামুড়িয়ার অলোক দাস ও চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে এ বার দুর্গাপুরের খোকন রুইদাস। ভোটের মুখে ফের দলে ফেরানো হল বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতাকে। নেতাদের দুষ্কর্মের জেরে চাপে পড়ে শাস্তি ঘোষণা যে পুরোপুরি শাসক দলের লোক দেখানো, তা এই ঘটনায় ফের সামনে এল বলে দাবি করেছে বিরোধীরা।

আড়াই বছর আগে জামুড়িয়ায় অলোক-চঞ্চলের বিরুদ্ধে শ্যাম গোষ্ঠীর কারখানায় দৌরাত্ম্যের অভিযোগ ওঠায় বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। তবে তার পরেও এলাকার একটি স্কুলে ঢুকে মিড-ডে মিলের কাজে তাঁর পছন্দের লোককে কাজে নেওয়ার দাবিতে অলোকবাবু হাঙ্গামা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু বিধানসভা ভোট ঘোষণার পরপরই ১০ মার্চ এক কর্মিসভায় দু’জনকেই দলে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তৃণমূল নেতা মলয় ঘটক। তাঁর ব্যাখ্যা, দলবিরোধী কাজের জন্য ওই দু’জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তবে লোকসভা ও পুরভোটে দলের হয়ে ভাল কাজ করায় এবং এর মধ্যে দলবিরোধী কোনও কাজ না করায় তাঁদের ফেরানো হয়েছে। সে ভাবে সম্প্রতি ফিরিয়ে নেওয়া হল দুর্গাপুরের বহিস্কৃত তৃণমূল নেতা খোকনবাবুকেও।

২০১৪ সালের জুলাইয়ে তৃণমূল নেতা খোকনবাবুর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট গড়ে সগড়ভাঙার ক্ষুদ্র-মাঝারি কল-কারখানায় উপদ্রবের অভিযোগ করেছিলেন দলেরই বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। উচ্চ নেতৃত্বের কাছে চিঠি পাঠিয়ে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, শুধু সিন্ডিকেট নয়, খোকনবাবুর ‘তোলাবাজি’র জেরে ওই কারখানা মালিকেরা এবং মুচিপাড়া এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী জেরবার। কিন্তু তাঁরা লিখিত অভিযোগ জানাতে ভয় পাচ্ছেন। শহরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন তৃণমূল সভাপতি খোকনবাবু অবশ্য অভিযোগ মানেননি।

ওই ঘটনার পরপরই খোকনবাবুর বিরুদ্ধে লগ্নি সংস্থার নাম করে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। দুর্গাপুর আদালতে এক মহিলা অভিযোগ করেন, খোকনবাবু তাঁকে একটি লগ্নি সংস্থায় ৩ লক্ষ টাকা রাখতে বাধ্য করেছিলেন। কয়েক মাস সুদও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরে টাকা ফেরতের দাবি জানালে তাঁকে যে চেক দেওয়া হয়, সেটি বাউন্স করে। পুলিশ অভিযোগ নেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করায় তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন বলে দাবি করেছিলেন। আদালতের নির্দেশে পুলিশ খোকনবাবুকে গ্রেফতার করে। বেশ কিছুদিন জেলে থাকার পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। তার পরেই আবার তাঁর বিরুদ্ধে মুচিপাড়া এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ মদ-জুয়ার ঠেক চালানো, শিল্পপতিদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। শেষ পর্যন্ত সেই বছর অক্টোবরে খোকনবাবুকে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও তার পরেও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা-সহ দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যেত।

তৃণমূল নেতাদের দাবি, বহিষ্কারের পর থেকে খোকনবাবুর আচার-আচরণের উপরে নজর রাখা হয়েছিল। তিনি নিজেকে শুধরে নিয়েছেন বলে মনে করছে দল। দুর্গাপুর ৩ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায় জানান, খোকনবাবু দলে ফেরার জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন। দলের নিয়ম মেনে চলতে চান বলে আর্জি জানিয়েছিলেন। এলাকার তৃণমূল কর্মীরাও তাতে সায় দেন। সুনীলবাবু বলেন, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখে খোকনকে দলে ফেরানো হয়েছে।’’

বিরোধীদের অবশ্য দাবি, ভোটের সময়ে যাতে এলাকার মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রাখা যায়, সে কথা মাথায় রেখেই এ ভাবে বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে নেওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে তৃণমূলে। ভাঙড়ে আরাবুল ইসলাম থেকে জামুড়িয়ায় অলোক দাস, ভোটে তাঁদের লোকবল কাজে লাগাতেই এই পদক্ষেপ বলে দাবি করেন সিপিএম নেতারা। দলের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, ‘‘যত ভোট এগিয়ে আসছে, তৃণমূলের তত সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতীদের উপরে নির্ভরতা বাড়ছে। এই সব ঘটনাই তার প্রমাণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

deported leader TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE