E-Paper

নবরাত্রিতে আর ঘরে ফিরবেন না বর্ধমানের ‘ছোট রাজকুমার’

রাজ পরিবারের ইতিহাসের খোঁজ রাখেন এমন লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৪০ সালের ১৭ এপ্রিল বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন প্রণয়চাঁদ (পরিজনদের কাছে ‘ড্যানি’ নামে পরিচিত) ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩০
বর্ধমানের ছোট রাজকুমার প্রণয়চাঁদ।

বর্ধমানের ছোট রাজকুমার প্রণয়চাঁদ। —নিজস্ব চিত্র।

প্রয়াত হলেন বর্ধমানের ‘ছোট রাজকুমার’ প্রণয়চাঁদ মহাতাব (৮৪)। কলকাতার আলিপুরের ডায়মণ্ড হারবার রোডের বিজয় মঞ্জিলে সোমবার সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য হয়। বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির, বার অ্যাসোসিয়েশন-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শোকসভা হয় এ দিন।

রাজ পরিবারের ইতিহাসের খোঁজ রাখেন এমন লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৪০ সালের ১৭ এপ্রিল বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন প্রণয়চাঁদ (পরিজনদের কাছে ‘ড্যানি’ নামে পরিচিত) । জমিদারি প্রথা বিলোপ হয়ে যাওয়ার পরে প্রণয়চাঁদের বাবা উদয়চাঁদ তিন সন্তান নিয়ে বর্ধমান ছাড়েন। সেই সময় দার্জিলিংয়ের দুন স্কুলে পড়াশোনা করতেন ছোট রাজকুমার। পরে ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিসে ডক্টরেট করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বিয়ে করেন নন্দিনী মহতাবকে। তাঁদের একমাত্র ছেলে অজয়চাঁদ একটি বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিক হয়ে আমেরিকায় রয়েছেন। বর্ধমানের মহাতাব ট্রাস্টের সুপারিন্টেনডেন্ট বিপ্রদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ পরিবারের সঙ্গে ১৯০৪ সাল থেকে আমরা যুক্ত। ছোট রাজকুমারের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ১৯৭৮ সাল থেকে। উনি অক্সফোর্ডে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ইতিহাস পড়িয়েছেন। বছরে ছ’বার বর্ধমানে আসতেন। তবে শেষ কয়েক বছর চিকিৎসকের পরামর্শে বাইরে বার হতেন না।”

জানা গিয়েছে, শিবরাত্রির পর থেকে কালীপুজো পর্যন্ত দার্জিলিংয়ের বাড়িতেই থাকতেন প্রণয়চাঁদ। কালীপুজোর পরে কলকাতার আলিপুর বাড়িতে আসতেন। বর্ধমানের সোনার কালী, বিজয় বিহার, লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ মন্দির, রাধা বল্লভ মন্দির ছাড়াও জামালপুর, কালনা, পূর্ব মেদিনীপুরে বেশ কিছু মন্দির মহাতাব ট্রাস্ট দেখাশোনা করে। পূজারী উত্তমকুমার মিশ্র বলেন, “নবরাত্রির সময় ছোট রাজকুমার ও রানিমা ন’দিন বর্ধমানে লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরের দোতলায় থাকতেন। রানিমা মঙ্গলবারই আমাকে জানিয়েছেন, বর্ধমানের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের যোগ কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না।”

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক শ্যামসুন্দর বেরার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ‘প্রিন্স ড্যানি’র। তাঁর কথায়, “রাজকীয় আভিজাত্যের সঙ্গে মিশেছিল শিক্ষা। ভদ্রতা, শিষ্টতা, শিক্ষা কাকে বলে আলিপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখেছিলাম।” তাঁর দাবি, “বর্ধমানের মহিলা কলেজের ৫০ বছর পূর্তিতে প্রণয়চাঁদ একটা বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেই বার্তায় লেখে ছিল, ‘আমি এখানেই খেলা করতাম। এখন বড় হয়েছি। পরে দেখলাম, ভাঙাচোরা বাড়িটা কলেজে পরিণত হয়েছে’। উনি যে খুব আনন্দিত হয়েছিলেন সেই বার্তায় তা প্রকাশ পেয়েছিল।” প্রত্নতত্ত্ববিদ রঙ্গনকান্তি জানার সঙ্গেও যোগাযোগ ছিলে বর্ধমানের ‘ছোট রাজকুমারের’। রঙ্গনকান্তি বলেন, “বর্ধমানের আঞ্চলিক ইতিহাস সর্ম্পকে উনি খুব উৎসাহী ছিলেন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-সহ অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন উনি।” এ দিন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস-সহ অনেকেই কলকাতায় যান তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy